কম্প্যাক্ট ডিস্ক (CD) কিংবা ডিজিটাল ভার্সেটাইল ডিস্ক (DVD) আমরা মোটামুটি সবাই ব্যবহার করেছি, হাত দিয়ে ধরে দেখেছি এবং আমরা জানি এগুলো দেখতে কেমন। এগুলো তৈরি হয় স্বচ্ছ প্লাস্টিকের মতো দেখতে চাকতি দিয়ে। আর একপিঠ স্বচ্ছ এবং অপরপিঠে একটি পাতলা ধাতব স্তর যুক্ত থাকে। ধাতব স্তরটি সাধারণত অ্যালুমিনিয়াম বা সোনা দিয়ে তৈরি করা হয়। সিডি বা ডিভিভিতে তথ্য সংরক্ষণ বা তথ্য পড়ার জন্য লেজাররূপী আলো ব্যবহার করা হয়। তাই এগুলোকে অপটিক্যাল ডিস্ক
একটি সিডির সবার উপরে ছাপা অবস্থায় থাকে এর নাম বা পরিচিতি। অনেক সময় আলাদা ছাপা কাগজ সেঁটে এই স্তর তৈরি করা হয়। এর পরের স্তর ল্যাকারের। এটি এর নিচে স্থাপিত ধাতব প্রতিফলক পৃষ্ঠটিকে রক্ষা করে। ল্যাকার স্তরের নিচে থাকে ধাতব প্রতিফলক স্তর, যাতে সিডি পড়ার সময় লেজার রশ্মি প্রতিফলিত হয়। তার নিচে থাকে মোটা পলি কার্বনেট স্তর। এই স্তরের দিক থেকেই লেজার নিক্ষেপ করে সিডি পড়া হয় এবং তথ্য সন্নিবেশন করা হয়।
সিডিতে তথ্য সন্নিবেশন করা হয় সর্পিলাকারে ট্র্যাক তৈরি করে। সিডিতে একটি ট্র্যাক থাকে এবং এটি কেন্দ্রের গোল ছিদ্রের দিক থেকে শুরু করে সর্পিলাকারে ক্রমশ প্রান্তের দিকে পৌঁছায়। পাশের চিত্র দেখলে বোঝা যাবে কিভাবে সিডির ট্র্যাকটি বিন্যাস্ত থাকে।একটি সিডিতে এভাবেই ভেতর থেকে বাইরে এক লাইনে তথ্য সন্নিবিষ্ট থাকে। লেজারের হেডের মাধ্যমে সিডিকে এভাবেই ভিতর থেকে বাইরের দিকে পড়া হয়। এভাবে সর্পিলাকারে যেই ট্র্যাকটি থাকে সেটির প্রস্থ অত্যন্ত ক্ষুদ্র। পাশাপাশি দুটি সারির দুরত্ব ১.৬ মাইক্রন। অর্থাৎ, ১ মিলিমিটারের ১০০০ ভাগের ১.৬ ভাগ মাত্র। সম্পূর্ণ ট্র্যাকটিকে যদি সর্পিলাকার অবস্থা থেকে টেনে সোজা করা হয় তাহলে তার দৈর্ঘ্য হবে পাঁচ মাইল। এই ট্র্যাক এতোই ক্ষুদ্র যে অত্যন্ত শক্তিশালী মাইক্রোস্কোপের মাধ্যমেই কেবল তা দৃশ্যমান হয়।
আমরা মোটামুটি সবাই জানি কম্পিউটারের যাবতীয় তথ্যগুলো বাইনারিতে অর্থাৎ ০ এবং ১ এই দুটি অংকে সংরক্ষণ করা হয়। কম্পিউটারে লিপিবদ্ধ সবকিছুকে সংখ্যায় প্রকাশ করা হয় যেই সংখ্যাটি লেখা হয় কেবল ০ এবং ১ এই দুটি অংক ব্যবহার করে। সিডির ক্ষেত্রে মসৃন পৃষ্ঠ ১ এবং ফুলে থাকা পৃষ্ঠ ০ নির্দেশ করে। এভাবেই একটি সিডিতে তথ্য সংরক্ষিত থাকে।
