স্যাকারিন- এই স্যাকারিন শব্দটি শুনেনি, এমন মানুষ খুব কমই আছে। রাসায়নিক গঠনানুসারে স্যাকারিনের নাম-
"anhydroorthosulphaminebenzoic acid". কিন্তু এমন নাম উচ্চারণ করা আর হাতুড়ি দিয়ে দাঁত ভাংগা একই কথা। তাই এর আবিষ্কারক এর নামকরণ করেন Saccharin যা এসেছে Saccharine (চিনির মতো) থেকে। Saccharine এসেছে ল্যাটিন শব্দ Saccharon থেকে যার অর্থ হলো চিনি। কিন্তু Saccharon আবার এসেছে সংস্কৃত শব্দ শর্করা থেকে। ইন্টারেস্টিং তাইনা?!
তবে এর থেকেও বেশি মজার কাহিনী হলো এর আবিষ্কার এর কাহিনী।
আবিষ্কারঃ
১৮৭৮-৭৯ সালের দিলে জন্স হপকিন্স ইউনিভার্সিটির এক ছোট- খাটো গবেষণাগারে প্রথম উদ্ভাবন করা হয় কৃত্রিম এ মিষ্টিকারক পদার্থটির। ইরা রেমসেন নামে রসায়নের এক প্রফেসরের তত্ত্বাবধানেই চলতো গবেষণাগারের কাজ। তাঁরই গবেষণাগারে যোগ দেন ফাহ্লবার্গ।
তো ফাহ্লবার্গ নিজের গবেষণায় এতোটাই মগ্ন থাকতেন যে খাওয়ার কথাও ভুলে যেতেন। তো আবিষ্কারের দিন, তিনি গবেষণা শেষে হাত না ধুয়েই খেতে বসেছিলেন। আর অত্যন্ত মিষ্টি একটি স্বাদ পেলেন, ফাহ্লবার্গ কিন্তু মিষ্টি একদমই পছন্দ করতেন না। তো তার খাবারে মিষ্টি ব্যবহার করায় তিনি বেজায় চটে গেলেন, রাগারাগি শুরু করলেন। কিন্তু পরক্ষণেই তিনি তাঁর ভুল বুঝতে পারলেন যে মিষ্টি টা আসলে খাবারে নয়, তাঁর হাত না ধুয়ে খাওয়ার ফলে হয়েছে। কিন্তু কি এমন যৌগের কারণে এতো মিষ্টতা হলো?
স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ নিয়ে কাজ ছিলো তার। তাই ঠিক কোন রাসায়নিক পদার্থটি হাতে লাগার দরুন এ মিষ্টতার উদ্ভব হয়েছে, তা তিনি ঠিক নিশ্চিত ছিলেন না। তাই তিনি আবার গবেষণাগারে গিয়ে আবার তার শেষ পরীক্ষার পদার্থ চেখে দেখলেন।
সালফোবেঞ্জয়িক এসিড, ফসফরাস ক্লোরাইড আর অ্যামোনিয়ার এক মিশ্রণ থেকেই তিনি পেয়েছিলেন সেই কড়া মিষ্টি স্বাদ। সেইদিনই তিনি এই মিশ্রণগুলো জ্বালিয়ে তৈরি করেছিলেন বেঞ্জয়িক সালফাইনাইড।
স্যাকারিনের গবেষণাপত্রঃ
এরপর আর দেরি করলেন না ফাহ্লবার্গ।
তার গবেষণা সুপারভাইজার অধ্যাপক রেমসেনের সাথে একটি সায়েন্টিফিক পেপার লিখলেন। ১৮৭৯ সালে প্রকাশিত সেই পেপারে তাদের দুজনকেই স্যাকারিনের উদ্ভাবক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিলো। ১৮৮৬ সালে করা স্যাকারিনের পেটেন্টে নিজেকেই এর একমাত্র আবিষ্কারক হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি। আর এটা নিয়েই ফাহ্লবার্গের সাথে রেমসেনের গন্ডগোল শুরু হয়। ফাহ্লবার্গের কাজটি মূলত রেমসেনের গবেষণাগারেই হওয়ায় রেমসেন চেয়েছিলেন এর সহ-উদ্ভাবক হিসেবে অন্তত তার নামটি থাকুক। অন্যদিকে ফাহ্লবার্গের বক্তব্য ছিলো যে, এর আগেও তিনি সালফোবেঞ্জয়িক এসিড নিয়ে বেশ কিছু কাজ করেছেন। তাই উদ্ভাবনের কৃতিত্ব মূলত তারই।
স্যাকারিনের ব্যবহারঃ চিনির চেয়ে প্রায় ৪০০ গুণ বেশি মিষ্টি স্যাকারিন তৈরী হয় আলকাতরা থেকে প্রাপ্ত উলুইন নামক পদার্থ থেকে। কার্বোহাইড্রেটবিহীন খাদ্যদ্রব্য ও কোমল পানীয়ের মিষ্টিকারক হিসেবে ব্যবহার করা হয় স্যাকারিন। এছাড়া বেকারিতে প্রস্তুত খাদ্যসামগ্রী, ক্যান্ডি, সালাদ ইত্যাদিতে বর্তমানে স্যাকারিন ব্যবহার করা হয়৷
ক্রেডিট : মিথিলা ফারজানা মেলোডি | ক্যাম্পাস এম্বাসেডর, সায়েন্স বী