গণিত এবং কম্পিউটার বিজ্ঞানের আলোচনায় নির্দেশক্রম বা ইংরেজি ভাষায় অ্যালগরিদম (Algorithm) বলতে একটি সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিকে বোঝায়, যেটি কতগুলি সসীমসংখ্যক, সুসংজ্ঞায়িত, পরিগণক যন্ত্রে (কম্পিউটারে) বাস্তবায়নযোগ্য ও সুনির্দিষ্ট ক্রমে বিন্যস্ত নির্দেশের সমষ্টি, যে নির্দেশগুলিকে ধাপে ধাপে অনুসরণ করে কোনও সুসংজ্ঞায়িত পরিগণনামূলক সমস্যা বা সমস্যার শ্রেণীকে সমাধান করা হয়। পরিগণক বিজ্ঞান তথা কম্পিউটার বিজ্ঞানের সমস্ত ক্ষেত্রে যেমন উপাত্তাধার, চিত্রলিখন, জালিকায়ন, পরিচালক ব্যবস্থা, নিরাপত্তা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ইত্যাদিতে নির্দেশক্রম বা অ্যালগোরিদম নির্মাণ ও বিশ্লেষণ একটি মৌলিক কর্মকাণ্ড। নির্দেশক্রম বা অ্যালগোরিদম নির্মাণ এবং পূর্বলিখিত নির্দেশক্রম (প্রোগ্রাম) রচনার মধ্যে পার্থক্য আছে। নির্দেশক্রম নির্মাণের সময় কোনও পরিগণনামূলক সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে লভ্য সমস্ত বিকল্প ঠিকমতো বোঝা অত্যাবশ্যক। অর্থাৎ কোনও নির্দিষ্ট সমাধানের জন্য কী যন্ত্রাংশসামগ্রী ব্যবহৃত হবে, জালিকাব্যবস্থাটি কী রকম, কোন্ ভাষায় প্রোগ্রাম রচিত হবে, কর্মদক্ষতার উপরে কী কী সীমাবদ্ধতা বিদ্যমান, এই সব কিছু বিবেচনায় রাখতে হয়। কোনও নির্দেশক্রম যদি কোনও সমস্যাকে পূর্ণাঙ্গরূপে এবং দক্ষভাবে সমাধান করতে পারে, তাহলে সেটিকে "সঠিক" বিবেচনা করা হয়। নির্দেশক্রমগুলি প্রবিষ্ট উপাত্ত ও বহির্গত উপাত্তের মাধ্যমে কাজ করে। প্রবিষ্ট উপাত্তের (ইনপুট) উপরে নির্দেশক্রমের প্রতিটি ধাপ ধারাবাহিকভাবে প্রয়োগ করা হয় এবং সবশেষে বহির্গত উপাত্ত (আউটপুট) ফলাফল হিসেবে প্রকাশিত হয়। একটি নির্দেশক্রমকে তখনই "সঠিক" বলা হয় যদি প্রতিটি প্রবিষ্ট উপাত্তের জন্য নির্দেশক্রমটি সঠিক বহির্গত উপাত্ত উৎপাদন করে। তবে পুরোপুরি নির্ভুল নয় এমন নির্দেশক্রম বা অ্যালগোরিদমও গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে, যদি ভুলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা যায়।
ইংরেজি "অ্যালগরিদম" শব্দটি এসেছে ৯ম শতাব্দীর মুসলিম গণিতবিদ ‘মুসা আল খারিজমী’-এর নাম থেকে। অন্য ভাষায় নির্দেশক্রম বা অ্যালগোরিদম হচ্ছে ধাপে ধাপে সমস্যা সমাধানের পদ্ধতি বিশেষ। অর্থাৎ একটি সমস্যাকে সীমিত সংখ্যক কয়েকটি ধাপে ভেঙ্গে প্রত্যেকটি ধাপ পরপর সমাধান করে সমগ্র সমস্যা সমাধান করা হয়। পরিগণক যন্ত্র (কম্পিউটার), রোবট, এমনকি মানুষও নির্দেশক্রম বা অ্যালগোরিদমের ধাপগুলি ধারাবাহিকভাবে অনুসরণ করে একটি নির্দিষ্ট কাজ সম্পাদন করতে পারে। কম্পিউটার বিজ্ঞানে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য সঠিক নির্দেশক্রম বা অ্যালগোরিদমের ধারণাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
একটি নির্দেশক্রম বা অ্যালগোরিদমকে যেকোনও ভাষায় বর্ণনা করা যেতে পারে, সে ভাষাটি হতে পারে বাংলা, ইংরেজির মত মানুষের মৌখিক ভাষা,অথবা সি++ বা জাভার মত প্রোগ্রাম (পূর্বলিখিত নির্দেশক্রম) রচনার ভাষা। এমনকি যন্ত্রাংশসামগ্রী (হার্ডওয়্যার) নকশাকরণের মাধ্যমেও এটি বর্ণনা করা যেতে পারে। তবে যে ভাষাতেই লেখা হোক না, সমস্যা সমাধানের প্রতিটি ধাপের বর্ণনা নির্দেশক্রম বা অ্যালগোরিদমে থাকতে হবে।
সূত্র: উইকিপিডিয়া