আমরা কেন বুড়ো হয়ে যাই? - ScienceBee প্রশ্নোত্তর

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রশ্নোত্তর দুনিয়ায় আপনাকে স্বাগতম! প্রশ্ন-উত্তর দিয়ে জিতে নিন পুরস্কার, বিস্তারিত এখানে দেখুন।

+1 টি ভোট
701 বার দেখা হয়েছে
"জীববিজ্ঞান" বিভাগে করেছেন (3,190 পয়েন্ট)

1 উত্তর

0 টি ভোট
করেছেন (3,190 পয়েন্ট)
বার্ধক্য বলতে আমরা আমাদের জীবনদশায় যেসব শারীরিক পরিবর্তন অনুভব করি তা বোঝায়। এটিও জীবনের একটি অনিবার্য অংশ। আমাদের মাঝে খুব কম মানুষকেই খুঁজে পাওয়া যাবে যারা বুড়ো হওয়াতে আনন্দ লাভ করছেন। চিরকালীন যৌবন যেন মানুষের এক পরম আকাঙ্ক্ষিত বস্তু। অনন্তকাল ধরে তারুণ্য ধরে রাখতে মানুষের চেষ্টার কোনো শেষ নেই। কিন্তু তারুণ্য ধরে রাখা এক কথায় অসম্ভব। কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমরা আসলে বুড়ো কেন হয়ে যাই?

প্রতিটি মানব কোষে অজস্র (নির্দিষ্ট সংখ্যক) ডি,এন,এ (DNA) রয়েছে, আর তারই একটা ছোট্ট অংশকে বলা হয় জিন (Gene)। এই জিন গুলোই আমাদের বংশগতির ধারক ও বাহক। আর এই জিন জনিত কারণকেই এখনো বৃদ্ধ হবার প্রধান কারণ হিসেবে তাত্ত্বিক ভাবে ধরে নেয়া হয়। সর্বোপরি, আমাদের কোষগুলি চিরকাল স্থায়ী হওয়ার জন্য তৈরি করা হয় না। আমাদের কোষের কাঠামো এবং কার্যকারিতা সময়ের সাথে সাথে হ্রাস পায়। মানুষসহ যেকোন স্তন্যপায়ী প্রাণীর বয়স বাড়ার লক্ষণ প্রায় একই, অর্থাৎ যে সব শরীরবৃত্তীয় পরিবর্তন ঘটে তা প্রায় একই রকম।

কিন্তু কেন এমন হয়?

কয়েক দশক ধরে, বিজ্ঞানীরা এই বিষয়ে অধ্যয়ন করছেন। সময়ানুক্রমিক বয়সের সাথে পাল্লা দিয়ে দেহের বিভিন্ন অঙ্গ বিভিন্নভাবে নিজেদের দায়িত্ব পালন করে যায় এবং দায়িত্ব শেষে নিঃশেষ হয়ে যায়। পুরোনো কোষের শেষ হওয়া এবং নতুন কোষের জন্ম নেওয়ার এই পালাবদলের রকমফের সব ধরনের কোষের ক্ষেত্রে হুবহু একই নয়।
সম্প্রতি স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় কিছু চমকপ্রদ তথ্য খুঁজে পাওয়া গেছে। তারা সব মিলিয়ে মোট ৮৭টি ভিন্ন ভিন্ন অণু এবং অণুজীবের সন্ধান পেয়েছেন, যাদেরকে বলা হচ্ছে বয়োবৃদ্ধির প্রতীক বা বায়োমার্কার। ৮৭টি বায়োমার্কারকে তাদের সংশ্লিষ্ট অঙ্গের কাজের উপর ভিত্তি করে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে, যেগুলোকে বলা হচ্ছে এজিওটাইপ। এই চারটি ভাগ হলো- কিডনি, লিভার, মেটাবোলিক এবং ইমিউনিটি। এই গবেষণালব্ধ ফলাফলানুযায়ী, মানবদেহ মূলত চারটি ভিন্ন ভিন্ন ধরন অনুসরণ করে জৈবিকভাবে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় ।

১.ডিএনএ ক্ষয়প্রাপ্ত হতে থাকে :
আমাদের ডিএনএ শরীরের ভেতরকার কোষগুলোর মধ্যে প্রবাহিত এক ধরণের জেনেটিক কোড। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এর মধ্যে ভুল হবার সুযোগ বাড়ে। সেই ভুলগুলো শরীরের কোষের মধ্যে জমা হতে থাকে। এ সময়ে জেনেটিক স্থায়িত্ব কমে যায়, যে কারণে স্টেম সেলের কার্যকারিতা কমে যায়।

