বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় আতঙ্ক এবং আলোচনার বিষয় হচ্ছে সিঙ্কহোল। হঠাৎ করেই পায়ের তলার মাটি উধাও! বিশাল সব রাস্তা ঘাট, গাড়ি, বাড়ি, আচমকা দানব আকৃতির গর্ত রীতিমতো গিলে ফেলছে, যার কারণে মানুষের ভয়ংকর মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হচ্ছে। নিমিষেই পায়ের তলার মাটি সরে গিয়ে তৈরি হচ্ছে মৃত্যু ফাঁদ। সিঙ্কহোল যেমন মাটিতে হয় তেমন সমুদ্রেও সিঙ্কহোল তৈরি হয়।
সিঙ্কহোল কেনো হয়?
সিঙ্কহোল কেনো হয় তা জানতে হলে আগে আমাদের জানতে হবে ভূ-গর্ভস্থ পানি প্রবাহের ফলে ভূপৃষ্ঠের কি কি পরিবর্তন হয়। আমরা জানি ভূপৃষ্ঠের নিচে রয়েছে পানির প্রবাহ যার কারণে আমার গভীর নলকূপের মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠের নিচ থেকে পানি উঠাতে পারি। মাটির একদম নিচের স্তর বা ভূগর্ভস্থ পানির উপরিভাগে রয়েছে অনেক পাথর এসব পাথরকে বলা হয় কার্বনেট বেরক বা বেডরক। বিভিন্ন জায়গায় মাটির নিচে পানি প্রবাহ চলমান থাকা অবস্থায় ধীরে ধীরে ছোট পাথরগুলো সরে যেতে শুরু করে। বছরের পর বছর এইভাবে বেডরক গুলো সরে যেতে যেতে মাটির তলদেশে বিশাল আকৃতির গর্তের সৃষ্টি হয়। বহু বছর ধরে তৈরি হওয়া গর্ত যখন বড় হতে থাকে তখন তার চারপাশের মাটি এবং পাথর সেই গর্তে নিমজ্জিত হতে শুরু করে। এইভাবে একসময় ভূগর্ভস্থ সেই গর্তের আয়তন বৃদ্ধি পেতে থাকে। মাটির উপরিভাগের জমি যখন আর সেই চাপ সহ্য করতে না পারে তখনই হঠাৎ মাটির উপরিভাগের বিশাল এলাকা সাথে নিয়ে সেটি মাটির তলদেশে বিলীন হয়ে যায়। এইভাবেই সৃষ্টি হয় দানব আকৃতির বড় বড় সব সিঙ্কহোল। একটি সিঙ্কহোল আয়তনের দিক থেকে ১ মিটার থেকে ৬০০০ মিটার পর্যন্ত এবং উচ্চতায় দিক থেকে ২০০০ মিটার পর্যন্ত হতে পারে।
ছোট খাটো একটি সিঙ্কহোলের গভীরতা ১৫ থেকে শুরু করে ২০ মিটার পর্যন্ত হয়। এই ছোট একটি সিঙ্কহোলের পক্ষে অনায়াসে ৬ তলা একটি ভবন তলিয়ে যাবে। আর সবচেয়ে বড় সিঙ্কহোল গুলো একেকটা ৬০০০ মিটার পর্যন্ত হতে পারে। যার পক্ষে একটা আইফেল টাওয়ার গিলে খাওয়া কোনো ব্যাপারই না।
বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এবং গভীরতম সিঙ্কহোলটি রয়েছে চায়নায়৷ চওড়ায় যার দৈর্ঘ ৬২৬ মিটার এবং গভীরতা ৬৬২ মিটার। এতো গভীর একটি সিঙ্কহোলের তলদেশে পৌঁছানো প্রায় অসম্ভব। তাই একটি রোবটের মাধ্যমে চাইনিজ ইন্জিনিয়াররা এর গভীরতা মাপতে সক্ষম হয়েছিল৷
পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি সিঙ্কহোল রয়েছে তুরস্কে ৯৭ বছরের ইতিহাসে সেখানে ৬৫০ টিরও বেশি সিঙ্কহোল তৈরি হয়েছে।
বর্তমান সময়ে মানবসৃষ্ট সিঙ্কহোলের সংখ্যাও অনেক বেশি। বছর দুয়েক আগে জাপানের টোকিও তে সৃষ্টি হওয়া সিঙ্কহোলটি ছিল একটি মানব সৃষ্ট সিঙ্কহোল। মানবসৃষ্ট সিঙ্কহোল গুলো তৈরি হয় মূলত তৈরি হয় ঘনবসতির কারণে জায়গা বাঁচানোর জন্যে মাটির নিচ দিয়ে পানির পাইপ নেওয়া হয় মাঝেমধ্যেই এসব পাইপে দূর্ঘটনা বসত ছিদ্র হয়ে যায়। যার ফলে সেখান থেকে চুয়িয়ে পানি পরে মাটির নিচে গর্তের সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে ভূপৃষ্ঠের বৃষ্টির পানি সেখানে জমা হয় এবং গর্তের আয়তন বাড়তে থাকে সেই ভার ভূপৃষ্ঠ ধরে রাখতে না পেরে সৃষ্টি হয় মানবসৃষ্ট সিঙ্কহোল। এরকম অনেক নজিরই রয়েছে।
বর্তমানে আরেকটি গবেষণায় গবেষণায় উঠে এসেছে যে ভূগর্ভস্থ পানির স্তরের উচ্চতা কমে যাওয়ায় এমন সিঙ্কহোলের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
লেখকঃ Tamanna Rashid
#sciencebee #facts #sinkhole #Bangladesh #blog