কোনো মানুষেরই সাধারণত নিজের জন্ম নেওয়ার ঘটনা বা ২ বছর বয়সের আগের কোনো স্মৃতি মনে থাকেনা। আবার, ৩ থেকে ৭ বছর বয়সের স্মৃতিও মনে থাকেনা অস্পষ্টভাবে। আজ থেকে প্রায় ১০০ বছর আগে বিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েড শৈশবের স্মৃতি মনে রাখতে না পারার টার্মটির নাম দিয়েছিলেন Infantile Amnesia বা Childhood Amnesia।
একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের মস্তিষ্ক সদ্য জন্ম নেওয়ার শিশুর মস্তিষ্ক থেকে চার গুন বেশি সুগঠিত থাকে। শিশুর মস্তিষ্ক জন্মের পরই সম্পূর্ণভাবে বিকশিত না থাকায় অনেক তথ্যই নিউরাল প্যাটার্ন বা স্মৃতিতে জমা হয়না। শিশুদের স্মৃতিগুলো হলো Explicit ও Implicit ধরনের। শিশুর নিজের সাথে ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনা যদি সজ্ঞানে স্মৃতিতে জমা রাখে তবে তাকে বলে Explicit Memory। অন্যদিকে, শিশু নিজের অবচেতনে কোনো ঘটনা স্মৃতি তে জমা রাখে তবে তাকে বলে Implicit Memory।
মস্তিষ্ক কোনো নির্দিষ্ট ঘটনার তথ্য মনে রাখলে একে বলে Episodic Memory বলে। এপিসোডিক মেমোরি আমাদের মস্তিষ্কের বহিরাবরণ বা কর্টেক্স এর বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে থাকে। মানুষের মস্তিষ্কে হিপোক্যাম্পাস নামক একটি অংশ আছে যা মস্তিষ্কের কর্টেক্সে ছড়িয়ে থাকা এই মেমরিগুলোকে একত্র করে। কিন্তু ৪ বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের এই হিপোক্যাম্পাস অংশ সুগঠিত থাকেনা। যার জন্য তারা নির্দিষ্ট কোনো ঘটনা মনে রাখতে পারেনা। তবে শিশুরা আবেগপূর্ণ স্মৃতিগুলো অন্যান্য স্মৃতির তুলনায় ৩ গুন বেশি মনে রাখতে পারে।
জন্মের পর প্রথম দুই বছর বাচ্চারা কথার অর্থ বুঝার চেষ্টা করে, কথা বলা শিখে যা তাদের Semantic Memory তে জমা থাকে। এ সময় মস্তিষ্ক সিমেন্টিক মেমরি তৈরিতে ব্যস্ত থাকে যার জন্য এপিসোডিক মেমরি কম গঠিত হয়। তাছাড়া, হিপোক্যাম্পাস অংশটি জন্মের পর থেকে পূর্ণবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত নিউরন তৈরি করতে থাকে। এক গবেষণা মতে, একটি শিশুর মস্তিষ্ক প্রতি সেকেন্ডে ৭০০ নতুন স্নায়ু সংযোগ গড়ে তুলে। ক্রমাগত নতুন নিউরন তৈরির ফলে মস্তিষ্ক নতুন নতুন অনেক স্মৃতি ধারণ করে, তাই আমরা শৈশবের স্মৃতি ধীরে ধীরে ভুলে যাই। এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।