একটা সময় ছিল যখন পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ব্যাক্তি কে এই প্রশ্ন করলে আমাদের মাথায় কেবল মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসের কথাই আসতো। কিন্তু এখন সেটা অতীত। পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ব্যাক্তির তালিকায় বর্তমানে প্রথমে আছেন অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস। তার বর্তমান সম্পদের পরিমাণ প্রায় ২০০ বিলিয়ন ডলার (সেপ্টেম্বর, ২০২১)। বর্তমানে তার প্রতিষ্ঠিত অ্যামাজন আমাদের কাছে অনলাইন শপিংয়ের জন্য উত্তম একটা প্লাটফর্ম, কি পাওয়া যায় না এখানে! কিন্তু আপনি কী জানেন ১৯৯৪ সালের ৫ই জুলাই জেফ বেজোস কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত অ্যামাজন, যার যাত্রা শুরু হয়েছিল অনলাইনে পুরাতন বই বিক্রির মাধ্যমে? শুনে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি। আজ আপনাদের জানাবো কিভাবে একজন বই বিক্রেতা জেফ বেজোস পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধনী হলেন!
বেজোসের অ্যামাজনের ধারণাটি জন্ম নিলে, অনলাইনে বিক্রির জন্য ২০টি পণ্যের তালিকা করেন কিন্তু শুরুটা করেন পুরাতন বই দিয়ে। জেফ বেজোস মাত্র দশ হাজার ডলার এবং সাথে তার স্ত্রী এবং দুই প্রোগ্রামারকে নিয়ে অ্যামাজনের সব কাজ পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নেন। যাত্রা শুরুর প্রথম মাসেই ব্যাপক সাড়া পান। প্রথম মাসেই অ্যামাজন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি রাজ্যে এবং বিশ্বের ৪৫ টি দেশে বই বিক্রি করে। অ্যামাজনের প্রথম বছরেই, বেজোস ২০০০ সালের মধ্যে ৭৪ মিলিয়ন ডলারের বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে অর্থ সংগ্রহের পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু বাস্তবতা ঠিক তেমন ভালো ছিল না, ১৯৯৯ সালে বিক্রি হয় মাত্র ১.৬৪ মিলিয়ন ডলার। তিনি তার পরিবার থেকে ১ মিলিয়ন ডলার মতো সংগ্রহ করতে পারেন। অ্যামাজনে প্রথম প্রায় ২০ জন বিনিয়োগকারী প্রায় ৫০,০০০ ডলার দেন ১% শেয়ারের জন্য। যার প্রতিটি বিনিয়োগের মূল্য এখন প্রায় ১৬.৭১ বিলিয়ন ডলার।
অ্যামাজন ১৯৯৭ সালের মে মাসে পাবলিকলি প্রকাশ্যে এসেই কয়েকটি সেরা স্টার্টআপের মধ্যে একটিতে পরিণত হয়েছিল। ১৯৯৭ সালেই অ্যামাজন থেকে ৫৪ মিলিয়ন ডলার আয়ের মাধ্যমে বেজোস প্রথম মিলিয়নিয়ার হয়ে যায়। বার্ষিক বিক্রয় ১৯৯৫ সালে যেখানে ৫১১০০ ডলার ছিলো, সেখানে ২০০১ সালে পৌঁছে যায় ৩ বিলিয়নে। এরপর থেকে তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
১৯৯৮ সালে বেজোস ছিলেন সবচেয়ে কমবয়সে গুগলে বিনিয়োগকারী। তার ২৫০০০০ ডলারের বিনিয়োগ আজ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। ২০১৩ সালের আগস্ট মাসে বেজোস ওয়াশিংটন পোস্ট কিনেছিলেন ২৫০ মিলিয়ন ডলার দিয়ে। কয়েক বছর যেতে না যেতেই মার্কিন ইউনিক ওয়েব ভিউয়ারের পরিপ্রেক্ষিতে সেটি প্রথমবারের মতো নিউইয়র্ক টাইমসকে পর্যন্ত অতিক্রম করে।
এদিকে অ্যামাজনের শেয়ার মূল্য বাড়তেই থাকে। জানুয়ারী ২০১৬ থেকে জানুয়ারী ২০২১ পর্যন্ত স্টক ৪৫০% এর বেশি বৃদ্ধি পায় এবং শুধুমাত্র জানুয়ারি ২০২০ থেকে জানুয়ারী ২০২১ পর্যন্ত ৭৫% এর বেশি বাড়ে। ২০২১ এ বেজোস অ্যামাজনের প্রায় ১১% এর মালিক হয়, এটি তার সম্পদের সবচেয়ে বড় উৎস। কোম্পানির ২০২১ সালের বার্ষিক সভায় দেখানো হয়, বেজোস ৭০ মিলিয়নেরও বেশি শেয়ারের মালিক।
পাশাপাশি বেজোসের যথেষ্ট পরিমাণে ঐতিহ্যবাহী বিনিয়োগও যেমন রিয়েল এস্টেট রয়েছে। ওয়াশিংটনের কেন্টে রয়েছে তার আমেরিকান বেসরকারীভাবে অর্থায়িত এ্যারোস্পেস প্রস্তুতকারক ও উপ-কক্ষপথীয় মহাকাশ উড়ান পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা ব্লু অরিজিন। সব মিলিয়ে ২০২১ সালে জেফ বেজোস চলে আসেন পৃথিবীর সবচেয়ে ধনীর তালিকার প্রথমে।
জেফ বেজোস ই-কমার্সের বৃদ্ধিতে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন, তা স্বীকার করতেই হবে। সব সফল ব্যাক্তির জীবনে খারাপ সময় আসে, বেজোসের জীবনও ভিন্ন নয়। কিন্তু তিনি থেমে নেই, নানা নতুন পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে চলছেন। শ্রেষ্ঠ ধনীর তালিকায় থাকা ব্যাক্তিদের মধ্যে আপনার কাকে বেশি পছন্দ, কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না কিন্তু!
লেখকঃ Tanjina Sultana Shahin | Science Bee