গিরগিটি কিভাবে রং বদলায়?
কিভাবে গিরগিটি রং বদলায় তা জানতে চান? আচ্ছা কোনো প্রাণী কি রং পরিবর্তন করতে পারে? এ প্রশ্ন যদি আপনাকে করা হয় তবে আপনার মনে কোন প্রাণীর কথা আসবে?
অনেকের মনেই প্রথমেই গিরগিটির কথা আসবে। কারও কারও মনে আবার অক্টোপাসের কথা আসতে পারে। প্রাণীজগতে শুধুমাত্র গিরগিটি এবং অক্টোপাসরাই রং পরিবর্তন করে না। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড়, ব্যাঙ, টিকটিকি এমনকি মাছেরা পর্যন্ত নিজেদের গায়ের রং পরিবর্তন করতে পারে। বিভিন্ন প্রয়োজনে তারা তাদের রং পরিবর্তন করে। যখন পরিবেশ ঠান্ডা থাকে তখন তাপ ধারণ করার জন্য তারা গাঢ়ো রং ধারণ করে। আবার পরিবেশ গরম থাকলে তারা হালকা রঙ ধারণ করে। আবার স্ত্রী গিরগিটিরা পুরুষদের আকর্ষণ করার জন্য আকর্ষণীয় রঙে সেজে থাকে।
আপনি জানেন কি? গিরগিটিরা তাদের দেহে তাপমাত্রা উৎপাদন করতে পারে না।অনেক সময় দেখা যায় তারা দেহে রং পরিবর্তনের মাধ্যমে তাদের দেহে প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা বজায় রাখে। যখন আবহাওয়া শীতল থাকে তখন গিরগিটি তার দেহে তাপমাত্রা ধরে রাখার জন্য গাঢ়ো রং ধারণ করে। আবার যখন আবহাওয়া বেশ গরম বা উত্তপ্ত থাকে এরা দেহের তাপ বের করে দেওয়ার জন্য হালকা বর্ণ ধারন করে। হালকা বর্ন ধারণ করার গিরগিটিকে অনেকটা ফ্যাকাশে দেখায়। গিরগিটিরা শুধুমাত্র তাপ পরিবর্তনের জন্যই তাদের দেহের রং বদলায় না। তারা একে অপরের সাথে যোগাযোগ করার জন্যও রঙ পরিবর্তন করে। আবার তারা তাদের বিক্রম দেখানর জন্যও তাদের দেহের রঙ বদলায়। স্ত্রীরা পুরুষদের মন পাওয়ার জন্যও তাদের দেহের রঙ বদলায়।
যে সকল প্রাণীরা নিজেদের দেহে তাপ উৎপাদন করতে পারেনা তাদেরকে বলা হয় Ectotherms। এই সমস্ত ectotherms প্রজাতিদের রয়েছে রঙ পরিবর্তন করার বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে। তাদের বিশেষ কিছু কোষ থাকে যা তাদের রং পরিবর্তনের ব্যাপারে সাহায্য করে। প্রাণীদের রং পরিবর্তনের ব্যাপারটির সাথে আলোর একটি বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। আলোর সংশ্লেষণ এবং প্রতিফলন প্রাণীদের রং পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। গিরগিটি রং পরিবর্তনের জন্যও আলোর ভূমিকা রয়েছে। রং সৃষ্টির জন্য দায়ী বিশেষ কোষগুলোতে আলোর সংশ্লেষণ ও প্রতিফলনের মাধ্যমে এরা রঙিন হয়ে উঠে।
Ectothermes দের রং সমৃদ্ধ কোষ গুলোকে বলা হয় ক্রোমাটোফোর। আর এই ক্রোমাটোফোর গুলোই গিরগিটির গায়ের এবং চোখের রং পরিবর্তনের জন্য দায়ী। গিরগিটির রং পরিবর্তনের জন্য প্রধানত তিন ধরনের ক্রোমাটোফোর রয়েছে। এগুলো হলো:
Xanthophores : এটি গিরগিটির হলুদ এবং লাল রং ধারণ করে।
