আজকের তথ্যপ্রযুক্তির জামানায় আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (কৃত্রিম বুদ্ধি) সম্পন্ন হেল্পার বা স্মার্ট সহায়ক। শারীরিক অস্তিত্বহীন এই অ্যাসিস্ট্যান্ট শুধু গ্রাহকের কমান্ড মেনে কাজই করে না, আগে থেকে বলে রাখা হুইপ যথাসময়ে সঠিকভাবে করে রাখে। আবার সেই কাজ সুসম্পন্ন হয়ে গেলে অতীতের করে আসা কাজ সম্পর্কিত কিছু করতে হবে না কি না তাও প্রভুকে জিজ্ঞাসা করে নেয়। অর্থাৎ, গ্রাহকের সেবায় নিবেদিতপ্রাণ। আর এ সবই করে তার নিজের বুদ্ধি বা মেধা খাটিয়ে। নিউরোন বা স্নায়ু দ্বারা গঠিত কোনো রক্তমাংসের ব্রেন নয়, প্রযুক্তি বা মাইক্রো চিপ দিয়ে তৈরি আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের (এআই) সাহায্যে। বাংলায় কৃত্রিম মেধা। বাংলাদেশে যখন সোফিয়া রোবটের আগমন হয় তখন কমবেশি সবাই এআই-এর নাম শুনেছে।
লেখা শুরুর উপরের তিনটি নাম শুধুমাত্র গুগল, অ্যামাজন ও অ্যাপলের তৈরি অ্যাসিস্ট্যান্টের। এআই নিয়ে বিজ্ঞানী, টেকনোক্র্যাটদের উন্নতর গবেষণা এবং সাফল্য সেই প্রযুক্তিকে আমাদের বর্তমান জীবনের সঙ্গে এক সারিতে জুড়ে দিয়েছে। বিশেষ করে আজকের ইন্টারনেট-টেলিফোনির যুগে। ইন্টারনেট প্রজন্মের (থ্রি-জি, ফোর-জি, ফাইভ-জি) উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে সেই এআই নির্ভর প্রযুক্তির ব্যবহার ও কার্যকারিতা বেড়ে চলেছে। সে ইন্টারনেট সার্চ থেকে মোবাইলে অ্যালার্ম দেয়াই হোক, বা টেক্সট ট্রান্সলেট (এক ভাষা থেকে আরেক ভাষায় অনুবাদ) থেকে সংবাদ পরিবেশন এবং সর্বোপরি রাস্তার সিগন্যালে ট্র্যাফিক পরিষেবা বা সীমান্তে পাহাড়া।
আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স কী : প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যমে মেশিনকে বুদ্ধিমান করে তোলাই হলো আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম মেধা। এটি হলো এক ধরনের সফটওয়্যার টেকনোলজি, যা রোবট বা কম্পিউটারকে মানুষের মতো কাজ করায় এবং ভাবায়। যেমন, কারো কথা বুঝতে পারা, সিদ্ধান্ত নেয়া, দেখে চিনতে পারা ইত্যাদি ইত্যাদি। এককথায় মেশিন লার্নিং।
সৃষ্টির ইতিহাস : কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পথচলা শুরু ১৯৪০ সালে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য দ্রুত প্রযুক্তিগত অগ্রগতির প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এই সময় ব্রিটিশ গণিতবিদ অ্যালান টুরিং এবং নিউরোলজিস্ট গ্রে ওয়াল্টার বুদ্ধিমান মেশিন এবং তার বিভিন্ন সম্ভাবনা সম্পর্কে ধারণা দেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসি কোড ভাঙাটা খুবই জরুরি ছিল। কিন্তু পারা যাচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত পারলেন অ্যালান টুরিং। ব্রিটিশ সরকার আইন করে তাদের নাৎসি কোড ভাঙার তথ্য সারা পৃথিবীর কাছে গোপন রাখতে চেয়েছিল।
