স্বাভাবিকভাবে আমরা যেভাবে হাত পা নাড়াই একটি মৃত শরীর কি সেটা পারে? না! কিন্তু মৃত শরীরও অনেক কথা বলে! মৃতদেহের ভেতর এমন কিছু কার্যকলাপ চলে, যা অবাক করে দেয়ার মত। আমরা শুধু মৃতদেহটাই দেখি, এর ভেতরে কি চলে বা কিভাবে চলে তা কিছুই দৃশ্যমান নয়। মানুষ বা যেকোনো পশুপাখির শরীরে মৃত্যু পরবর্তী সময়ে কিছু রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে। এ পরিবর্তনের কারণে মৃত দেহের পেশিগুলো ধীরে ধীরে শক্ত হতে থাকে। এ প্রক্রিয়াটি রিগর মর্টিস বা Rigor Mortis নামে পরিচিত। ধাপে ধাপে সম্পন্ন হয় এই প্রক্রিয়া।
রিগর মর্টিসের প্রক্রিয়া:-
মানুষের মৃত্যুর পর প্রথমে হৃদপিণ্ড রক্ত সঞ্চালন বন্ধ করে দেয়। তখন Capillary বা কৈশিকনালী থেকে রক্ত বড় বড় শিরার দিকে যেতে শুরু করে। মাধ্যকর্ষণ শক্তির কারণে মৃতদেহ যে অবস্থানে থাকে ( দাঁড়ানো থাকলে পায়ের দিকে, শোয়ানো থাকলে পিঠের দিকে) সেদিকে রক্ত যেতে থাকে। একে বলা হয় Livor Mortis। এসময় পেশিগুলোর বন্ধন কিছুটা কমে যায় এবং শরীর অনেকটা নরম হয়ে যায়।
পরবর্তীতে, শরীর আস্তে আস্তে ঠান্ডা হতে শুরু করে। মারা যাওয়ার পর প্রথম ঘন্টায় শরীরের তাপমাত্রা দুই ডিগ্রী কমে যায়। এরপর প্রতি ঘন্টায় এক ডিগ্রী করে কমতে থাকে। নির্দিষ্ট সময় পর এ তাপমাত্রার পরিবর্তন বন্ধ হয়ে যায়। এ প্রক্রিয়াকে বলা হয় Algor Mortis। সাধারণত মৃতদেহের তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রী পর্যন্ত নেমে আসে। নিউটন'স ল অফ কুলিং দিয়ে নিচের ছবির মত মৃতের শরীরের তাপমাত্রা মেপেও( মৃত্যুর পর এক্সপোনেনসিয়ালি ধীরে ধীরে মৃতদেহের তাপমাত্রা কমতে থাকে এই নিউটনের কুলিং ল মেনে) একটা অনুমান করা যায় মৃত্যুর সময় এর ব্যাপারে!!
এরপরের ধাপই হচ্ছে Rigor Mortis। Adenosine Triphosphate (ATP) ধীরে ধীরে কমে যাওয়াতে রিগর মর্টিসের সূচনা হয়। মৃত্যুর ৩/৪ ঘন্টা পরই প্রক্রিয়াটি শুরু হয়। চোখ, ঘাড় এবং চোয়ালের পেশিগুলো আগে শক্ত হয়। মৃত্যুর পর থেকে আট ঘন্টা পর্যন্ত শরীর আস্তে আস্তে শক্ত হতে থাকে, কিন্তু বিশেষ কিছু অঙ্গ তখনও নমনীয় থাকে। ৮-১২ ঘন্টার মধ্যে প্রায় সবগুলো পেশি পুরোপুরি শক্ত হয়ে যায়। এরপর আরো ১২ ঘন্টা পেশিগুলো শক্ত হয়ে থাকে। মৃত্যুর ২৪-৩৬ ঘন্টার মাঝে পেশিগুলো ধীরে ধীরে আবার নরম হতে শুরু করে। পুরো প্রক্রিয়া প্রায় ২৪-৩৬ ঘন্টা পর্যন্ত চলে। মাঝে মাঝে ৪৮ ঘন্টার মতও হয়।
ফরেনসিক প্যাথোলজি সায়েন্স এ রিগর মরটিসের প্রয়োগ:--
Degree of rigor mortis কতটা হয়েছে সেটা দেখে মৃত্যুর আনুমানিক সময় নির্ধারন করা হয়!
১) একটা victim এর শব দেহ স্থানান্তরিত না করা হলে নিজের শক্ত ভাবটা বজায় রাখে যদি রিগর মরটিস শুরু হয়ে গিয়ে থাকে!
২) যদি মৃত্যুর পর শব দেহ নিয়ে স্থানান্তরিত করা হয় রিগর মরটিস শুরুর আগেই তখন ফরেনসিক টেকনিক livor mortis এর ধারণা টা প্রয়োগ করা হয়!
৩) যদি বডিটা যে পজিশনে পাওয়া গেছে তার সাথে লোকেশন না মেলে তাহলে মানে দাড়ায় বডিটা স্থানান্তরিত করা হয়েছিল!
উদাহরণ -
যদি বডিটার পেছনের সাইডটা সমতল আর একটা হাত সোজা উঁচু হয়ে থাকে তার মানে কেউ সেই ব্যাক্তিকে মেরে বডি স্থানান্তরিত করেছে! রিগর মরটিসকে transient evidence বলা হয় কারন যেখানে একটা বডির অবস্থা ধীরে ধীরে degrade করতে থাকে! অনেকগুলি ফ্যাক্টরকে তদন্তের সময় ধরে পরীক্ষা করতে হয় মৃত্যুর সময় নির্নয়ের জন্য! এরকম একটা factor হল ambient temperature. নিউটন এর শীতলিভবন সুত্র অনুযায়ী পরিবেশের সাথে বডির তাপমাত্রার পার্থক্য যত বেশি হবে তত বেশি হারে বডিটি সময়ের সাপেক্ষে শীতল হবে!
সংগৃহীত