ঘুম হলো গভীর বিশ্রাম দশা যেখানে শরীর ও মন কার্যত নিষ্ক্রিয় থাকে। পারিপার্শ্বিক অবস্থার সাপেক্ষে মস্তিষ্ককে অকার্যকর মনে হলেও ঘুমের সময় সে নিজেকে গুছিয়ে নেয়। প্রতিদিন প্রচুর স্মৃতি মস্তিষ্কে জমা হয় যার মধ্যে রয়েছে প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয় কিংবা ক্ষণস্থায়ী ও দীর্ঘস্থায়ী। এই স্মৃতিগুলোকে বিন্যাস্ত করা ও যাচাই-বাছাইয়ের প্রয়োজন পড়ে।
শরীরের অভ্যন্তরে প্রচুর জৈবরাসায়নিক বিক্রিয়া চলে প্রতিনিয়ত। রোগবালাইয়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হয়, সারাদিন কাজ করে চলা স্নায়ু কোষেরও বিশ্রামের প্রয়োজন পড়ে। উপরোক্ত কার্যক্রম তখনই ভালো ভাবে ঘটতে পারে যখন আমরা শরীরকে পুরোপুরি বিশ্রাম দেই। আর সে জন্যেই আমরা ঘুমিয়ে থাকি।
পিঁপড়া কি ঘুমায়? প্রথমেই পিঁপড়ার চোখ নিয়ে দুটা কথা। এদের দুইটি পুঞ্জাক্ষি ও তিনটি সরলাক্ষি বিদ্যমান। আর এই দুই ধরনের চোখের কোনটিতেই চোখের পাতা নেই। ঘুম মানেই চোখ বন্ধ করে পড়ে থাকা নয়। আমাদের না হয় চোখের পাতা আছে বন্ধ করে ফেলি। যাদের চোখের পাতা নেই তারা কি তাহলে ঘুমাবে না? পিঁপড়াও ঘুমায় তবে তাদের সে ঘুম হুবহু আমাদের মতো নয়। এখানে ঘুম বিষয়টিকে আমরা গভীর বিশ্রামের সাথে তুলনা করতে পারি। পিঁপড়ার ঘুম নিয়ে কিন্তু গবেষণা পর্যন্ত হয়ে গেছে।
পিঁপড়া গর্তে থাকে। তো উনাদের ঘুমে দিন-রাত খুব একটা প্রভাব ফেলতে পারবে বলে মনে হয়না। রানী পিঁপড়াকে কেন্দ্র করেই কলোনি গড়ে ওঠে। ঘুমের ক্ষেত্রে রানী আর কর্মী পিঁপড়ার মধ্যে বিস্তর পার্থক্য লক্ষণীয়। পিঁপড়ার গভীর বিশ্রাম দশায় যাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেন এবং এই বিশ্রামদশা ২৪ ঘণ্টায় অনেকগুলো ক্রমে ঘটার বিবরণ পাওয়া যায়। কিছু পিঁপড়া যখন বিশ্রাম নিতে থাকে তখন অন্য পিঁপড়া তাদের বাসস্থানের দেখভালের পুরো দায়িত্ব পালন করে। আর বিশ্রাম চলা কালে পিঁপড়ার ম্যান্ডিবল ও অ্যান্টেনার সঞ্চালন বেশ কমে যায় স্বাভাবিকের তুলনায়। তাই এই দশাকে গভীর বিশ্রাম দশা নাম দেন।
পিঁপড়ার গভীর বিশ্রাম দশাই যে প্রচলিত অর্থে ঘুম তা জানিয়ে দেন। মানুষ যেমন একবারে ৮/৯ ঘণ্টা ঘুমিয়ে থাকে, পিঁপড়া ঠিক এমনভাবে ঘুমায় না। ওদের ঘুম ছোট ছোট পর্বে বিভক্ত। কর্মী পিঁপড়া ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ২৫০ বারের মতো ঘুমায়। আর প্রতিবার তারা মাত্র ১ মিনিটেরও কম সময় ঘুমিয়ে থাকে। সবমিলিয়ে ২৪ ঘণ্টায় একটি কর্মী পিঁপড়া সাড়ে চার ঘণ্টার মতো ঘুমাতে পারে। তারা কখনোই একসাথে সবাই ঘুমায় না, অন্তত ৮০% জেগে থাকে। কিছু পিঁপড়া যখন বিশ্রামে যায় তখন পর্যাপ্ত সংখ্যক পিঁপড়া জেগে থাকে প্রতিরক্ষা কিংবা কাজের তাগিদে।
অন্যদিকে, রানী পিঁপড়া একটু অলস বলা যায়। যদিও সে ২৪ ঘণ্টায় ৯০ বারের মতো ঘুমায়, কিন্তু প্রতিবারে প্রায় ৬ মিনিটের মতো সময় নেয়। সবমিলিয়ে রানী পিঁপড়া ৯ ঘণ্টার মতো ঘুমায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে। তাহলে দেখা গেল রানী পিঁপড়া আমাদের সমপরিমাণ ঘুম দিলেও একটানা নয়। মজার বিষয় হলো একটি কলোনিতে একাধিক রানী পিঁপড়া থাকলে তারা ঘুমানোর সময় একসাথেই ঘুমায়, একরকম জড়াজড়ি করে। কিন্তু ঘুম থেকে জেগে ওঠার পর তারা আলাদা হয়ে পড়ে।
রানী পিঁপড়া মাঝে মাঝে মুখ খুলে অ্যান্টেনা একটু পাশের দিকে রেখে ঘুমায়। আবার অনেক সময় মুখ বন্ধ করে অ্যান্টেনা খাঁড়া রেখে ঘুমায়, আর এটিই এদের গভীর বিশ্রাম দশা। সদ্য জেগে ওঠা থেকে ওঠা পিঁপড়া কিছু সময় ঢুলুঢুলু ভাবে চলাফেরা করে, এটা কিন্তু আমাদের সাথে বেশ মিলে যায়।
মস্তিষ্ক থাকলে ঘুমের দরকার পড়বেই বলা চলে। সেই ঘুমের প্যাটার্ন একেক প্রাণীর একেক রকম। আর্থ্রোপোডা পর্বের প্রাণী যারা কিনা পতঙ্গ নামে পরিচিত, এদের চোখের পাতা নেই। অন্যদিকে বেশ উন্নত প্রাণী মাছেরও চোখের পাতা নেই। তাই ঘুম বলতে প্রচলিত অর্থে আমরা যেমনটি দেখে থাকি তেমনটা এসব প্রাণীদের ক্ষেত্রে দেখা যাবে না।
[লেখক : আরিফুল ইসলাম]