নেপোটিজম (nepotism) কথাটি ল্যাটিন (যদিও এই শব্দটিকে অনেকেই ফরাসী বলেও মনে করে থাকেন) শব্দ nepos (নেপো) থেকে যার ইংরেজি অর্থ nephew বা ভাইপো-ভাগ্নে ইত্যাদি। নেপোটিজম (Nepotism) বলতে সাধারণতঃ বোঝায় “স্বজনপোষণ”। সোজা বাংলা কথায় নেপোটিজম এর খাটি মিনিং হল – কোন নিকট আত্বীয়র দেওয়া সুবিধার মাধ্যমে কর্ম ক্ষেত্রে (চাকুরী পেতে, এবং টিকিয়া রাখতে) সুবিধা ভোগ।
আমরা বাংগালীরা প্রায়সই মামু খালুর জোর শব্দটি উচ্চারণ করি। মামা খালুর জোর এর মুর্খ বাংগাল প্রতিশব্দ ই হল তথাকথিত নেপোটিজম।
প্রায়সই দেখা যায় রাজনৈতিক দলের নেতার পুত্র রাজনৈতিক যোগ্যতা না থাকলেও বাবার কল্যানে নেতা হয়। ক্রিকেটারের ছেলে সে যতই ডাক মারুক ক্রিকেট দলে চান্স পেয়ে ক্রিকেটার হয়। আমলার ছেলে মেয়ে কিংবা ভাগ্নে ভাগ্নি গন আমলা হয়। সিনেমার নায়কের ছেলে যোগ্যতা না থাকলেও নায়ক হয়ে যায়। আর এই সব স্বজন প্রিতি মুলক কর্ম কান্ডকে বুঝাতে নেপোটিজম শব্দটির ব্যাবহার করা হয়।
নেপোটিজম এর বেশির ভাগ ৯৯% উদাহরণ অসচ্ছ থাকে। দেখা যায় যে যোগ্য তাকে না নিয়ে এক জন অযোগ্য ব্যাক্তিকে এমন পদে আসিন করা হয় যার সেই চাকুরী পাবার কোন যোগ্যতাই ছিল না। দুর্নীতির মাধ্যমে নিজের আত্বীয় স্বজন কে সুবিধা দিতে কর্তিপক্ষের কেউ অনেক যোগ্যতম মানুষ কে বাদ দিয়ে দেন। এর ফলে দেখা যায় একটি প্রতিষ্টান ভাল ভাবে চলতে চলতে মুখ থুবড়ে পড়ে। আর এর ভুক্তভোগী হয় জন সাধারন –
আদিকাল থেকেই পৃথিবীর প্রায় সব দেশে এই নেপোটিজম এর ব্যবহার (বা অপব্যবহার) সম্মন্ধে জনশ্রুতি আছে। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় যে সভ্যতা কিংবা জাতী কিংবা সম্রাজ্য বিলিন হয়ে গেছে তার ৮০% হয়েছে নেপোটিজম এর কুফলের কারনেই।
যাই হোক, সরকারি বা বেসরকারি অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, এমনকি রাজনৈতিক দলের কর্মকর্তা নিয়োগে এই স্বজনপোষণ অর্থাৎ নিজের পরিবার বা আত্মীয় পরিজন বা “জানাশোনা” নিকট ব্যক্তিকে কোনো না কোনো পদে আসীন করানোই হচ্ছে স্বজনপ্রিতি বা স্বজনপোষণ বা নেপোটিজম। ওপরে “নেপো” যে শব্দটির উল্লেখ করা হয়েছে তার সঙ্গে প্রচলিত প্রবাদ “যার ধন তার ধন নয়, নেপোয় মারে দই” এর সূক্ষ্ম সামঞ্জস্য থাকাটাও বিচিত্র নয়।
নেপোটিজম এর প্রভাবঃ