কিংস কলেজ থেকে গণিতে ফার্স্ট ক্লাস পেয়ে অনার্সে উত্তীর্ণ হন টুরিং এবং ফেলোশিপ পান। তিনি মনে করতেন, যেকোনো গণনাযোগ্য গাণিতিক সমস্যাই সমাধানযোগ্য। যদি তা এলগরিদমে দেয়া হয়। এই সমাধানের জন্য ‘ইউনিভার্সাল টুরিং মেশিন’ নামে একটি ‘হাইপোথেটিক্যাল’ যন্ত্র তৈরি করেন টুরিং। এই মেশিনের আধুনিক রূপই হচ্ছে আজকের কম্পিউটার। প্রিন্সটন থেকে পিএইচডি করার সময় টুরিং ‘ক্রিপ্টোলজি’ নিয়েও পড়াশোনা করেন।
টুরিং তখন ব্রিটিশ কোড ব্রেকিং সংস্থায় কাজ করছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সে সময় ধ্বংসাত্মক আকার নিয়েছে। আক্রান্ত পোল্যান্ড তখন বাধ্য হয়েই সাহায্যের আশায় উদ্ধার করা জার্মান এনিগমার তথ্যাবলি ব্রিটিশদের সরবরাহ করে। এনিগমা হলো একটি গোপন বার্তা প্রেরণকারী যন্ত্র। যার মাধ্যমে জার্মানরা রেডিও সঙ্কেত দিয়ে দুর্বোধ্য কোডে সৈন্যদের কাছে আক্রমণের নির্দেশিকা পাঠাত। কোডগুলি মিত্রবাহিনী পেলেও তা ভাঙতে পারছিল না ব্রিটিশরা।
এনিগমার গোপন বার্তা উদ্ধারকাজে তখন ক্রিপ্টো বিশেষজ্ঞ টুরিংকে কোড ব্রেকিং কার্যালয়ে ডাকা হলো। এনিগমার কোড ভাঙার জন্য যে ইলেক্ট্রো-মেকানিক্যাল যন্ত্রের প্রয়োজন ছিল, সেটা ‘বোম্বা’ নামের যন্ত্রটি পোলিশদের কাছ থেকেই পাওয়া। টুরিং ভাবলেন, ‘মানুষের দ্বারা এনিগমাকে হারিয়ে দেয়া সম্ভব নয়। বরং একটি যন্ত্রের পক্ষেই সেটি সম্ভব। টুরিং ও গর্ডন ওয়েলচের যৌথ চেষ্টায় ‘বোম্বা’কে ভিত্তি করে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক যন্ত্র তৈরি হলো। নাম ‘বোম্বে’। এনিগমার সব কোডের ভেতর পরিচিত শব্দ খোঁজার চেষ্টা করত ‘বোম্বে’। এভাবেই জার্মান এনিগমার গোপন তথ্য উদ্ধার করে ক্রিপ্টোগ্রাফি জগতের ভিত নাড়িয়ে দিয়েছিলেন টুরিং। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে ‘বোম্বে’ একে একে জার্মান সেনাবাহিনীর সব এনক্রিপ্টেড তথ্য ভাঙতে শুরু করে। আটলান্টিকে নাৎসিদের হেরে যাওয়ার ঘটনাটিও ঘটে বোম্বের অভাবনীয় সাফল্যের কারণেই।
১৯৪৮ সালের দিকে ‘টুরিং টেস্ট ও যন্ত্রের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা’ নিয়ে কাজ শুরু করেন টুরিং। এই টেস্টের মূল উদ্দেশ্য ছিল অনুলিপিকরণ পরীক্ষা। অর্থাৎ ‘ইমিটেশন গেম’। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় পাশাপাশি দুটি রুমের কথা। একটিতে একজন মানুষ, আরেকটিতে রয়েছে একটি যন্ত্র। ঠিক করা হয়, বৌদ্ধিক বিভিন্ন প্রশ্ন লিখে পাঠালে এর জবাব ওই দুই রুম থেকেই লিখিতভাবে আসবে। কোনো শব্দ বা কণ্ঠের ব্যবহার করা যাবে না। যন্ত্রটির উত্তর মানুষের কাছাকাছি হলেই বুঝতে হবে তার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আছে।
আমরা প্রতিনিয়তই এই টুরিং টেস্টের মুখোমুখি হচ্ছি। যেমন ক্যাপচা রিকগনিশন করার সময় আমরা রোবট না মানুষ, তার পরীক্ষা হয় এ টুরিং টেস্টের মাধ্যমেই। যন্ত্র বা রোবট ক্যাপচার অক্ষরের ক্যাপিটাল বা স্মল লেটার যাচাই করতে পারে না। একটি যন্ত্র বিভিন্ন ‘ট্রিকি’ প্রশ্নের, অর্থাৎ যেখানে বুদ্ধিমত্তার প্রয়োজন পড়ে, সেসব উত্তরগুলো দিতে পারে না। কোনো যন্ত্র কী চিন্তা করতে পারে? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজাই ছিল এ টেস্টের মূল উদ্দেশ্য। একটি যন্ত্র বা রোবট কখনোই তার সঠিক অনুভূতির উত্তর লিখতে পারবে না। এর মাধ্যমেই মানুষ থেকে যন্ত্রের পার্থক্য করা সম্ভব। টুরিং টেস্ট সে হিসেবে আজও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন কোনো যন্ত্র পায়নি।
