নিশাত তাসনিম (সায়েন্স বী)-
মৃত ঘোষণার পরও মানুষের মস্তিষ্ক কয়েক মিনিট সক্রিয় থাকে! বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা কি?
হৃদস্পন্দন বন্ধ হওয়ায় সাথে সাথে যখন মৃতদেহের শরীরে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায় তখনো মস্তিষ্ক সক্রিয় থাকে। বিজ্ঞানীরা ইঁদুরের উপর গবেষণা করে দেখেছেন যে, ইঁদুরের হৃদস্পন্দন বন্ধের ৩০ সেকেন্ড পর মস্তিষ্কের কার্যাবলী স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায়। মানুষের ক্ষেত্রেও ঠিক একই ঘটনা ঘটে। মানুষের হৃদযন্ত্র বন্ধের পর ধীরে ধীরে মস্তিষ্কে অক্সিজেন ও গ্লুকোজ এর সরবরাহ কমে যেতে থাকে। তখন মস্তিষ্ক আরও বেশি সক্রিয় ও সচেতন হয়ে উঠে।
২০১৭ সালে লাইফ সাপোর্টে থাকা চার জন রোগীর উপর একটি গবেষণায় করে লাইফ সাপোর্ট বন্ধের পরও তাদের মস্তিষ্কে সক্রিয়তা দেখা যায়। রোগীদের মৃত্যুর ৩০ মিনিট আগের এবং ৫ মিনিট পরের EEG (Electroencephalogram ) এর মাধ্যমে মস্তিষ্কের বৈদ্যুতিক কার্যাবলী দেখা হয়। চার জনের মাঝে একজন রোগীর মৃত্যুর পরও তার মস্তিষ্ক ১০ মিনিট কার্যকর ছিলো। ডাক্তার রোগীটিকে মৃত ঘোষণার পরও ১০ মিনিট তার মস্তিষ্কে স্নায়বিক তরঙ্গ সৃষ্টি হয় যা অনেকটা ঘুমন্ত অবস্থার মতো। তবে একেকজন মানুষের ক্ষেত্রে মস্তিষ্ক সক্রিয় থাকার সময়কাল একেক রকম। science bee
অর্থাৎ, হৃদস্পন্দন, পরিপাকতন্ত্র, শ্বসনতন্ত্র বন্ধের ১০ মিনিট পরও মানুষের মস্তিষ্ক কাজ করে। মৃত্যুর পরও অক্সিজেন ছাড়া মস্তিষ্কের সেরেব্রাল কর্টেক্স সক্রিয় থাকে যার জন্য মস্তিষ্কে বৈদ্যুতিক তরঙ্গ চলাচল হঠাৎ বেড়ে যায়। হৃদস্পন্দন বন্ধের পরও শরীরের ভিতর কিছু অক্সিজেন অবশিষ্ট থাকে। ধীরে ধীরে মস্তিষ্কে অক্সিজেন প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেলে মস্তিষ্কের কোষগুলো মারা যেতে শুরু করে। কিন্তু তখনও সক্রিয় থাকে মানুষের স্মৃতিকেন্দ্র। স্মৃতিকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত বেঁচে থাকার সময়ের নানা স্মৃতি চোখের সামনে ভেসে উঠে। কিন্তু কেন এমন হয়? এর ব্যাখ্যা এখনো কেউ দিতে পারেননি।
© Nishat Tasnim (Science Bee)