আনারস খাওয়ার সময় অনেকের গাল বা জিহ্বা চুলকায়।কিংবা মুখের ভেতরে একটু অস্বস্তির ভাব হয়ে থাকতেই পারে । আমরা মনে করে থাকি এটা হয়তো কোনো প্রকার এলার্জি। অনেকের মতে, টক আনারসে থাকা এসিডের আধিক্যে হয়ে থাকে এই চুলকানি বা মুখ ছিলে যাওয়ার অনুভুতি। আসলে এটি কোন এলার্জি নয়, নয় এসিডের প্রতিক্রিয়া। আনারসে থাকে ব্রোমালিন নামের একটি এনজাইম, যা আপনার মুখের ভেতরের কোষগুলোকে হজম করে ফেলতে থাকে বা সহজ ভাষায়, “খেয়ে” ফেলে। এমনকি কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে, এই এনজাইমটি এতটাই সক্রিয় যে কারো কারো মুখের ভেতরে ছিলে রক্তক্ষরন শুরু হয়ে গেছে। ব্রোমালিন এমন একটি এনজাইম যা প্রোটিনের মধ্যবর্তী বন্ধন ভেঙ্গে ফেলতে সক্ষম। এই প্রক্রিয়ায় এটি মুখের ভেতরের কোষগুলোকে ভেঙ্গে ফেলতে থাকে। অবশ্য আনারস পেটে চলে যাওয়ার পর এর কার্যক্ষমতা বন্ধ হয় যায় এবং আমাদের শরীর এই ভেঙ্গে যাওয়া কোষগুলোকে আবার নতুন করে প্রতিস্থাপন করে। তা সত্ত্বেও আনারস খাওয়ার পর কুলকুচি করে মুখ ধুয়ে ফেলা ভাল, এতে ব্রোমালিনের ক্ষতিটা যেমন কমে যায় তেমনি এসিডের প্রভাবে দাঁতের ক্ষয় হওয়াটাও রোধ করা যায়। পুরো আনারসেই ব্রোমালিন থাকে তবে এর পরিমাণ সবচাইতে বেশি আনারসের মাঝের শক্ত অংশটিতে। যেসব কৃষক বছরের পর বছর আনারস চাষ করে আসছেন এবং আনারস কাটার সাথে যারা সম্পৃক্ত, এই কারনে তাদের হাতে ক্ষতি হতে দেখা যায়।তবে ব্রোমালিনের এই ক্ষয়কারী বৈশিষ্ট্য শুধু নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখার উপায় নেই কারন এর রয়েছে কিছু ব্যবহারিক প্রয়োগও। অনেক সময় মাংস রান্নার পরও থেকে যায় শক্ত, দাঁতে টেনে ছেড়া যায় না। এমন সব মাংস নরম করতে আনারসের এই এনজাইমটি কাজে আসতে পারে। আনারসের গুঁড়ো নির্যাস পাওয়া যায় এই কাজের জন্য। রান্নার আগে কিছুক্ষণ মাংসের টুকরোগুলোকে আনারসের রসে ভিজিয়ে রাখলে এর শক্তভাব দূর হয়ে যায়। এমনকি বেশিক্ষন ভিজিয়ে রাখলে মাংস এতটাই নরম হয়ে যাবে যে সেটা আর আপনার খেতে ইচ্ছে করবেই না! ব্রোমালিনের আরও আছে খাবারের চর্বি কাটানোর ক্ষমতা। এ কারনে অনেক সনাতন বাঙালি মাংস রান্নার রেসিপিতে দেখা যায় আনারসের ব্যবহার। বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি দেখেছেন যে এই ক্ষমতা তাদের কাজে আসতে পারে যারা নিজেদের ওজন কমাতে চান। খাবারের মেনুতে আনারস থাকলে শরীরে চর্বি জমতে পারে না এবং এর ক্ষতিকর প্রভাবও পড়ে না শরীরে। কোষ খেয়ে ফেলার এই ক্ষমতার কারনে এখন ক্যান্সার প্রতিকারের গবেষণায় ব্যাবহার হচ্ছে ব্রোমালিন। দেখা গেছে, ক্যান্সার রোগীদেরকে আনারস খাওয়ানোর পর পরই তাদের শরীরে সৃষ্টি হয় এমন কিছু কোষ যা ক্যান্সার কোষগুলোকে মেরে ফেলতে সক্ষম। আনারস খাওয়ার এমন অনেক উপকারিতা আছে বটে কিন্তু এটি খাওয়ার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। পেপটিক আলসার অথবা গ্যাসট্রিক এসিডিটি আছে যাদের, আনারসের এসিডগুলো তাদের জন্য বেশ ক্ষতিকর। এছাড়া গর্ভাবস্থায় মহিলাদের আনারস খাওয়া বন্ধ করে দেওয়া উচিত কারন এতে থাকে গর্ভপাতের আশঙ্কা।
©Quora