এরপর সময়ের বিবর্তনের সঙ্গে মার্কিন কম্পিউটার ও কগনিটিভ বিজ্ঞানী জন ম্যাকার্থি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শব্দটি ব্যবহার করেন। এমনকী, এআই প্রযুক্তির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তিনিই। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির দুনিয়ায় আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স আজ ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। ইন্টারনেট নির্ভর স্মার্ট ডিভাইসগুলোতে এআইয়ের ব্যবহার রমরমা।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে মোটামুটি তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়
১. উইক এআই (Narrow AI) : এই ইন্টেলিজেন্স শুধুমাত্র নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর কাজ করতে পারে। বর্তমানে আমরা এই ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করছি।
২. স্ট্রং এআই (Artificial General Intelligence) : মেশিন বা কম্পিউটার যখন মানুষের মতো কাজ করতে পারবে তখন তাকে বলা হবে স্ট্রং এআই।
৩. সিঙ্গুলারিটি (Super Intelligence) : এটা হলো এমন একটা ইন্টেলিজেন্স যা কিনা সবচেয়ে প্রতিভাধর মানুষের ক্ষমতাকেও অতিক্রম করবে।
বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, কৃত্রিম মেধার সুবাদে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মানুষের থেকে ভালো পরিষেবা দিতে পারবে যন্ত্র। মানুষের অনেক কাজ করবে তারা। আজকের প্রজন্ম তাদের স্মার্ট ফোনে এআই প্রযুক্তি নির্ভর গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট বা সিরি-কে ব্যবহার করছে। চ্যাটিং করতে হলে আর কষ্ট করে টাইপ করতে হচ্ছে না। মুখে বলে দিলেই অ্যাসিস্ট্যান্ট তা লেখায় রূপ দিয়ে দিচ্ছে। তা ইংরেজি, ফারসি বা বাংলা যে ভাষাতেই হোক না কেন। বন্ধুর নাম বলে ফোন করো বলতেই, তার সঙ্গে ফোন কানেক্ট করে দিচ্ছে। অ্যালেক্সা একটি গান শোনাও বললে সে জিজ্ঞাসা করছে কোন গান, কী গান, কার গাওয়া ইত্যাদি। তাই বলে শুধু স্মার্ট ফোনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই এআইয়ের দাপট।
কোথায় কাজ করছে কৃত্রিম মেধা : এআই প্রযুক্তির ব্যবহার হওয়া ক্ষেত্রগুলো হলো —
