ধূমকেতু (comet) বরফ, ধুলো ও গ্যাস দিয়ে তৈরি এক ধরণের মহাজাগতিক বস্তু। সূর্যের খুব কাছ দিয়ে যাওয়ার সময় আমরা সাধারণত ধূমকেতু দেখতে পাই এবং তা অনেকটা নারকেল ঝাঁটার মত দেখতে হয়। এদের একটা লম্বা লেজের জন্য আমরা খুব সহজেই এদের চিনতে পারি।
ধূমকেতু সচরাচর খালি চোখে দেখা যায় না এবং সূর্যের কাছাকাছি অনেক বছর পরপর আসে আর সেই সময়েই খালি চোখে ধূমকেতু দেখা যায়। ধূমকেতু সাধারণত উপবৃত্তাকার কক্ষপথে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে এবং এর অনুসূর (সূর্যের কাছাকাছি) অবস্থানে এলে দেখা যায়।
ধূমকেতুর লেজ কেন হয় জানার আগে আরও একটা তথ্য জেনে রাখা ভাল, এমনিতে এদের লেজ থাকে না। ধূমকেতু অনুসূর অবস্থানে আসার সময় ধীরে ধীরে লেজ গজায়, একটা সময় সবচেয়ে বড় হয় আবার যখন সূর্য থেকে দূরে সরে যেতে থাকে এই লেজ কমে যেতে যেতে একসময় মিলিয়ে যায়।
এবার জেনে নেওয়া যাক ঠিক কি কি ঘটে এই সময় যে এই লেজ গজায়। ধূমকেতুর অনুসূর অবস্থানে অর্থাৎ সূর্যের কাছাকাছি এলে শুধু লেজ নয় এর মাথাও (coma) গঠিত হয়। কারণ সূর্যের কাছাকাছি এলে এর মধ্যে জমাট বেঁধে থাকা উদ্বায়ী বস্তুগুলি উত্তপ্ত হয়ে গ্যাস/জলীয় বাষ্প, ধূলিকণা দিয়ে এর নিউক্লিয়াস বা মূল অংশকে ঘিরে আবহাওয়া (বা বায়ুমন্ডল) তৈরি করে যা ধূমকেতুর ভারী বস্তুগুলিকে ঘিরে রাখে। এই আবহমন্ডলই সূর্যের আলোয় উজ্জ্বল হয়ে আমাদের চোখে ধূমকেতুর মাথা হিসেবে দেখা দেয়।
এ তো গেল ধূমকেতুর মাথা গঠনের বিষয়। আসা যাক লেজ কি করে হয়। সাধারণত ধূমকেতুর দুটি লেজ দেখা যায় (শক্তিশালী দূরবীক্ষণ যন্ত্রে স্পষ্ট হয়) - একটি ধুলোর লেজ (dust tail) আর একটি আয়ন লেজ বা গ্যাসীয় লেজ (lon Tail or Gas Tail)। সূর্যালোক ও সৌর বায়ু (solar wind) ধূমকেতুর উপর তীব্র চাপের সৃষ্টি করে যার প্রভাবে হালকা গ্যাস ও ছোট ছোট ধূলিকণাগুলি সূর্যের বিপরীতে চলে যায়। সূর্যের অতি বেগুনী রশ্মি ধূমকেতুর গ্যাসকে আয়নিত করে ও সৌর বায়ু সেই আয়নিত গ্যাসকে সোজা ঠেলে নিয়ে যায়। এই আয়ন লেজের রঙ উজ্জ্বল নীল রঙের হয়। আর ধুলোর লেজের কণাগুলি ধূমকেতুর কক্ষপথে চলতে থাকে ফলে কিছুটা টেরচা হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। ধুলোর লেজটি পৃথিবী থেকে সাদা বা গোলাপী বর্ণের দেখায়। পাশের ছবিটি দেখলে সূর্যের অবস্থানের প্রেক্ষিতে লেজগুলির দিক বুঝতে সুবিধা হবে। এ কথা সবসময় মনে রাখবেন, ধূমকেতুর লেজের অবস্থান সূর্যের বিপরীতেই সবসময় হবে এবং তা ধূমকেতুর কক্ষপথের উপর নির্ভর করে না।