২.ক্রোমোজোম ক্ষয়প্রাপ্ত হয়:
-- আমরা যদি ডিএনএকে একটা সুতার মত ধরি, তাহলে সেটির মাথায় একটি ক্যাপ বা ঢাকনা থাকে যা আমাদের ক্রোমোজোমসমূহকে রক্ষা করে।

এটা অনেকটা জুতোর ফিতার মাথা যেমন প্লাস্টিক দিয়ে মোড়ানো থাকে তেমন হয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই ঢাকনাগুলো আলগা হয়ে যেতে থাকে, ফলে আমাদের ক্রোমোজোমসমূহের কোন সুরক্ষা থাকে না।

মানে হলো তখন সেগুলো নিজেদের প্রতিলিপি বানাতে ভুল করে থাকে। সন্তান উৎপাদন প্রক্রিয়া তখন কিছুটা জটিল হয়ে পড়ে।

৩.কোষের আচরণ বদলে যায়:

আমাদের শরীরের অভ্যন্তরে ডিএনএ এক্সপ্রেশন নামে একটি প্রক্রিয়া আছে, যেখানে একটি কোষের মধ্যে থাকা হাজারো জিন নির্ধারণ করে ঐ কোষের কার্যক্ষমতা, অর্থাৎ ঐ নির্দিষ্ট কোষটি শরীরের ত্বক হিসেবে কাজ করবে না মস্তিষ্ক হিসেবে আচরণ করবে।
কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এবং জীবনযাপন পদ্ধতির কারণে সেই কোষের আচরণ বদলে যেতে শুরু করে। Science Bee

৪. কোষ নবায়নের সক্ষমতা হারিয়ে যায়:
ক্ষয় হয়ে যাওয়া কোষের পরিমাণ যাতে না বাড়ে, সেজন্য আমাদের শরীরের ক্রমাগত নতুন কোষ তৈরির ক্ষমতা আছে।

কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের সেসব দক্ষতা কমে যায়। তখন কোষসমূহ অপ্রয়োজনীয় অথবা বিষাক্ত প্রোটিন জমাতে শুরু করে, যেগুলো চোখের ছানি, আলঝেইমার বা পারকিনসন্স রোগের কারণ হয়ে ওঠে।

৫.কোষের পরিপাক ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ হারায়:
সময়ের সাথে সাথে শরীরের কোষসমূহ চর্বি বা চিনি জাতীয় উপাদানকে প্রসেস বা পরিপাক করার ক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে।

এজন্য বয়স বাড়ার পর বিভিন্ন রোগ যেমন ডায়াবেটিস হবার শঙ্কা বাড়ে, আর সেটি সারা পৃথিবীতেই একটি সাধারণ রোগ।।

৬. মাইটোকন্ড্রিয়া কাজ বন্ধ করে দেয়:
মাইটোকন্ড্রিয়া শরীরের কোষে শক্তি যোগান দেয়, কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে তাদের কর্মক্ষমতা কমে যায়। আর মাইটোকন্ড্রিয়া যখন ঠিকমত কাজ করতে পারে না, সেটা ডিএনএ'র জন্য খারাপ। তবে, কিছু গবেষণা বলছে, মাইটোকন্ড্রিয়ার কর্মদক্ষতা যদি নতুন করে বাড়ানো যায়, তাহলে সমস্ত স্তন্যপায়ী প্রাণীর আয়ু বাড়ানো সম্ভব হবে।

৭.কোষ ভৌতিক হয়ে যায়:

-কোন কোষ যখন বাজেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন সেটি কাজ করা বন্ধ করে দেয়। কিন্তু কাজ বন্ধ করলেই কোষের মৃত্যু হয় না।

এই কোষগুলো তখন ভৌতিক কোষে পরিণত হয়। এবং নিজের চারপাশের কোষগুলোকেও জোম্বি বা ভৌতিক কোষে পরিণত হতে সাহায্য করে। এর ফলে শরীরে জ্বালাপোড়ার মত উপসর্গ দেখা দেয়।

নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় কোষ শরীরের মধ্যে সারাক্ষণই কোষেরা নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সেই যোগাযোগ কমতে থাকে। Science Bee

এছাড়াও নারীদের ওভারি বা ডিম্বাশয়ে প্রতিমাসে যে ডিম্ব উৎপাদন হয় এবং সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য নারীর শরীর যেভাবে প্রস্তুত হয় তার পেছনেও রয়েছে এই হরমোনের ভূমিকা।
কিন্তু বয়স হতে থাকলে নারীদের শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোনের উৎপাদন কমে যেতে থাকে। এই হরমোনই প্রজননের পুরো প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে।