স্মার্ট গাড়ি ও ড্রোন : স্বয়ংক্রিয় তথা চালকহীন গাড়ির স্বপ্নকে বাস্তবের রূপ দিয়েছে এআই। সেক্ষেত্রে নজির তৈরি করেছে মার্কিন গাড়ি প্রস্তুতকারক সংস্থা টেসলা। এআই নির্ভর এই গাড়ি বুঝতে পারে কী করে, কখন ব্রেক মারতে হয়, কীভাবে বদলাতে হয় রাস্তার লেন এবং কীভাবে দুর্ঘটনা এড়াতে হয়। এছাড়া নিজের বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে এই গাড়ি ঘুরতে এবং ম্যাপ ব্যবহারও করতে পারে। বর্তমানে আমেরিকাতে ৫০ হাজারেরও বেশি টেসলার এই গাড়ি চলছে। আবার অ্যামাজন ও ওয়ালমার্টের মতো বহুজাতিক সংস্থা তাদের পণ্য গ্রাহকের কাছে দ্রুত পৌঁছে দেয়ার কাজে ড্রোন ব্যবহার করছে। একইভাবে মাল পরিবহণের জন্য ব্রিটেনে স্বয়ংক্রিয় ট্রাক পরিষেবার কাজ শুরু করেছে ব্রিটেনের ডিপার্টমেন্ট ফর ট্রান্সপোর্ট (ডিএফটি)।
সোশ্যাল মিডিয়ায় আপডেট : আমরা ফেসবুক, ট্যুইটার, ইনস্টাগ্রাম বা শেয়ার চ্যাটের মতো সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করলেও বুঝতে পারি না কীভাবে একের পর এক আপডেট আমাদের কাছে আসছে! তা সে পরিচিত ব্যক্তিকে খোঁজাই হোক বা ফ্রেন্ডস সাজেশান। একটা কিছু লাইক, শেয়ার করলেই সেই সম্পর্কিত আরেকটা নিমেষে হাজির হয়ে যায়। সবকিছুই গ্রাহকের অচিরে হচ্ছে কৃত্রিম মেধার দৌলতে। আমাদের পছন্দ-অপছন্দ, চাহিদা, মেলামেশা ইত্যাদি বুঝে ‘কাস্টমাইজড’ (ব্যক্তি বিশেষের জন্য নির্দিষ্ট) আপডেট পাঠাতে থাকে এআই প্রযুক্তি।
মিউজিক ও মিডিয়া : কেউ যখন স্পটিফাই, নেটফ্লিক্স বা ইউ টিউব ব্যবহার করে, গ্রাহকের জন্য পুরো সিদ্ধান্তই নেয় এআই। একজন যদি মনে করে সে বিষয়টিকে নিয়ন্ত্রণ করছে বা তার নিয়ন্ত্রণে পুরো মিডিয়া চলছে, তা একেবারে ভুল। কারণ, একটি গান শুনতে শুনতে বা একজন শিল্পীকে খোঁজার সময় ‘রিলেটেড’ বা ‘সাজেস্টেড’ গান বা শিল্পী চলে আসে। একইভাবে আজকের জনপ্রিয় পাবজি, সিএস গো বা ফোর্টনাইট-এর মতো উন্নত ভিডিও গেমে এআই ব্যবহার সফল।
অনলাইন বিজ্ঞাপন : এআই প্রযুক্তির একটা বড় গ্রাহক হল অনলাইন বিজ্ঞাপন সেক্টর। এ ক্ষেত্রে এআই শুধু ইন্টারনেট সার্চকারী ব্যক্তিদের উপর নজর রেখে তথ্য তল্লাশি করে তাই নয়, গ্রাহকদের পছন্দ-অপছন্দ বিচার করে সেইমতো তাঁদের সামনে বিজ্ঞাপন হাজির করে। ফলে বিশ্বব্যাপী অনলাইন বিজ্ঞাপনের ব্যবসা ২৫ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছে।
নেভিগেশন এবং ট্রাভেল : ম্যাপের পুরোটাই এআই প্রযুক্তিচালিত। যখন গুগল, অ্যাপেল বা অন্য সংস্থার ম্যাপ ব্যবহার করে আমরা ক্যাব বুকিং করি, তখন এআই বিভিন্ন জায়গা থেকে তথ্য সংগ্রহ করে রাস্তার সেই সময়ের যানজট বা ভাড়া সম্পর্কে আমাদের জানায়।
ব্যাঙ্ক পরিষেবা : বর্তমানে ব্যাঙ্কিং পরিষেবার একটা বড় অংশ কৃত্রিম মেধা। কোনো একটা লেনদেন করলে আমরা তৎক্ষণাৎ যে এসএমএস বা ইমেল অ্যালার্ট পাই, তা চালনা কার এই এআই প্রযুক্তি। এইভাবে প্রতিটি গ্রাহকের লেনদেন, লগ্নি, প্রতারণা রোধে নীরবে কাজ করছে এআই।
স্মার্ট হোম ডিভাইস : নিত্যদিনের ব্যবহার্য স্মার্ট হোম ডিভাইস বা যন্ত্রগুলোতে ব্যাপকভবে ব্যবহার হচ্ছে এআই। আমাদের ব্যবহার, পছন্দ-অপছন্দ বুঝে সেই প্রযুক্তি নিজেই সংশ্লিষ্ট যন্ত্রের সেটিংস পরিবর্তন করছে এবং গ্রাহকদের নিরবিচ্ছিন্ন সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে আগেই গুগলের ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট, স্মার্ট টিভি, স্মার্ট রেফ্রিজেরাটর, স্মার্ট এসি, স্মার্ট মাইক্রোওয়েভের কথা উল্লেখ করা যায়।
