মৃত্যু নিয়ে মানুষের মাঝে প্রচলিত আছে নানা কুসংস্কার ও গুজব। এর মধ্যে একটি হচ্ছে "মৃত্যুর পর মানুষের নখ ও চুল বৃদ্ধি পায়৷" এটি আসলে ভুল তথ্য।
মৃত্যুর পর মানুষের দেহের একেকটি কোষ একেক সময়ে মারা যায়। হৃদস্পন্দন বন্ধের পর মস্তিষ্কে অক্সিজেন পরিবহন ধীরে ধীরে কমে আসে। গ্লুকোজের অভাবে স্নায়ুকোষ ৩ থেকে ৭ মিনিটের মধ্যে মারা যায়। মানুষের নখ প্রতিদিন গড়ে ০.১ মিমি করে বৃদ্ধি পায়। নখের গোড়ায় থাকে এক প্রকার টিস্যু, একে বলা হয় জার্মিনাল ম্যাট্রিক্স। গোড়ার দিকেই এই টিস্যু ক্রমাগত বিভাজনের জন্য মানুষের নখের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পায়। মৃত্যুর পর মানুষের নখ বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন নতুন কোষ, গ্লুকোজ ছাড়া নতুন কোষ উৎপন্ন হওয়া সম্ভব নয়। তাই মৃত্যুর পর নখের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়।
মাথার চুলের ক্ষেত্রেও প্রায় একই ঘটনা ঘটে। মানুষের প্রতিটি চুলের গোড়ায় থাকে হেয়ার ফলিকল। ফলিকলের ভিত্তি হিসেবে থাকে হেয়ার ম্যাট্রিক্স বা কতগুলো কোষের সমষ্টি যাদের ক্রমাগত বিভাজনের ফলে চুল বৃদ্ধি পায়। এই কোষগুলো বিভাজনের জন্য প্রয়োজন শক্তির যা গ্লুকোজ থেকে উৎপন্ন হয়। আর গ্লুকোজের জন্য প্রয়োজন হয় অক্সিজেন। কিন্তু মৃত্যুর পর মানুষের হৃদস্পন্দন থেমে যায় এবং শরীরে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে কোষের অক্সিজেন এর অভাবে গ্লুকোজ ও শক্তি কোনোটিই উৎপন্ন হয়না। তাই মৃত্যুর পর চুলের বৃদ্ধিও নখের মতো বন্ধ হয়ে যায়।
কিন্তু মৃত্যুর পরও অনেক সময় দেখা যায় চুল ও নখ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর কারণ হচ্ছে মানুষ মারা যাওয়ার পর দেহের চামড়া ডিহাইড্রেট হওয়া শুরু হয়। দেহের আদ্রতা হারানোর ফলে নখের চারপাশের চামড়া ভিতরের দিকে গুটিয়ে যেতে থাকে। এর ফলে নখের আকার আগের চেয়ে বড় দেখায়। ঠিক একইভাবে আদ্রতার অভাবে মুখ ও মাথার চামড়া হাড়ের দিকে গুটিয়ে যাওয়ায় চুলের দৈর্ঘ্য বেশি মনে হয়।
ক্রেডিট: সায়েন্স বী