অ্যাকুপ্রেসার এক ধরনের প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতি যেখানে শরীরের বিভিন্ন অংশে চাপ সৃষ্টি করে নানা শারীরিক সমস্যার সমাধান করা হয়। অ্যাকুপ্রেসার পদ্ধতির উদ্ভব চীনে, সেখানে এই চিকিৎসা পদ্ধতির ব্যবহার প্রায় ২০০০ বছর পর্যন্ত হয়েছে। ঐতিহ্যবাহী চাইনিজ চিকিৎসা তত্ত্ব মতে, আমাদের শরীরের মেরিডিয়ান বা নালীগুলোতে আছে বিশেষ অ্যাকুপ্রেসার পয়েন্ট। বিশ্বাস করা হয় যে, এইসব নালী দিয়ে জৈবশক্তি প্রবাহিত হয় যাকে বলা হয় Qi বা Ch'i। এই নালীগুলো শরীরের কিছু নির্দিষ্ট অঙ্গকে সংযুক্ত করে দেহে একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করে। যেমন: হাতের তালুর বিভিন্ন পয়েন্টের সাথে মস্তিষ্ক, হৃদপিন্ড, ফুসফুস, থাইরয়েড ইত্যাদির সংযোগ আছে।
এই তত্ত্ব মতে যখন কোন নালী ব্লক বা ভারসাম্যহীন হয়ে যায় তখন মানুষের দেহে নানা অসুস্থতা দেখা দেয়। অ্যাকুপ্রেসারের সাথে জড়িত চিকিৎসকরা নিজেদের আঙুল, হাতের তালু, কনুই, পা বা বিশেষ যন্ত্র ব্যবহার করে রোগীর শরীরের অ্যাকু-পয়েন্টগুলোতে চাপ প্রয়োগ করেন। তাদের বিশ্বাস যে অ্যাকুপ্রেসার পদ্ধতিতে শরীরের জৈবশক্তি প্রবাহিত নালীগুলোতে ভারসাম্য ফিরে আসে এবং Yin (Negative Energy) ও Yang (Positive Energy) যার অসামঞ্জস্যতায় মানুষ অসুস্থ হয় তা নিয়ন্ত্রণ হয়। তবে পশ্চিমা চিকিৎসকদের অনেকে মেরিডিয়ান নালীর অস্তিত্ব বিশ্বাস করেন না। বরং তারা অ্যাকুপ্রেসারকে পেশির টান, রক্ত চলাচল, এন্ডোরফিন প্রবাহ দিয়ে ব্যাখা করেন। মানুষের শরীরে প্রায় ১০০ এর বেশি অ্যাকুপ্রেসার পয়েন্ট আছে। এর মধ্যে হাতের কব্জির অ্যাকুপ্রেসারের সাহায্যে ব্যথা দূর করা বৈজ্ঞানিক প্রমাণ আছে। তাছাড়াও অ্যাকুপ্রেসার মাথা ঘোরা, বমি ভাব দূর করার জন্য কার্যকর এমন প্রমাণও আছে।
অ্যাকুপ্রেসার কিভাবে কাজ করে তা নিয়ে কোন ঐক্যমত্য নেই। অনেকে অনুমান করেন যে শরীরের নানা অংশে চাপ প্রয়োগের ফলে প্রাকৃতিক ব্যথানাশক রাসায়নিক এন্ডোরফিন নিঃসরণ হয়। আবার অনেকে বলেন যে, চাপ প্রয়োগের ফলে অনৈচ্ছিকভাবে ক্রিয়াশীল স্নায়বিক সিস্টেম প্রভাবিত হয়। অ্যাকুপ্রেসারের মতো অ্যাকুপাংচারও চীনা চিকিৎসা পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে শরীরের বিভিন্ন অংশে সুচ ফুটিয়ে নানা রোগের চিকিৎসা করা হয়। অ্যাকুপ্রেসারে যেখানে চিকিৎসার জন্য আঙুল, হাতের তালু, কনুই ব্যবহৃত হয়, অ্যাকুপাংচার পদ্ধতিতে সেখানে সুচ ফুটিয়ে চিকিৎসা করা হয়। তবে ক্যান্সারে আক্রান্ত মানুষ, গর্ভবতী, হার্টের রোগী হলে এই চিকিৎসা পদ্ধতি বিপদজনক হতে পারে। অ্যাকুপ্রেসার ও অ্যাকুপাংচারের কার্যকারিতা কতটুকু তা নিয়ে পর্যাপ্ত গবেষণার অভাব আছে।
অ্যাকুপ্রেসার ও অ্যাকুপাংচারের পক্ষে, বিপক্ষে নানা ধরনের লিখা আছে। যে বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে এই চিকিৎসা করা হয় তার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। কোন স্থানের ব্যথা নিরাময়ের জন্য অ্যাকুপ্রেসারের কার্যকারিতা প্রায়ই দেখা যায়। কিন্তু অ্যাকুপাংচারের তেমন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি না থাকায় চীনে এটি ১৬০০ শতাব্দীতে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
© Nishat Tasnim (Science Bee Family)
রেফারেন্সঃ
১. https://www.mayoclinic.org/tests-procedures/acupuncture/request-appointment/ptc-20392771
২. https://www.verywellhealth.com/the-benefits-of-acupressure-88702
৩. https://www.sciencedirect.com/topics/nursing-and-health-professions/acupressure
৪. https://www.webmd.com/balance/guide/acupressure-points-and-massage-treatment
৫. https://theprint.in/science/modis-acupressure-work-some-mostly-pseudoscience/305593/