স্বপ্নের ভিতর মানুষ দৌড়াতে পারেনা, পরীক্ষার হলে পৌঁছাতে পারেনা, লিখতে গেলে যেন হাত চলেই না। এসব এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা কি?
স্বপ্ন মানব মস্তিষ্কের সৃষ্ট কিছু চিত্র বা গল্প যা মানুষ ঘুমের ভিতর নিজের মনের অবচেতনে দেখে। ঘুমের সাধারণত দুটি পর্যায় থাকে, REM এবং Non REM। ঘুমের REM বা Rapid Eye Movement পর্যায়ে মানুষ স্বপ্ন দেখে। মানুষের প্রতিটি স্বপ্নের স্থায়িত্বকাল কয়েক সেকেন্ড থেকে ২০-৩০ মিনিট পর্যন্ত হতে পারে। রেম পর্যায়ে যদি মানুষ জেগে থাকে তবে ঘুম থেকে জাগার পরও স্বপ্নের বিষয়বস্তু মনে থাকে। স্বপ্নে আমরা প্রায়ই দেখি পরীক্ষায় হলে পৌঁছাতে পারছিনা, খাতায় লিখতে পারছিনা, দৌড়াতে চাইলেও খুব ধীর গতিতে দৌড়াচ্ছি। এইসব এর পিছনে কিছু বৈজ্ঞানিক কারণ আছে--
স্বপ্নে পরীক্ষা দিচ্ছেন দেখার মানে হচ্ছে আপনার আত্মবিশ্বাসের অভাব আছে, পরীক্ষা সম্পর্কে আপনি দুশ্চিন্তায় আছেন বা আপনার পরীক্ষার প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়নি। স্বপ্ন আমাদের প্রতিদিনকার চিন্তা বা ভাবনারই প্রতিফলন তাই পরীক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তার প্রভাবে আমরা স্বপ্নেও পরীক্ষা দেওয়া দেখি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে স্বপ্নের পরীক্ষায় আমরা লিখতে পারিনা কেন? বিজ্ঞানীদের মতে স্বপ্নে পড়া, লিখা বা ভাষায় প্রয়োগ করা প্রায় অসম্ভব। কারণ স্বপ্নে মস্তিষ্কের কিছু অংশ আংশিকভাবে সক্রিয় থাকে। ভাষা মনে রাখার জন্য মানুষের মস্তিষ্কের দুটি অংশ কাজ করে। এগুলো হলো Brocas area এবং Wernickes area। স্বপ্ন দেখার সময় মস্তিষ্কের এই অংশগুলো কম সক্রিয় থাকায় আমরা স্বপ্নে ভাষার প্রয়োগ করতে পারিনা, কথা বা চিৎকার করতে পারিনা।
স্বপ্নে কোন কিছু ভয় পেয়ে দৌড়াতে গেলেও যেন পা চলেনা, মনে হয় দৌড়াচ্ছি কিছু গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছিনা। অনেক ক্ষেত্রে অবচেতন মস্তিষ্কের ভয় বা উদ্বিগ্নতার জন্যও মানুষ স্বপ্নে দৌড়ায় কিন্তু খুব ধীর গতিতে। এর কারণ হচ্ছে মানুষ ঘুমের REM পর্যায়ে যখন স্বপ্ন দেখে তখন বেশিরভাগ ঐচ্ছিক পেশি ও দেহের নানা অঙ্গ প্যারালাইজড থাকে। নিরাপত্তার খাতিরেই মূলত দেহের এইসব অঙ্গ ঘুমের ভিতর অক্ষম থাকে। স্লিপ রেকর্ডিং মতে, স্বপ্নের এই পর্যায়ে কোন EMG (Electromyography) থাকেনা যার ফলে স্বপ্নে মানুষ দৌড়াতে পারেনা। EMG হচ্ছে স্কেলেটাল পেশী থেকে উৎপন্ন হওয়া বৈদ্যুতিক সংকেত রেকর্ড করার যন্ত্র। আবার, স্বপ্নে লিখতে দেখা মানে হচ্ছে আপনি আপনার অনুভূতি প্রকাশ করতে পারছেন না। কিন্তু লিখতে চেষ্টা করেও না লিখতে পারার প্রথম কারণ হতে পারে স্বপ্নে ভাষায় প্রয়োগ করা যায়না, দ্বিতীয় কারণ হতে পারে স্বপ্নে বেশিরভাগ অঙ্গের অসাড়তা বা প্যারালাইসিস।
স্বপ্ন মানুষের অবচেতন মনের ভাবনা, চিন্তা, ভয় বা ইচ্ছার প্রতিফলন। স্বপ্নে দৌড়াতে না পারা, পরীক্ষা দিতে না পারা, লিখা বা চিৎকার করতে না পারা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। এইসব ঘটনায় ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই। তবে এমন স্বপ্নের কারণে যদি ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে তবে অবশ্যই চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হতে হবে।
- Nishat Tasnim (Science Bee)