উপকার--
শরীর ঘামলেও রয়েছে অনেক উপকারিতা
:-
তাপমাত্রা বেড়ে গেলে বা আমরা একটু
কাজ করলে নানা উপায়ে গরমের হাত
থেকে বাঁচলেও এ সময় একটা জিনিসের
হাত থেকে বাঁচা প্রায় অসম্ভব, সেটা
হল ঘাম। তার সঙ্গে একরাশ ক্লান্তির
অনুভুতি। জানেন কী ঘামা শরীরের
পক্ষে ভালো। এর বেশ কিছু উপকারিতাও
রয়েছে। আসুন এক নজরে দেখে নেয়া
যাক :
১. ব্যাথা উপশম করে : সকালে ঘুম থেকে
উঠে দেখলেন ঘাড়ে কিংবা হাতে বেশ
ব্যথা। কী করবেন মাথায় আসছে না।
খচখচে ভাবটা যাচ্ছে না কিছুতেই।
ঘরেই হাল্কা গা ঘামানোর
এক্সারসাইজ করুন। চিকিত্সকরা বলেন,
ব্যায়াম মস্তিষ্কের বিশেষ অংশকে
উত্তেজিত করে। যার ফলে শরীরে
এন্ডরফিনের মাত্রা বাড়ে। যা
স্বাভাবিকভাবে ব্যথা উপশমে
কার্যকরী।
২. শরীর পরিষ্কার রাখে : ঘামের সঙ্গে
সঙ্গে শরীরের ভিতরকার এবং ত্বকের
উপরিভাগের ময়লা বেরিয়ে আসে।
সারা দিন যাঁরা বআইরে ঘুরে কাজ
করেন বা যাঁরা খেলাধূলার সঙ্গে যুক্ত
রয়েছেন, তাঁরা দিনে অন্তত ৩ বার
ভালো করে শরীর ধুয়ে ফেলুন।৩.
ক্ষতিকারক টক্সিন বার করে : সপ্তাহে
অন্তত এক বার এক্সারসাইজের মাধ্যমে
প্রচুর ঘামলে শরীরে ক্ষতিকারক টক্সিন
অ্যালকোহল, কোলেস্ট্রল এবং
অতিরিক্ত লবনের মাধ্যমে বেরিয়ে
আসে। ঘরে বসেই সাইক্লিং বা হাল্কা
জগিং করে এ কাজ সহজে করতে পারেন
আপনি।
৪. মেজাজ পাল্টাতে সাহায্য করে :
কোনও কারণে যদি মেজাজ খিঁচড়ে
থাকে বা সারাদিন কাজের পর রুক্ষ
মেজাজে থাকেন, তবে ঘরে বসেই
খানিক যোগ ব্যায়াম বা বাড়ির
ধারেকাছে কোনও পার্কে গিয়ে জোরে
জোরে হাঁটুন, যাতে ঘাম হয়। দেখবেন,
বেশ হাল্কা লাগছে। গবেষণায় দেখা
গিয়েছে, উত্তাপের রকমফেরে
স্নায়ুতন্ত্রে মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করতে
পারে।
৫. সংক্রমণ রুখতে সাহায্য করে :
জার্মানির এবারহার্ড কার্লস
বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় দেখা
গিয়েছে, ঘামের সঙ্গে ডার্মসিডিন
নামে এক ধরনের অ্যান্টি-
মাইক্রোবায়াল পেপটাইড নির্গত হয়।
যা সংক্রমণ রোধ করতে সাহায্য করে।
বিশেষত, যক্ষার জীবাণু এবং অন্যান্য
ক্ষতিকারক প্যাথোজেনের বিরুদ্ধে
লড়তে সাহায্য করে।
৬. শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে:
যেকোনো কাজ করার সময় আমাদের
শরীরের তাপমাত্রা একটু করে বাড়তে
থাকে। যে কাজ যত কষ্টসাধ্য তাতে
তাপমাত্রা বাড়ার পরিমাণ তত বেশি।
ঘাম এই অতিরিক্ত তাপমাত্রাকে
নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। যদি
কোনো কারণে ঘাম বন্ধ হয়ে যায়,
তাতে ঝিমুনিভাব, ত্বকে র্যাশ বেরনো
এমনকী জ্ঞানও হারাতে পারেন।
৭. কিডনিতে পাথর হওয়ার আশঙ্কা
কমায় : ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যদি
প্রত্যেক দিন ব্যায়ামের মাধ্যমে একটি
নির্দিষ্ট পরিমাণ ঘাম হয়, তবে
কিডনিতে পাথর হওয়ার আশঙ্কা
অনেকটা কমিয়ে দেয়। কারণ ঘামের
সঙ্গে শরীরের অতিরিক্ত লবণ এবং
ক্যালসিয়াম বেরিয়ে যায়। যেটা
কিডনিতে জমা হয়ে পাথর সৃষ্টি করে।
আর যাঁরা বেশি ঘামেন, তাঁরা পানিও
পান করেন। ফলে কিডনি তাতেও
পরিষ্কার থাকে।
অপকার :--
১. ডায়াবেটিস কিংবা লো ব্লাড সুগার
টাইপ ১ এবং ২ উভয় ধরনের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে ঘামের মাধ্যমে। আবার গর্ভাবস্থা এবং অন্য বিশেষ অবস্থার কারণে ডায়াবেটিস দেখা দিতে পারে, যাকে বলে গ্যাস্টেশনাল ডায়াবেটিস। ইনসুলিন উৎপাদনে সমস্যা এবং রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে ঝামেলা হলেও এমনটা দেখা যায়। আবার অনেকের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়েও অনেক কম থাকে। এতেও দেহে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, অতিরিক্ত ঘামা রক্তে নিম্নমাত্রার গ্লুকোজের লক্ষণ প্রকাশ করতে পারে।
২. সংক্রমণ
ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ সবসময় প্রাণঘাতী হয় না। হলেও অ্যান্টিবায়োটিক আমাদের নিরাময় করে। সংক্রমণের ধরন অনুযায়ী কিছু মানুষ আবার জ্বর, শীত লাগা, অতিরিক্ত ঘামাম এবং আরো অনেক কিছুতে আক্রান্ত হতে পারেন। মারাত্মক সংক্রমণে সেপসিস হতে পারে। সময়মতো শুশ্রূষা না হলে তা সেপটিক শকে চলে যেতে পারে। কাজেই বেশি ঘামলে সংক্রমণের চিন্তা মাথায় রেখে চিকিৎসকের কাছে যান।
৩. হার্ট অ্যাটাক
যদি কেউ হঠাৎ করেই স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ঘামতে থাকেন তো তার কার্ডিয়াক সমস্যার কথা বিবেচনায় আনতে হবে। হঠাৎ করে অস্বাভাবিক ঘাম হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ হিসেবে প্রকাশ পেতে পারে। কাজেই এ অবস্থাকে অবহেলা না করে জরুরিভিত্তিতে বিশেষজ্ঞের দ্বারস্থ হতে হবে। বিশেষ করে বয়স ৪৫ এর বেশি হলে কারণ ছাড়াই অতিরিক্ত ঘাম হার্ট অ্যাটাকের সমূহ সম্ভাবনা প্রকাশ করে। পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপ, ধূমপানের অভ্যাস কিংবা পরিবারে হৃদরোগের ইতিহাস থাকলে তো কথাই নেই। কোনো শারীরিক অসুবিধাতে সবাই ঘামতে পারেন। কিন্তু তা স্বাভাবিক হতে হবে। নইলে চিন্তার বিষয়।