ব্রেন সেলগুলো যে বৈদ্যুতিক ও রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় কত দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয় এবং একটা সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্যে যে কত সংখ্যক নিউরোন সেলের পারস্পরিক যোগাযোগ প্রয়োজন হয় তা কল্পনা করতে গেলেও বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যেতে হয়। জার্মানীর বিখ্যাত ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইন্সটিটিউটের পরিচালক ড. ম্যানফ্রেড ইগান নিরীক্ষা করে দেখেছেন যে, ব্রেনের কোন কোন কেমিক্যাল রি-অ্যাকশন সংগঠিত হতে সময় লাগে মাত্র এক সেকেন্ডের ১০ লাখ ভাগের এক ভাগ সময়। তিনি বলেছেন, একটি দ্রুতগামী গাড়ির নিচে পড়া থেকে বাঁচার জন্যে এক পা পিছিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেয়া ও তা কার্যকরী করার জন্যে ১ লাখ নিউরোনের মধ্যে যোগাযোগ ও সমন্বয়ের প্রয়োজন হয় এবং পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় এক সেকেন্ডেরও কম সময়ে।
জীবন ধারণের জন্যে অত্যাবশ্যক প্রাণ-রাসায়নিক প্রক্রিয়া চালু রাখার পুরো কাজই করে ব্রেন। এ প্রক্রিয়া যেমন জটিল তেমনি একটির সঙ্গে অন্যটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত এবং নির্ভরশীল। এর যে কোন পর্যায়ে সমন্বয়ের বিন্দুমাত্র বিচ্যুতি পুরো প্রক্রিয়াকে নস্যাৎ করে দিতে পারে। যেমন রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া না থাকলে খাদ্য হজম এবং তা থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সংগ্রহ করে দেহের সর্বত্র প্রেরণ করতে পারতেন না। আবার আপনি যদি খাবার শনাক্ত করতে ব্যর্থ হতেন অথবা শনাক্ত করতে পারলেও যদি সঠিকভাবে হাত ব্যবহার করে তা ধরে ঠিকমত দুই ঠোঁটের মাঝখানে মুখে প্রবেশ করাতে না পারতেন তাহলে আপনার হজম প্রক্রিয়াও কোন কাজে আসত না। কিন্তু আপনি কোন রকম চিন্তা না করেই অবলীলায় সামনের খাবার তুলে মুখে দিয়ে চিবানোর সঙ্গে সঙ্গে মুখের গ্রন্থিগুলো লালা নিঃসরণ শুরু করে দেয় আর আপনি কোন সচেতন প্রচেষ্টা ছাড়া তা গলাধঃকরণ করে পাকস্থলীতে পাঠিয়ে দিচ্ছেন।
এনজাইম তৈরি হয়ে শুরু হচ্ছে পাকস্থলীর খাবার হজমের প্রক্রিয়া। হজম প্রক্রিয়ায় শরীরের জন্যে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সংগৃহীত হচ্ছে আর রেচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অপ্রয়োজনীয় অংশ শরীর থেকে নির্গত হচ্ছে। ব্রেন দেহের এই পুরো প্রক্রিয়াকে এমনভাবে পরিচালিত করে যাতে করে প্রতিটি কাজ ঠিক সময়ে শুরু হয় এবং ঠিক সময়ে শেষ হয়। একে একটা সুসমন্বিত রিলে রেসের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। যদি প্রতিটি প্রক্রিয়ার মধ্যে সমন্বয়ের কোন অভাব হত, তাহলে দেখা যেত মুখে খাবার প্রবেশ করার পরও লালা নিঃসরণ হচ্ছে না অথবা খাবার হজম না হয়েই পাকস্থলী, অন্ত্র পার হয়ে রেচন প্রক্রিয়ায় বেরিয়ে যাচ্ছে।
আমরা আগেই দেখেছি ব্রেন এই কাজগুলো সুচারু রূপে করতে পারছে, দেহের অভ্যন্তরে প্রতিটি অংশের সঙ্গে সংযোগ এবং বাইরের জগতের সঙ্গে যোগাযোগ থাকার ফলে। পঞ্চ ইন্দ্রিয় কখনও কখনও ৬ষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে ব্রেন পায় বাইরের তথ্য আর ভেতরের তথ্য সংগৃহীত হয় রিসিপটরের মাধ্যমে। তথ্য পাওয়ার পর এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ কার্যকরী করার জন্যেও ব্রেন ও শরীরের নির্দিষ্ট অঙ্গের রয়েছে সংযোগ। ব্রেন এই তথ্য সংগ্রহ ও কর্ম নির্দেশনা প্রদান করে দুই পদ্ধতিতে। প্রথমত অতিদ্রুত পদ্ধতি নার্ভাস সিস্টেমের মাধ্যমে। দ্বিতীয়ত ইন্ডোক্রাইন সিস্টেমের মাধ্যমে (হরমোন দ্বারা) শ্লথ গতিতে।
ব্রেন কোন হুমকি দেখা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দেহকে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত হওয়ার জন্যে কেমিক্যাল ম্যাসেঞ্জার পাঠাচ্ছে। এই কেমিক্যাল ম্যাসেঞ্জার আবার ব্রেনকে আরও সতর্ক করার কারণ হতে পারে। পরিণামে ব্রেন মূল বিপদ কেটে যাওয়ার পরও সতর্ক সঙ্কেত পাঠানো অব্যাহত রাখতে পারে। এই ফিডব্যাক লুপকে কোন না কোনভাবে সংশোধন করতে না পারলে দেহে ক্ষতিকর টেনশন সৃষ্টি করে, যা দেহের জন্যে যেমন ক্ষতিকর, তেমনি ব্রেনের সার্কিটও জ্যাম করে দেয়।
source : Ekushey tv online