ঋণাত্মক পূর্ণসংখ্যার লসাগু এবং গসাগু
কদিন আগে ইনবক্সে একজন প্রশ্ন করেছিল ‘দুটো ঋণাত্মক পূর্ণসংখ্যার লসাগু গসাগু কেমন হবে’ এই ব্যাপারটা নিয়ে। আরেকজন প্রশ্ন করেছে একটা সংখ্যা শূন্য হলে গসাগু কেমন হবে? এটা নিয়ে ছেলেবেলায় আমার নিজেরও দ্বিধা ছিল, এখন নেই। তাই ভাবলাম এখানে স্ট্যাটাস আকারে দিয়ে দিই। যারা জানতে চাও, জেনে নিয়ো, আর পারলে অন্যদের জানিয়ে দিয়ো।
ধরো, তোমায় কেউ জিজ্ঞেস করলো ১২ এবং -১৬ এর লসাগু বা গসাগু কত? ১৬ এর আগের ঋণাত্মক চিহ্ন দেখে মোটেই ঘাবড়ে যাবে না। জেনে রেখো, লসাগু বা গসাগু এমনভাবে সংজ্ঞায়িত যে, এরা কখনো ঋণাত্মক হয় না। ঋণাত্মক চিহ্নটা বাদ দিয়ে চিন্তা করলেই চলবে। মানে হলো ১২ আর ১৬ এর গসাগু যা, ১২ আর -১৬ এর গসাগুও তাই, -১২ আর ১৬ এর গসাগুও একই, -১২ আর -১৬ এর গসাগুও ঐ একই। এদের সবারই গসাগু ৪। লসাগুর ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা একইরকম, সবক্ষেত্রেই লসাগু হবে ৪৮। ঋণাত্মক চিহ্ন বাদ দিয়ে ভাবলেই ঝামেলা শেষ। কিন্তু কেন এরকম কেন?
প্রথমে গসাগুর দিকে তাকাই। দেখো, ১২ এর গুণনীয়কগুলো অর্থাৎ যেসব পূর্ণসংখ্যা দিয়ে ১২ নিঃশেষে বিভাজ্য তারা হলো ১,২,৩,৪,৬,১২। যদি ঋণাত্মক সংখ্যাদেরও রাখতে চাও তাহলে বলতে পারো ১২ এর গুণনীয়কগুলো হলো ±১, ±২, ±৩, ±৪, ±৬, ±১২। দেখো -১২ এর গুণনীয়কও কিন্তু এরাই! এভাবে ১৬ বা -১৬ এর গুণনীয়কগুলো হলো ±১, ±২, ±৪, ±৮, ±১৬। দুটোর ভেতরে যারা কমন বা সাধারণ তারা হলো ±১, ±২, ±৪। এদের মধ্যে গরিষ্ঠ বা সবচেয়ে বড় হলো ৪, তাই গরিষ্ঠ সাধারণ গুণনীয়ক হলো ৪। ঋণাত্মক চিহ্ন এখানে কোন ভূমিকা রাখে না।
লসাগুর ক্ষেত্রে সামান্য ঝামেলা আছে, কিন্তু সেটা এড়ানো যায়। আগের মতোই লক্ষ কর, ১২ এর গুণিতক যারা, -১২ এর গুণিতক তারাই। ০, ±১২ , ±২৪, ±৩৬, ±৪৮, ±৬০, ±৭২, ±৯৬ এমন করে অসীম সংখ্যক গুণিতক এদের আছে। অন্যদিকে ১৬ বা -১৬ এর গুণিতক হবে ০, ±১৬, ±৩২, ±৪৮, ±৬৪, ±৮০, ±৯৬ এমন করে অনেকে। তো ১২ আর ১৬ এর গুণিতকদের ভেতরে কমন বা সাধারণ আছে কারা? ০, ±৪৮, ±৯৬ ইত্যাদি। এদের মধ্যে লঘিষ্ট কে? ঋণাত্মককে নিতে গেলে বিপদ, কারণ -৪৮ এর চেয়ে -৯৬ ছোট। আরও পিছনে গেলে -১৪৪ পাওয়া যাবে যা ১৬ এবং ১২ দুইয়েরই গুনিতক। সেটা ৯৬ এর চেয়েও ছোট। আরও বামে গেলে -১৯২ পাওয়া যাবে, সেটা আরও ছোট, এমন করে আরও ছোট সাধারণ গুণিতক আমরা পেতেই থাকব। সব থেকে ছোট যে কোনটা, তার কোন কূল-কিনারা পাওয়া যাবে না। আবার দুটো অশূন্য সংখ্যার লসাগু শূন্য হলে ঝামেলা, তাহলে দুনিয়ার সব লসাগুর মান হবে ০। কারণ শূন্য তো সবার গুণিতক, সব জায়গাতেই থাকবে। তাই লসাগুকে সুসংজ্ঞায়িত করার জন্য, সাধারণ গুণিতকগুলোর ভিতরে সবথেকে ছোট ‘ধনাত্মক’ মানটাকে লসাগু ধরা হবে। যেমন এক্ষেত্রে লসাগু হলো ৪৮।
ব্যতিক্রমঃ যদি দুটো সংখ্যার মধ্যে একটা শূন্য হয়, তখন লসাগু হবে ০। ধরো, এবারে -৬ ও ০ এর লসাগু বের করতে চাই। -৬ এর গুণিতক কারা? ০, ±৬, ±১২, ±২৪ এমন করে অনেকে। আর ০ এর গুণিতক কারা? ০ এর ঘরের নামতা ভাবো। ০ এক্কে ০, ০ দুগুণে ০, ০ তিরিক্কে ০। তার মানে ০ এর গুণিতক আছেই একটা, সেটা হলো ০। তাই ৬ আর ০ এর গুণিতকদের ভিতরে কমন আছে একটা, সেটা হলো ০। এখন কথা হলো পরিবারে একটামাত্র ছেলে থাকলে, সেই পরিবারের সবচেয়ে ‘বড় ছেলে’, সেই সবচেয়ে ছোট। তাই -৬ ও ০ এর লঘিষ্ট সাধারণ গুণিতক হবে ০।
গসাগুর ক্ষেত্রে কী হবে? যদি দুটো সংখ্যার মধ্যে একটা ০ (শূন্য) হয়, তাহলে গসাগু হবে ০ বাদে বাকি সংখ্যাটার পরমমান। এটাও সহজে ভাবা যায়। ধরো, -৬ ও ০ এর গসাগু বের করতে চাই। ৬ বা -৬ এর গুণনীয়ক হলো ±১, ±২, ±৩, ±৬। অন্যদিকে ০ এর গুণনীয়ক তো শূন্য বাদে দুনিয়ার সব পূর্ণসংখ্যা: ±১, ±২, ±৩, ±৪, ±৫, ±৬, ±৭…। এদের ভেতরে কমন বা সাধারণ হলো ±১, ±২, ±৩, ±৬। তাহলে ০ আর -৬ এর সাধারণ গুণনীয়কদের ভেতরে সবচেয়ে বড় বা গরিষ্ঠ সাধারণ গুণনীয়ক হবে ৬। অর্থাৎ মানে ০ বাদে বাকি সংখ্যাটার পরমমান।
দুটো সংখ্যাই যদি শূন্য হয়, লসাগুও ০, গসাগুও ০।