নেপোটিজম এর প্রভাব না বলে এর কুফল বলাই যুক্তি যুক্ত হবে। কারন এর কুফল কিংবা প্রভাব কতটা ভয়ংকরভাবে দেখা যায় তা যদি আপনি এক জন শিক্ষিত বেকার হন আর আপনার যদি মামা খালু না থাকে তবেই বুঝবেন। আমাদের সমাজে মেধার মুল্যায়ন হয় না যতটা নেপোটিজম এর মুল্যায়ন হয়। আখেরে শিক্ষিত আর যোগ্য ছেলে মেয়েরা তাদের মেধা অনুযায়ী কর্ম ক্ষেত্রে সুবিধা তো দূর জব ই পায় না। রোজ প্রত্রিকার পাতায় চাকুরির বিজ্ঞাপন দেখে জবের এপ্লাই করা ছেলেগুলো জানেই না সে যে জবের জন্য এপ্লাই করছে তা আগে থেকে প্রভাবশালী কোন পরিবারের নিকট আত্তীয়র নামে বরাদ্দ করা হয়ে গেছে সার্কুলার দেওয়ার আগেই। হয়ত বলবেন জব কে পাবে তা যদি আগে থেকেই ঠিক করা থাকে তবে কেন সার্কুলার দেয়? এর কারন বৈধতা। এর মাধ্যমে তাদের জব গুলোর বৈধতা দেওয়া হয় মাত্র।
কি ভাবছেন? এর মুল ভুক্তভুগী কারা জানেন? যারা কর্মক্ষেত্রে স্বজন প্রিতীর কারনে সুবিধা করতে পারে না তারা হয়ত বা অসুবিধায় পড়ে কিন্তু মুল ইফেক্ট পড়ে জনগনের উপর। ধরুন আপনি ক্রিকেটের কিছুই বোঝেন না, আপনি মামা খালু কিংবা পারিবারিক পরিচিতির কারনে ক্রিকেটার নয় খোদ ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারম্যান হয়ে গেলেন। আপনার দারা কি ক্রিকেট বোর্ড সুস্ট ভাবে পরিচালিত হবে? ধরুন রাজনৈতির কিছুই বোঝেন না। জনগনের সাথে আপনার কোন সংযোগ নাই। কিন্তু আপনি পারিবারিক ক্ষমতার বলে রাজনৈতিক নেতা বনে গেলেন। আপনাকে দিয়ে রাস্টের কি কোন উপকার হবে? মাস্ট বি না। বিষয় টা এমন হবে যে, একটা বাদর কে যদি কোন গাড়ির স্টিয়ারিং ধরে দিয়ে গাড়ি চালাতে দেওয়া হয় ঠিক তেমন। অতীতে কিংবা বর্তমানে এর অনেক উদাহরণ ই পাবেন হয়ত দেশ বিদেশে।
একটি সমিক্ষায় দেখা গেছে, কোন গুরুত্বপূর্ণ পোস্টে যদি কোন অযোগ্য ব্যাক্তিকে বসানো হয়। সেই লোক মেন্টালী নিজের ভিতর ভয়ে থাকে। তাই সে তার চার পাশে চাটুকার চ্যালাদের যারা তার মত অযোগ্য তাদের নিয়ে ভির জমায়। এতে একটা প্রতিষ্টানে কর্মরত দক্ষ লোক জন কে সেই প্রতিষ্ঠান থেকে হয় বিদায় নিতে হয় নয়ত সেই চাটুকার দলের কথা মত কাজ করতে হয়। ফলাফল বাংলাদেশ বিমানের টিকিট পাবেন না, সব সিট বুক থাকে তার পরেও বছরের পর বছর লস খাবার জন্য বিমান কে সরকারের ভর্তুকি দিতে হয়। ট্রেনে উঠতেই পারবেন না এত লোক ট্রেনে যাতায়াত করে, আর তারা টিকিট কেটেই ওঠে। কিন্তু বছরের পর বছর লস দিয়ে যাচ্ছে। শুধু বাংলাদেশ নয় আমাদের উপমহাদেশের প্রায় প্রতিটি দেশে একি চিত্র দেখতে পাওয়া যায়। আর এর মুল কারন হল স্বজন প্রিতি বা নেপোটিজম।
©