Nishat Tasnim-
যখন কোনো মানুষের দুই চোখের আইরিশ ভিন্ন রঙের হয় তখন তাকে হেটেরোক্রোমিয়া বলে। আমাদের চোখের রঙ এর সাথে মেলানিন এর সম্পর্ক রয়েছে। মেলানিন হচ্ছে এক ধরনের পিগমেন্ট বা রঞ্জক পদার্থ যা মানুষের ত্বক ও চুলের রঙের জন্য দায়ী। সাধারণত একজন ফর্সা মানুষের মেলানিন এর মাত্রা একজন কালো মানুষের চেয়ে কম থাকে। এই মেলানিন নামক রঞ্জক চোখের রঙও নির্ধারণ করে। যাদের চোখে মেলানিন এর মাত্রা কম তাদের চোখের বর্ণ হয় হালকা, আর যাদের চোখের মেলানিন বেশি তাদের চোখের বর্ণ গাঢ়।
হেটেরোক্রোমিয়া যাদের থাকে তাদের চোখে মেলানিনের পরিমাণে ভিন্নতা দেখা যায়। চোখের মেলানিন এর ভিন্নতা হয়ে 8-HTP পথে কিছু জিনের প্রভাবে এবং ক্রোমোজোম এর জন্য। এই ভিন্নতার জন্যই দুই চোখের রঙ ভিন্ন ভিন্ন হয়। আবার প্রাণীদের মধ্যে জিনগত বৈচিত্র্যের জন্য হেটেরোক্রোমিয়া হতে পারে। সাধারণত বিড়াল, কুকুর, ঘোড়া, গবাদি পশু এর মধ্যে হেটেরোক্রোমিয়া বেশি দেখা যায়। মানুষের ক্ষেত্রে এই বৈশিষ্ট্য খুবই দুর্লভ। science bee
হেটেরোক্রোমিয়া কয়েক ধরনের হতে পারে। যেমন:
১. Complete বা সম্পূর্ণ হেটেরোক্রোমিয়া: মানুষের দুটো আইরিশ সম্পূর্ণ ভিন্ন রঙের হয়ে গেলে তাকে সম্পূর্ণ হেটেরোক্রোমিয়া বা হেটেরোক্রোমিয়া ইরিডাম বলা হয়।
২. Segmental বা বিভাগীয় হেটেরোক্রোমিয়া: যখন মানুষের একটি চোখের আইরিশে দুটি ভিন্ন ভিন্ন রঙ দেখা দেয় তখন তাকে বলে বিভাগীয় হেটেরোক্রোমিয়া বা হেটেরোক্রোমিয়া আইরিডিশ।
৩. Central বা কেন্দ্রীয় হেটেরোক্রোমিয়া: এটি অন্যান্য ধরনের চেয়ে বেশি সাধারণ এবং সহজে বুঝাও যায়না। এই হেটেরোক্রোমিয়া এর ক্ষেত্রে দেখা যায় যে দুটি আইরিশ এর রঙ প্রায় একই, তবে পিউপিল এর আশেপাশের রিং ভিন্ন রঙের। যেমন: নীল রঙের আইরিশ এর কারোর ক্ষেত্রে দেখা যায় যে তাদের পিউপিল এর আশেপাশে চিকন বাদামী রঙের রিং। এই ধরনের হেটেরোক্রোমিয়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জন্ম থেকেই দেখা যায়।
আবার কিছু কিছু মানুষ জন্ম থেকে হেটেরোক্রোমিক হয়না। তারা বয়স বাড়ার পর এই বৈশিষ্ট্য লাভ করেন। একে বলে Acquired বা অর্জিত হেটেরোক্রোমিক।
যেকোনো ধরনের হেটেরোক্রোমিয়া এর জন্যই চক্ষু বিশেষজ্ঞ এর পরামর্শ মতে চিকিৎসা করতে হবে। চিকিৎসার ক্ষেত্রে ডাক্তাররা সাধারণত চোখের পেরিফেরিয়াল ভিশন, অপটিক নার্ভ, চাপ, ভিজ্যুয়াল টেস্ট করা হয়। আবার রেটিনার ছবি তুলার জন্য অনেক চিকিৎসক OCT করার পরামর্শ দেন। চোখের অস্বাভাবিকতার উপর নির্ভর করে চিকিৎসার ধরন।
© Nishat Tasnim (Science Bee Family)