স্বামী যে কারণে স্ত্রী কে রক্ত দিতে পারবেন না বিশেষত গর্ভাবস্থায় বা প্রসবকালীন সময়ে-
স্বামী-স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ ভিন্ন হতে পারে উদাহরণস্বরুপ, স্বামী 'এ' গ্রুপ ও স্ত্রী 'বি' গ্রুপ। এতে সন্তান গর্ভধারণে কোন সমস্যা হয় না সাধারণত। কিন্তু তাদের রক্তের গ্রুপের Rh ফ্যাক্টরের ভিন্নতা গর্ভস্থ সন্তানের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। স্বামী-স্ত্রীর Rh ফ্যাক্টরের ভিন্নতার কারণে মা ও ভ্রূণের Rh ফ্যাক্টর ভিন্ন হওয়াকে Rh Incompatibility বলে।
Rh Incompatibility ঘটে প্রসবের সময় যখন গর্ভবতী মায়ের রক্তের গ্রুপ Rh negative থাকে তখন তার ভ্রূণ থেকে Rh positive রক্তের সংস্পর্শে আসে। এ ধরনের সংমিশ্রণ ঘটলে মায়ের শরীর সন্তানের রক্তের পজেটিভ Rh ফ্যাক্টরকে foreign particle হিসেবে চিহ্নিত করে। সাধারণত আমাদের শরীরে কোন রোগ-জীবাণু প্রবেশ করতে চাইলে রক্তের RBC একে foreign particle বলে মার্ক করে অ্যান্টিবডি (প্রোটিন) তৈরি করে, যাতে আমাদের শরীর এই বাহিরের শত্রুকে মেরে ফেলতে পারে। পরবর্তী গর্ভধারণের ক্ষেত্রে যদি ভ্রুণ যদি আবারো বাবার Rh ফ্যাক্টর পায়, তখন মায়ের শরীরের অ্যান্টিবডি ভ্রুণের RBC আক্রমণ করে।
প্রথম গর্ভাবস্থায় সাধারণত Rh incompatibility সৃষ্টি হয় না। Rh incompatibility এর কারণে সাধারণত ২য় বা তার পরবর্তী গর্ভধারণের ক্ষেত্রে ভ্রুণের ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। আর যদি ১ম সন্তানের পরের সন্তান যদি Rh পজেটিভ হয়, তখন মা এর শরীরের অ্যান্টিবডি ভ্রুণের রক্তপ্রবাহে মিশে যায় এবং ভ্রুণের RBC কে আক্রমণ করে। এতে বাচ্চার রক্তের RBC ভেঙ্গে যায়। এ ধরনের অবস্থাকে হেমোলাইটিক এ্যানিমিয়া বলা হয় যার ফলে বাচ্চার শরীর অস্বাভাবিক রক্তশূন্যতার সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে এর প্রভাব হিসেবে তার শরীরে পানি জমে যায় যাকে edema বলে যেটা বাচ্চার জন্য মারাত্মক কন্ডিশন তৈরি করে। এর ফলে বাচ্চা গর্ভেই হার্ট এট্যাক করে মারা যায় যাকে হাইড্রপস ফিটালিস বলে। এছাড়া Rh ফ্যাক্টরের ভিন্নতার জন্য RBC ভেঙে বাচ্চার শরীরে বিলিরুবিন অতিরিক্ত হয়ে জন্ডিস দেখা দিতে পারে৷ অতিরিক্ত বিলিরুবিন মস্তিষ্কে প্রবেশ করে kernicterus নামক রোগ হতে পারে। আর এই সব রোগগুলোকে একসাথে বলে এরিথ্রোব্লাস্টোসিস ফিটালিস।
স্বামী যদি স্ত্রীকে ব্লাড দেয়, তাদের ব্লাডগ্রুপ যদি এক থাকে তাহলেও সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। স্বামীর রক্তের মধ্যকার মাইনর এন্টিজেন স্ত্রী এর রক্তে থেকে যেতে পারে যেটি পরবর্তীতে স্ত্রী এর দেহে অ্যান্টিবডি তৈরি করবে যা স্ত্রীর দেহে থেকে যাবে এবং সেটি পরবর্তীতে গর্ভস্থ ভ্রূণের মধ্যে স্থানান্তর হবে যা তার জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হবে। কারণ সেই মাইনর এন্টিজেনকে অ্যান্টিবডি foreign particle হিসেবে ডিটেক্ট করে তা নষ্ট করে দিতে বা মেরে ফেলতে চাইবে। এই এন্টিবডি একসময় থাকে না তা দেহ থেকে বের হয়ে যায়। কিন্তু বাচ্চা জন্মের সময় সমস্যার সৃষ্টি করে। তাই গর্ভাবস্থায় স্বামীকে তার স্ত্রী কে রক্তদান করতে নিষেধ করা হয়।
© রাদিয়া আহমেদ লুবনা