বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষা নিতে আসা বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। ২০১৭ সালে বিগত বছরের রেকর্ড ছাড়িয়ে ৩৫টি বেসরকারি বিদ্যালয়ে প্রায় দুই হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী পড়তে আসেন। একই বছরে ৩৭টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৫০০ বিদেশি শিক্ষার্থী অধ্যায়ন করেন। ২০১৬ সালে সরকারি ও বেসরকারি উভয় বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ২ হাজার ২৮২ জন। সেই হিসাবে এক বছরে ১৫৬ জন শিক্ষার্থী বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) ৪৪তম বার্ষিক প্রতিবেদনে এমন তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
শিক্ষাবিদরা বলছেন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, অন্যান্য দেশের তুলনায় কম খরচ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মানসম্পন্ন শিক্ষা এবং জীবনযাত্রার ব্যয় কম হওয়ার কারণেই বিদেশি শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দিকে ঝুঁকছে।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, ২০১৭ সালে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৪৩৮ জন। যার মধ্যে ছিল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ হাজার ৯৭৭ জন ও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ৪৬১ জন। ২০১৬ সালে এ সংখ্যা ছিল ২ হাজার ২৮২ জন। তার মধ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ হাজার ৯২৭ ও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৫৫ জন অধ্যায়ন করেন। সে হিসাবে গত এক বছরে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫৬ জন শিক্ষার্থী বৃদ্ধি পেয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, অন্যান্য দেশের তুলনায় কম খরচ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মানসম্পন্ন শিক্ষা এবং জীবনযাত্রার ব্যয় কম হওয়ার বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য আমাদের দেশে আসছে। তাই আমরা এই বিষয়টিতে অতিমাত্রায় মনোযোগ দিচ্ছি, যাতে বিদেশিরা সহজেই আমাদের দেশে পড়তে পারে।
ঢাবি উপাচার্য বলেন, অন্যান্য দেশে যে সকল সুযোগ-সুবিধা দিয়ে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করছে, আমাদের বাজেট কম হওয়ায় তা করা সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু আমাদের যতটুকু রয়েছে, ততটুকুই নিবেদন করে বিদেশি শিক্ষার্থী বাড়ানোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
দেশি ও বিদেশি শিক্ষার্থীর আগমনে এক ধরনের মিথস্ক্রিয়া সৃষ্টি হয়ে শিক্ষার গুণগতমান পরখ করার সুযোগ আসে মন্তব্য করে উপাচার্য বলেন, ‘সহজে যেন বিদেশি শিক্ষার্থীরা সকল তথ্য-সহায়তা পায় সেজন্য ঢাবির প্রশাসনিক ভবনে একটি ডেস্ক খোলা হয়েছে। নতুন করে বিদেশি মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি ও আবাসন দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’
ইউজিসির প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, বিশ্বের ৩৫টি দেশের শিক্ষার্থীদের পদচারণা রয়েছে এদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। উন্নত এবং উন্নয়নশীল সব দেশের শিক্ষার্থীরাই প্রতিনিধিত্ব করছেন বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয়।
উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য যেসব দেশের বিদেশি শিক্ষার্থী বাংলাদেশে অবস্থান করছে সে দেশগুলো হলো কানাডা, চীন, জর্ডান, অস্ট্রেলিয়া, মালি, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ, যুক্তরাষ্ট্র, ইয়েমেন, ফিলিস্তিন, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, কোরিয়া, তুরস্ক, উগান্ডা, সিয়েরালিওন, মালয়েশিয়া, সোমালিয়া, ইথিওপিয়া, নাইজেরিয়া, আফগানিস্তান, দক্ষিণ কোরিয়া, বাহরাইন, ঘানা, জাম্বিয়া, জিবুতি, মিয়ানমার, ফিলিপাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইংল্যান্ড, ইতালি এবং ইরান। বাংলাদেশের ৯৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৩২টিতে এসব দেশের বিদেশি শিক্ষার্থীরা অধ্যয়নরত ছিল।
(সংগৃহীত ও পরিমার্জিত)