Iridophores : এটি মূলত গিরগিটির স্ফটিকাকার কোষ। যা আলোর প্রতিফলন বা সংশ্লেষণ মাধ্যমে কিছু রং সৃষ্টি করে। যার ভিতর রয়েছে নীল, বেগুনি ও সাদা। এই তিনটি রং এর জনএ এই স্তরটি দায়ী।
Melanophores : এটি গিরগিটির কালো রঙ ধারন কারী ক্রোমাটোফোর।এটি দেখতে অনেকটা তারকা আকৃতির।
গিরগিটি রং পরিবর্তনএই ক্রোমাটোফোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।যখন গিরগিটি হালকা রঙ ধারণ করতে চায় তখন মেলানিন রঞ্জক গুলি তারকাকার আকৃতির আকারের এক্কেবারে মাঝে চলে আসে। এর ফলে এদের গায়ের রং হালকা বর্ণ ধারণ করে। আবার যখন এরা গাঢ় রঙ ধারণ করতে চায় তখন মেলানিন গুলি তারকা আকৃতির আকারের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। যার ফলে গিরগিটির গায়ের রং গাঢ়ো হয়ে যায়।
গিরগিটি তাদের এই ক্রোমাটোফোর গুলির আকার এবং আকৃতির পরিবর্তনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। আর এই ক্রোমাটোফোর গুলির সাহায্যেই গিরগিটি তাদের দেহের রং বদলায়। এছাড়াও অন্যান্য রংগুলি তৈরি করার জন্য গিরগিটি বিভিন্ন ক্রোমাটোফোর এর আকার ও রঞ্জক এর নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। যার ফলে লাল নীল সবুজ হলুদ বা অন্যান্য রংগুলি গিরগিটি ধারণ করতে পারে।
এতক্ষণ তো আমরা কিভাবে গিরগিটি রং বদলায় তা জানলাম। চলুন জেনে আসি কেন তারা তাদের গায়ের রং বদলায়। গিরগিটি গায়ের রং বদলানোর বিভিন্ন কারণ রয়েছে। এরমধ্যে বড় দুটি কারণ হচ্ছে ছদ্মবেশ ধারণ করা এবং দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করা। এছাড়াও আরো নানান কারণে গিরগিটির তাদের দেহের রং পরিবর্তন করে। যখন দুই প্রেমিক মজনু গিরগিটির মধ্যে একটি স্ত্রীকে নিয়ে যুদ্ধ বাজে তখন তারা তাদের রংবাজি দেখায়। গিরগিটিরা প্রথমেই মারামারি-কাটাকাটি দিতে যায় না। তাদের যুদ্ধের প্রথম ধাপ হলো রং পরিবর্তন করা। যে গিরগিটি রং যত বেশি রংচঙে হবে তার যুদ্ধে জয় হওয়ার একটা সম্ভাবনা থাকে। যুদ্ধের সময় এরা রেগে গেলে গাঢ়ো লাল রং ধারণ করতে পারে।
অনেক সময় বিপক্ষের গিরগিটি শুধুমাত্র এই রঙিন চমক দেখেই রণে ভঙ্গ দিতে পারে।আবার যুদ্ধে সন্ধি করার জন্য এরা সাদা রং বা হালকা নীল বর্ণ ধারণ করতে পারে। যার মানে হচ্ছে আমি যুদ্ধ চাইনা, শান্তি চাই। এছাড়া এরা নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন তথ্য আদান প্রদানের জন্য নিজের গায়ের রং বদলায়। স্ত্রী গিরগিটিরা তাদের প্রেমিকের মনোরঞ্জন করার জন্য রঙিন মেকআপ নিয়ে থাকে। তবে তাদের যেহেতু মেকআপ বক্স থাকে না তাই তারা তাদের ক্রোমাটোফোরের উপর নির্ভর করে। গিরগিটি রং পরিবর্তনের জন্য তাদের শারীরিক অনেক কারণ দায়ী থাকে।
[তথ্যসূত্র : বাংলা রিমাইন্ডার]
©আয়েশা আক্তার