নাহিদা আফরিন
আজ পর্যন্ত পৃথিবীর সব থেকে গভীর গর্তের কথা যদি বলা হয় তবে সেটা হল কোলা সুপারডিপ বোরহোল যা বর্তমান রাশিয়াতে অবস্থিত, এটি মানুষের তৈরি একটি কৃত্রিম গর্ত। যেটা প্রায় 12 কিলোমিটার গভীর এবং এটিই হলো আজ পর্যন্ত মানুষের আবিষ্কার করা পৃথিবীর সবথেকে গভীর অংশ। এটি সমুদ্রের সবথেকে সবথেকে গভীর অংশের থেকেও বেশি গভীর এবং পৃথিবীর গভীরতম অংশের প্রতিযোগিতায় সবথেকে এগিয়ে । বাস্তব কথা হল যে আজ পর্যন্ত পৃথিবীতে কোনো মানুষই 12 কিলোমিটার (12,289 মিটার) থেকে গভীরে যেতে পারেনি।
1994 সালে এই গর্তের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। আর বৈজ্ঞানিকরা এই প্রজেক্ট বন্ধ করার নানা কারণ দেখিয়ে ছিল, সবথেকে প্রধান কারণ যেটা জনসাধারণকে বলা হয়েছিল, সেটা হলো যে তারা ভূগর্ভের এতটা নীচে পৌঁছে গেছে যেখানে উষ্ণতা প্রায় ১৮০ ডিগ্রী সেলসিয়াস যা প্রত্যাশিত উষ্ণতা থেকে অনেক বেশি।
গর্ত করার শুরুতে বৈজ্ঞানিকরা প্রায় ১৫ কিলোমিটার গর্ত করার উদ্দেশ্য নিয়ে হিসাব করেছিল, তাদের অনুমান ছিল যে পৃথিবীর অভ্যন্তরের এই অংশের উষ্ণতা 100 ডিগ্রী সেলসিয়াসের কাছাকাছি হবে। কিন্তু তাদের হিসাব ভুল প্রমাণিত হলো, ঠিক এই কারণের জন্যই তাদের মনে হলো যে এর বেশি গর্ত করাটা ঠিক হবে না। আর তাছাড়া তারা গর্তটি যত বেশি খুঁড়ছিল পাথরের ঘনত্ব ততই বাড়ছিলো তাই আরো বেশি খুঁড়তে বৈজ্ঞানিকদের অতিরিক্ত শক্তির প্রয়োজন হচ্ছিল যা সহজ লভ্য ছিল না তাই তারা 1994 সালে এই প্রজেক্ট বন্ধ করে দেয়।
তবে জনশ্রুতি আছে যে এই প্রজেক্টটি বন্ধ করে দেওয়ার পেছনে এই কারণগুলোই একমাত্র কারণ ছিল না এর পেছনে আরও কিছু কারণ ছিল। কিছু মানুষ মনে করে বৈজ্ঞানিকরা এই জন্য এই প্রোজেক্টটিকে বন্ধ করে দিয়েছিল কারন বৈজ্ঞানিকরা ভয় পেয়ে গিয়েছিলো তাদের মনে হয়েছিল যে তারা হয়তো নরকের দরজা খুলে দেবে। আজকের এই বৈজ্ঞানিক যুক্তি ও তর্কের যুগে কথাটা বিশ্বাস করা সত্যিই খুব কঠিন কিন্তু অনেকের বক্তব্য ছিল যে বৈজ্ঞানিকরা এই গর্ত থেকে মানুষের চিৎকার ও আর্তনাদ শুনতে পেয়েছিল যা আসলে নরকের বন্দী মানুষের আর্তনাদ।
অনেক গবেষক এটা দাবি করেছিল এগুলো আত্মার আওয়াজ ছিল যারা নরকে বসবাস করত, এটা সত্যিই অবিশ্বাস্য। কিন্তু পৃথিবীর ভুপৃষ্ঠের এত নীচের থেকে মানুষের আওয়াজ এর কারণ কি হতে পারে। এর কোন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা এখনো পর্যন্ত কেউ দিতে পারেনি। অনেকে দাবি করেন যে এই রহস্যময়ী কারনের জন্যই এই প্রিজেক্টি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।যার অর্থ হলো যে রিসার্চারা সাধারণ মানুষের কাছে লুকোতে চান এই প্রোজেক্ট বন্ধের আসল কারন।
বর্তমানে এই জায়গাটিকে পুরোপুরি ভাবে সিল করে দেওয়া হয়েছে। এটি এমন ভাবে বন্ধ করা হয়েছে যে পৃথিবীর কেউ এই প্রজেক্টটিকে দেখতে যেতে পারবে না। গর্তটিকে এমন ভাবে সিল করে দেওয়া হয়েছে যে কেউ যেন খুলতে না পারে বা এই প্রজেক্টটিকে পুনরায় শুরু করতে না পারে। প্রশ্ন হলো এতো সুরক্ষিত ভাবে এটিকে কেন বন্ধ করে দেওয়া হলো ? তাহলে কি আত্মার কারণটাই সত্য ?
আবার অনেকেই দাবি করেন যে রকম কিছু নেই এই গর্ত সম্বন্ধে যত কাহিনী বা তথ্য রয়েছে সেগুলো সব ভুঁয়ো বা মিথ্যে। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ এটাই বিশ্বাস করে যে এই গর্তের নিচে নরক রয়েছে। তবে এই জায়গার রহস্য আজ পর্যন্ত কেউ সমাধান করতে পারেনি।