ভিক্টর ফ্রান্সিস হেস একজন অস্ট্রীয়-মার্কিন পদার্থবিজ্ঞানী। অস্ট্রিয়াতে গ্রাৎস এবং ইন্স‌ব্রুক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করার পর ১৯৩৮ সালে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। মূলত নাৎসি বাহিনীর অত্যাচার থেকে বাঁচতেই তিনি পালিয়ে গিয়েছিলেন, কারণ তার স্ত্রী ছিলেন ইহুদি। যুক্তরাষ্ট্রে গেলে তাকে ফর্ডহাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনায় নিযুক্ত করা হয়। কিছুকাল পর তিনি একজন স্বাভাবিক মার্কিন নাগরিকের মর্যাদা লাভ করেন। বেলুনের মাধ্যমে বহনযোগ্য বিভিন্ন যন্ত্রের মাধ্যমে হেস এবং তার সহকর্মীরা প্রমাণ করেছিলেন, যে বিকিরণ পরিবেশকে আয়নিত করে তার উৎস হল মহাজাগতিক। মহাজাগতিক রশ্মি আবিষ্কারের জন্য তিনি ১৯৩৬ সালে অপর বিজ্ঞানী কার্ল ডেভিড অ্যান্ডারসনের সাথে যৌথভাবে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
ঠিক কোন স্থানে ভিক্টর হেস এবং তাঁর ইলেক্ট্রোস্কোপ-সহ গরম-হাওয়া বেলুনটি অবতরণ করেছিল তা নিয়ে মতপার্থক্য আছে। কিন্তু, যেটা ঘটেছিল, তা হল দু’জন সহকর্মী-সহ ঠিক ১০০ বছর আগে ভিক্টর হেস পূর্ব জার্মানির কোনও একটি ছোট শহরে নামেন। জনৈক চাষি একটি ঘোড়ায়-টানা গাড়িতে তিন জনকে পিসকো রেলস্টেশনে নিয়ে যান, যেখান থেকে তাঁরা বার্লিন অভিমুখে যাত্রা করেছিলেন। সেই সন্ধ্যাতেই তাঁরা ভিয়েনায় তাঁদের গৃহাভিমুখে পাড়ি দেন। ঘটনাটি ঘটেছিল ১৯১২ সালের ৭ আগস্ট। বেলুনটি ছিল একটি হাইড্রোজেন বেলুন যেটা উত্তর বোহেমিয়া থেকে পাড়ি দিয়ে উঠেছিল ৫,৩০০ মিটার উচ্চতায়; ভিক্টর হেস প্রমাণ পেলেন মহাশূন্যে ঘটিত তীক্ষ্ণ আয়োনীয় বিচ্ছুরণের। কসমিক রে বা নভোরশ্মি আবিষ্কৃত হল, হেস সম্মানিত হলেন ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে নোবেল পুরষ্কার পেয়ে।
১৯৩০ থেকে ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে মধ্যে, মানুষের তৈরি কণা-ত্বরক (পার্টিকল অ্যাক্সিলিরেটর) যন্ত্র খুব উচ্চ শক্তিতে পৌঁছনোর আগে, উচ্চ-শক্তি পদার্থবিদ্যার গবেষণায় নভোরশ্মি ব্যবহৃত হত; ফলস্বরূপ, উপপরমাণু কণিকা আবিষ্কৃত হল- পজিট্রন এবং মুয়ন-সহ। নভোরশ্মি-গবেষণা বিশেষ ভাবে চালিত হল নভোপদার্থবিদ্যার বিভিন্ন দিকে - নভোরশ্মির উত্স, কী ভাবে তারা উচ্চগতি প্রাপ্ত হয়, ছায়াপথের গতিবিজ্ঞানে তাদের অবস্থান কী ইত্যাদি ।
সূত্র : বিংশ শতাব্দীর পদার্থবিদ্যা ও ব্যাক্তিত্ব : ডঃ শঙ্কর সেনগুপ্ত, বেস্টবুকস