সালটি ছিল ২০১১। সেই বছর মার্চ মাসে ক্রেইগ লুইস (Craig Lewis) নামক একজন ভদ্রলোক জীবনঘাতি "অ্যামাইলয়ডোসিস" (Amyloidosis) নামক একটি রোগে আক্রান্ত হন। অ্যামাইলয়েড (Amyloid) প্রোটিন যখন দেহের কোনো টিস্যু কিংবা অঙ্গে গঠিত হতে থাকে তখন অ্যামাইলয়ডোসিস হয়। রোগটি হলে দেহের বিভিন্ন অঙ্গের আকৃতিতে বিরূপ প্রভাব দেখা দেয়। মূলত এটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা যা দেহের বিভিন্ন অঙ্গকে বিকল করে তুলতে পারে। সেই পাশাপাশি এটি অটোইমিউন রোগও বটে।
মি. ক্রেইগ লুইসের মধ্যে এই রোগটি দেখা যাওয়ার ফলে তাকে তাৎক্ষনিক টেক্সাস হার্ট ইন্সটিটিউট (Texas Heart Institute) - এ ভর্তি করানো হয়।
সৌভাগ্যবশত সেই ইন্সটিটিউটের দুইজন ডাক্তার যথাক্রমে ড. বিল কোহন (Bill Cohn) এবং ড. বাড ফ্র‍্যাজিয়ার (Bud Frazier) বৈপ্লবিক চিন্তাধারার মাধ্যমে "Continuous Flow" নামক একটি নতুন ডিভাইস উদ্ভাবন করেন যেটি কোনরকম স্পন্দন ছাড়াই পুরো দেহে রক্ত সঞ্চালন করে থাকে। পরবর্তীতে তারা লুইসের শরীর থেকে হৃদপিণ্ড বিচ্ছিন্ন করে ডিভাইসটি দেহের সাথে সংযুক্ত করে দেয়। তবে ডিভাইসটি সংযুক্ত করার আগে তারা ৪৮ ঘন্টার মধ্যে সেটি ৫০-৭০ টি বাছুরের দেহে হৃদপিণ্ডের পরিবর্তে ডিভাইসটি প্রতিস্থাপন করেন এবং প্রতিক্রিয়াগুলো পর্যবেক্ষণ করেন। ডিভাইসটি বাছুরগুলোর দেহে সংযুক্ত করার পরও বাছুরগুলো কোনরকম হৃদস্পন্দন ছাড়াই ভারসাম্য বজায় রাখতে পেরেছিল। তাই লুইসের স্ত্রীর অনুমতিতে তারা ডিভাইসটি লুইসের দেহের সাথে সংযোগ করে দেন।
(তবে ড. বিল কোহন একজন দক্ষ সার্জন হওয়ার পাশাপাশিও একজন আবিষ্কারক ও বিজ্ঞানী যিনি মানুষের হৃদপিণ্ডের চিকিৎসা কিংবা এর বিকল্প হিসেবে কিছু আবিষ্কারের জন্য জীবনে অনেক কিছু করেছেন। তন্মধ্যে একটি বিশেষ ডিভাইস হলো LVADs বা, Left Ventricular Assist Device যেটি হৃদপিণ্ডের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ এটি একধরনের মেকানিকাল হার্ট পাম্প যা মানুষের বুকের ভিতরে স্থাপন করে পুরো মানবদেহের অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত সঞ্চালন করতে সক্ষম)
তবে হৃদপিণ্ড ছাড়াও লুইসের কিডনি ও লিভারে সমস্যা ছিল। তাই তার পরিবার মূলত তার কথা চিন্তা করেই ডাক্তারদেরকে ডিভাইসটি বন্ধ (Turn Off) করে দিতে বলেন এবং তাকে মানবিকভাবে মৃত্যুর অনুমতি দেয়।