নিরাপত্তা ও নজরদারি : এই মুহূর্তে সবথেকে বেশি কৃত্রিম মেধা ব্যবহার হচ্ছে এক্ষেত্রে। ড্রোন তো ছেড়েই দেওয়া যাক। নজরদারির কাজে বিভিন্ন পয়েন্টে লাগানো হাজার হাজার ক্যামেরা থেকে লক্ষ লক্ষ তথ্য একটা নির্দিষ্ট সময়ে বিশ্লেষণ করা এআই ছাড়া মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। এআই নির্ভর অবজেক্ট রিকগনিশন বা ফেস রিকগনিশনের মতো প্রযুক্তি প্রতিদিন উন্নত হচ্ছে।
বিজনেস ম্যানেজমেন্ট : আজকের জনপ্রিয় অনলাইনে কেনাকাটা বা ই-কমার্সে ব্যবহার হচ্ছে এআই। যার জেরে গ্রাহক ঠিক কী চইছে সেই পণ্য দ্রুত খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। একঝাঁক পণ্য বা পরিষেবার মধ্যে থেকে বেছে বেছে গ্রাহকের সামনে তুলে ধরা। আমাদের পছন্দ-অপছন্দ, চাহিদা, মেলামেশা ইত্যাদি বুঝে ‘কাস্টমাইজড’ (ব্যক্তি বিশেষের জন্য নির্দিষ্ট) আপডেট পাঠাতে থাকে এআই প্রযুক্তি।
বিতর্ক যেখানে : এত সুবিধার পরও এআই নিয়ে বিশ্বজোড়া বিতর্ক একটাই — আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ফলে বিভিন্ন সংস্থায় মানুষের কর্মসংস্থান কমে যাবে না তো? একটি সমীক্ষা অনুযায়ী আইটি বা তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার ২০ থেকে ৩৫ শতাংশ চাকরি সঙ্কটে। ম্যাককিন্সলে গ্লোবাল ইন্সস্টিটিউট তার সমীক্ষায় জানিয়েছে, অটোমেশন (আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স+মেশিন) বা স্বয়ংক্রিয়তার ফলে ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী ৪০-৮০ কোটি মানুষ চাকরি হারাবে। এবং প্রায় ৩০ কোটি ৭৫ লাখ মানুষকে বেছে নিতে হবে অন্যকাজ। একইভাবে ন’য়ের দশকের গোড়ার দিকে কম্পিউটার আগমনের সময় কাজ হারানোর ভয়ে মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছিল ‘কম্পিউটারফোবিয়া’।
যদিও, এই ভয় ও উদ্বেগের মধ্যে সব ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, প্রযুক্তির বদল যত না কর্মসংস্থান নষ্ট করেছে, তার থেকে বেশি চাকরি সৃষ্টি করেছে। কারণ, স্বয়ংক্রিয়তার ফলে যখন একটি নির্দিষ্ট কাজ দ্রুত, সহজ ও সস্তা হয়ে যায়, তখন সেই কাজের বাকি দিকগুলো সম্পন্ন করতে প্রয়োজন হয়ে পড়ে আরো বেশি মানবসম্পদের।
সে কারণেই আরেক অংশের মতে, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ফলে তৈরি হবে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ নতুন নতুন চাকরি। নিম্ন বা মধ্য দক্ষতার মতো ‘ব্লু বা হোয়াইট কলার জব’ শেষ হয়ে যাবে। তৈরি হবে উচ্চ দক্ষতার চাকরি। যার জন্য দরকার হবে উন্নততর প্রশিক্ষণ। ফলে, প্রোগ্রামিং, রোবোটিং, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মতো চাকরির ক্ষেত্র তৈরি হবে। সবাই যে চাকরি হারাবে তা নয়, বর্তমান কর্মীদের জন্য উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা তৈরি হচ্ছে।
সংকলিত