তাই বয়স হতে থাকলে নারীদের ডিম্বাশয়ে ডিম্বের পরিমাণও কমতে থাকে। পিরিয়ডের পরিমাণ কমতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় জন্ম দেওয়ার প্রক্রিয়াও বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে শরীরে জ্বালাপোড়া, কথাবার্তা বলতে সমস্যা হতে পারে। এর ফলে শরীরের সতর্ক একটা ভাব হারিয়ে যেতে থাকে। বয়স বাড়া যদিও একটি স্বাভাবিক এবং অনিবার্য প্রক্রিয়া। এছাড়া পরিবেশ দূষণ, ভেজাল খাদ্য গ্রহণ, অলস জীবন যাপনের জন্য আমাদের শরীরের প্রতিনিয়ত নানান ধরনের বর্জ্য, বিষ বা টক্সিট তৈরি হচ্ছে। এই বিষক্রিয়ার ফলে শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রমে বাধার সৃষ্টি হয় শরীর অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং আমরা বুড়ো হয়ে যাই।

তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন স্বাস্থ্যকর লাইফস্টাইল বা জীবনযাপন পদ্ধতির মাধ্যমে বয়স বাড়ার গতিকে হয়তো কিছুটা দূরে রাখা যায়। তবে একেবারে বন্ধ করে দেওয়া অসম্ভব।

লেখকঃ Promity | Team Science Bee

সম্পর্কিত প্রশ্নগুচ্ছ

+11 টি ভোট
1 উত্তর 1,590 বার দেখা হয়েছে
+2 টি ভোট
1 উত্তর 335 বার দেখা হয়েছে
+6 টি ভোট
1 উত্তর 929 বার দেখা হয়েছে

10,775 টি প্রশ্ন

18,456 টি উত্তর

4,742 টি মন্তব্য

265,624 জন সদস্য

123 জন অনলাইনে রয়েছে
4 জন সদস্য এবং 119 জন গেস্ট অনলাইনে
  1. Farhan Anjum

    140 পয়েন্ট

  2. Saif Sakib

    110 পয়েন্ট

  3. Tasfima Jannat

    110 পয়েন্ট

  4. LarryBeverly

    100 পয়েন্ট

  5. GuadalupeHov

    100 পয়েন্ট

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত বিজ্ঞান প্রশ্নোত্তর সাইট সায়েন্স বী QnA তে আপনাকে স্বাগতম। এখানে যে কেউ প্রশ্ন, উত্তর দিতে পারে। উত্তর গ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্যই একাধিক সোর্স যাচাই করে নিবেন। অনেকগুলো, প্রায় ২০০+ এর উপর অনুত্তরিত প্রশ্ন থাকায় নতুন প্রশ্ন না করার এবং অনুত্তরিত প্রশ্ন গুলোর উত্তর দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রতিটি উত্তরের জন্য ৪০ পয়েন্ট, যে সবচেয়ে বেশি উত্তর দিবে সে ২০০ পয়েন্ট বোনাস পাবে।


Science-bee-qna

সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ট্যাগসমূহ

মানুষ পানি ঘুম পদার্থ - জীববিজ্ঞান চোখ এইচএসসি-উদ্ভিদবিজ্ঞান এইচএসসি-প্রাণীবিজ্ঞান পৃথিবী রোগ রাসায়নিক শরীর #ask রক্ত আলো মোবাইল ক্ষতি চুল কী #science চিকিৎসা পদার্থবিজ্ঞান সূর্য প্রযুক্তি স্বাস্থ্য মাথা প্রাণী গণিত বৈজ্ঞানিক মহাকাশ পার্থক্য #biology এইচএসসি-আইসিটি বিজ্ঞান খাওয়া গরম শীতকাল #জানতে কেন ডিম চাঁদ বৃষ্টি কারণ কাজ বিদ্যুৎ রাত রং উপকারিতা শক্তি লাল আগুন সাপ মনোবিজ্ঞান গাছ খাবার সাদা আবিষ্কার দুধ উপায় হাত মশা শব্দ মাছ ঠাণ্ডা মস্তিষ্ক ব্যাথা ভয় বাতাস স্বপ্ন তাপমাত্রা গ্রহ রসায়ন উদ্ভিদ কালো পা কি বিস্তারিত রঙ মন পাখি গ্যাস সমস্যা মেয়ে বৈশিষ্ট্য হলুদ বাচ্চা সময় ব্যথা মৃত্যু চার্জ অক্সিজেন ভাইরাস আকাশ গতি দাঁত কান্না আম হরমোন বাংলাদেশ
...