যেহেতু সিডিতে সর্পিলাকারে কেন্দ্রের দিক থেকে পরিধির দিতে তথ্য সন্নিবিষ্ট থাকে, তাই কেন্দ্রের দিকে একটি চক্রে তথ্য থাকতে পারে কম এবং পরিধির দিকে তথ্য থাকতে পারে বেশি। সিডি যখন ঘুরতে থাকে তার নিচে লেজার সম্বলিত হেডটি সিডির নিচ দিয়ে কেন্দ্র থেকে পরিধির দিকে যেতে যেতে সিডিটি পড়তে থাকে। যেহেতু কেন্দ্রের দিকের চক্রে তথ্য কম থাকে তাই কেন্দ্রের প্রতিটি চক্রের তথ্য পড়তে কম সময় লাগে এবং এই সময় সিডি দ্রুত ঘোরে। যতই পরিধির দিকে যেতে থাকে ততই সিডির ঘুর্ণন গতি কমতে থাকে, কারণ এই সময় প্রতিটি চক্রের তথ্য পড়ে শেষ করতে বেশী সময় লাগে।
সিডিতে ডাটা সংরক্ষণের জন্য লেজার ব্যবহার করা হয়। একটি সিডি ড্রাইভ কম্পিউটার থেকে নির্দেশ সংগ্রহ করে। এই নির্দেশে যে তথ্য থাকে তা ০ এবং ১ বিশিষ্ট্য। লেজারের মাধ্যমে মসৃন পৃষ্ঠের উপরে স্থাপিত একটি ডাই স্তরের কিছু কিছু অংশ পুড়িয়ে ফেলা হয়, এতে পোড়া অংশগুলো ফুলে যায় এবং সেগুলো তখন ০ নির্দেশ করে। সিডি রাইটারের লেজারটি যদি সিডিতে ১ সংখ্যাটি লিখতে চায় তাহলে সে লেজার নিক্ষেপ করে না এবং ডাই স্তর ফুলে যায় না, আর যখন ০ লিখতে চায় তখন লেজার নিক্ষেপ করে ফুলিয়ে দেয়। এভাবে সিডিতে ‘রাইট’ করা হয়। এই কারণে সিডিতে রাইট করাকে অনেক সময় সিডি বার্নিং বা সিডি পোড়ানো বলা হয়। সাধারণ সিডি গুলোতে লেজারের মাধ্যমে এভাবে পোড়ানো হলে আর আগের অবস্থায় নেওয়া যায় না। এই কারণে এগুলোতে একবারই তথ্য সংরক্ষণ করা যায় এবং তা স্থায়ী হয়ে যায়। রিরাইটেবল সিডিগুলোতে ভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়।
যখন একটি সিডি থেকে ডাটা পড়া হয় তখন এর উপর লেজার রশ্মি নিক্ষেপ করা হয়। লেজার রশ্মি মসৃন পৃষ্ঠে এবং ফুলে থাকা অংশে ভিন্নভাবে প্রতিফলিত হয় এবং রিডিং হেডে ভিন্নভাবে পতিত হয়। ফলে মসৃন অংশ এবং ফুলে থাকা অংশ সিডি রিডার আলাদা ভাবে পড়তে পারে। সিডি থেকে হেডে প্রতিফলিত হওয়ার পর তা বৈদ্যুতিক সংকেতে রূপান্তর করা হয় এবং কম্পিউটারে সেগুলোকে ০ এবং ১ হিসেবে শনাক্ত করা হয়। পরবর্তীতে সফটওয়্যারের নির্দেশনা অনুযায়ী সিডির এই তথ্যগুলোকে নানা ভাবে ব্যবহার করা হয় বা কম্পিউটারে সংরক্ষণ করে রাখা হয়।
ডিভিডি এবং CD-র কার্যপ্রণালী একই রকম, তবে ডিভিডিতে তথ্য সমৃদ্ধ ট্র্যাকটি সিডির চেয়ে অনেক সূক্ষ হয় এবং আরো বেশী সারিতে তথ্য সরক্ষিত থাকে। এর ফলে আকারে একই হওয়া সত্ত্বেও সিডির চেয়ে ডিভিডিতে অনেকগুণ বেশী তথ্য সংরক্ষণ করা যায়।
-ইমতিয়াজ আহমেদ