উত্তর : না দাবীটি মিথ্যা!
ভারতের মহারাষ্ট্রের নাসিক এলাকার বাসিন্দা অরবিন্দ সোনার (Arvind Sonar) গত ১১ই জুন দাবি করেন তার শরীরে চৌম্বক ক্ষমতা তৈরি হয়েছে। এই চৌম্বক ক্ষমতার জন্য ধাতব কয়েন এবং রান্নাবান্নার জন্য ব্যবহৃত খুন্তি ও চামচ তার শরীরের চামড়ায় আটকে থাকছে। করোনার ভ্যাক্সিনের দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার পরেই তার এই ক্ষমতা তৈরি হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। এই খবরটা ব্যাপক প্রচারের পরে ভারতের অন্য এলাকা থেকেও আরো কয়েকজন চৌম্বকত্ব লাভের দাবি করেন।
নিউজপেপার সাইট, ইউটিউব এবং ফেসবুক এ সংক্রান্ত খবর ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে। ফ্যাক্ট ওয়াচ অনুসন্ধান করে দেখেছে, ভিডিও গুলো সত্য। তবে ভিডিওর দাবি সত্য নয়। মানব শরীরের চামড়ার স্বাভাবিক ধর্মের কারণেই অনেকের চামড়ার সাথে এভাবে কম ওজনের মসৃণ বস্তু আটকে থাকতে পারে। এর সাথে চৌম্বকত্বের কোনো সম্পর্ক নেই। এবং করোনার ভ্যাক্সিনের সাথেও এর কোনো সম্পর্ক নেই। মানব শরীরে কোভিশিল্ড ভ্যাক্সিনের ‘চৌম্বকত্ব প্রাপ্তি’র মত কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কথা উড়িয়ে দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা কি ?
ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি তাদের ফেসবুক পেজে ১৩ই জুন একটি ‘ফেসবুক লাইভ’ এর মাধ্যমে এই ঘটনার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিয়েছে। লাইভ ভিডিওতে উপস্থাপক প্রথমে তার শরীরে কয়েন এবং খুন্তি আটকে রেখে দেখান। একটু পরে তার শরীরে কিছুটা ট্যালকম পাউডার ছিটিয়ে নেন। এরপরে আবার কয়েন এবং খুন্তি আটকানোর চেষ্টা করেন। দেখা গেল, এবারে আর সম্ভব হচ্ছে না। ব্যাখ্যা হিসেবে তিনি বলেন, চৌম্বক শক্তি কাজ করছে না। কাজ করছে ঘর্ষণ (friction) এর শক্তি।
পদার্থবিজ্ঞান অনুযায়ী, দুটি বস্তু পরস্পরের সংস্পর্শে আসলে একে অপরের আপেক্ষিক গতিতে বাধা সৃষ্টি করে, তাকে ঘর্ষণ বলে। একেকটা পদার্থের ক্ষেত্রে এই ঘর্ষণ বল একেক রকম হয়। মানুষের চামড়ার সাথে মসৃন তল এর চামচ,প্লেট বা অন্য কোনো কিছু খুব সহজে আটকে থাকতে পারে। কাপড় চোপড় পরে থাকলে কম ঘর্ষণ বল পাওয়া যাবে। খালি গায়ে বেশি ঘর্ষণ বল পাওয়া যাবে। শরীরে ঘাম থাকলে বা হাল্কা ভেজা থাকলে আরো বেশি ঘর্ষণ পাওয়া যাবে।
আমাদের ত্বক থেকে তেল/ গ্রিজ জাতীয় পদার্থ বের হয় সব সময়,খুব অল্প পরিমানে। এটা আবার ঘর্ষণ বল বাড়িয়ে দেয়। কারো চামড়ায় এই তেল বেশি , সে বেশি ঘর্ষণ বল পায়। চামড়ার ইলাস্টিসিটিও গুরুত্বপূর্ণ। যার চামড়া বেশি ইলাস্টিক ( স্থিতিস্থাপক) , তার চামড়া বেশি ঘর্ষণ বল দিতে পারবে। যার চামড়ায় ঘর্ষণ বল বেশি, সে এইভাবে বেশি বস্তু আটকে রাখতে পারবে । লোহা, তামা, এলুমিনিয়াম, প্লাস্টিক,কাচ, ক্রিস্টাল, ম্যাগনেটিক নন-ম্যাগনেটিক যেকোনো অল্প ওজনের জিনিসই সে চামড়ায় এভাবে আটকে রাখতে পারবে।
কিন্তু, চামড়ায় ট্যালকম পাউডার ছিটিয়ে দিলেই চামড়া অমসৃণ হয়ে যাবে। তখন আর ঘর্ষণ বল কাজ করবে না। Maharashtra Andhashraddha Nirmoolan Samiti (MANS) আরেক বিবৃতিতে এই দাবিকে উড়িয়ে দিয়েছেন। বিবৃতিতে তারা বলেছেন, এই ব্যক্তি সম্ভবত ম্যাজিশিয়ানদের মত কোনো ট্রিক ব্যবহার করছেন। এখানে চুম্বকত্বের কোনো প্রমাণ দেখা যাচ্ছেনা। স্টেইনলেস স্টিল এর তৈরি পয়সা, চামচ এবং খুন্তি (অচুম্বকীয় পদার্থ) আকর্ষণ করছে এখানে, লোহার কোনো কিছুই আকৃষ্ট হচ্ছে না। করোনার ভ্যাক্সিন নিয়ে এসব গুজব বন্ধ করা উচিত।
সিদ্ধান্ত :
নানান কারণে কারো কারো শরীরে চৌম্বকত্ব তৈরির খবর অতীতেও দেখা গেছে। সেগুলো বিজ্ঞানীরা নানাভাবে ব্যাখ্যা করেছেন, উড়িয়েও দিয়েছেন। তবে সেসব দাবির কোনোটার সাথেই কোনোরকম টিকাদানের কোনো সম্পর্ক ছিল না। ফলে কোভিশিল্ড টীকা নেয়ার কারণে কারো শরীরে চৌম্বকত্ব তৈরি হয়, এটা সম্পূর্ণ গুজব।
ক্রেডিট: ফ্যাক্ট ওয়াচ