Abrar Islam Ador
২০১৭ সালের আগস্ট মাসে প্রকাশিত ‘কারেন্ট বায়োলজি’র এক গবেষণানুসারে, নারী বা মেয়েদের গোলাপি রঙ পছন্দের ব্যাপারটা পুরোপুরি সামাজিক কিংবা বাণিজ্যিক নয়। এর পেছনে রয়েছে মানসিক এবং শারীরিক কিছু ব্যাপার। জন্মগতভাবেই মেয়েরা ছেলেদের চাইতে একটু বেশি লালচে রঙ পছন্দ করে।
নিউক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ুবিজ্ঞানী এনিয়া হার্লবার্ট এবং ইয়াজু লিং ২০ থেকে ২৬ বছরের মোট ২০৮ জন মানুষের উপরে রঙ নির্বাচন পরীক্ষা চালান। অংশগ্রহণকারীদের বলা হয়, খুব দ্রুত কয়েকটি রঙ, কয়েক শেডের রঙ, আলো এবং অন্ধকারের মিশেলে রঙ, বিভিন্ন আকৃতিতে থাকা রঙয়ের মধ্যে থেকে নিজের পছন্দের রঙটি বাছাই করতে। সপ্তাহ দুয়েক পর আবার তাদের নিয়ে একই পরীক্ষা করা হয়।
গবেষণা থেকে জানা যায়, প্রায় সব মানুষই সাধারণত নীল রঙ পছন্দ করে। তবে ছেলেরা যে ক্ষেত্রে নীলের সাথে সবুজের মিশ্রণ পছন্দ করে, সেক্ষেত্রে মেয়েরা একটু লালচে রঙয়ের নীল পছন্দ করে। অনেকটা বেগুনী ধাঁচের রঙ এগিয়ে থাকে তাদের পছন্দের তালিকায়। নিজেদের সংস্কৃতির কারণে রঙয়ের পছন্দ ভিন্ন হতে পারে- সেই কথা মাথায় রেখে এই পরীক্ষায় রাখা হয়েছিল বেশ কয়েকটি সংস্কৃতির মানুষকে।
নারীরা পুরুষদের চাইতে রঙয়ের আভা ভালো বুঝতে পারে। এই ক্ষমতা আজকের নয়, বরং বছরের পর বছর ধরে অভ্যাসের ফলে তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন গবেষকেরা। এমনকি অধিকাংশ ছেলেদেরই কালার ব্লাইন্ড রোগ থাকে যার কারনে তারা একটু সোজাভাবেই রঙ দেখে থাকে।
গবেষকদের মতে, দুই বছর বয়স থেকেই মেয়েরা গোলাপি রঙয়ের দিকে ঝুঁকতে থাকে। আর ঠিক তার কাছাকাছি কোনো একটি বয়স থেকেই গোলাপী রঙকে সতর্কতার সাথে দূরে সরিয়ে রাখতে শুরু করে ছেলেরা।
সেদিক দিয়ে বলতে গেলে, এই আচরণ থেকে বোঝাটা খুব স্বাভাবিক যে, জন্মগতভাবে নয়, বরং জন্মাবার বেশ কিছুদিন পর চারপাশের মানুষের এবং সমাজের মন মানসিকতা দ্বারা প্রভাবিত হয়েই এমন রঙ বেছে নেয় মেয়েরা। তাই পছন্দের রং এখানে কোনো বড় ব্যাপার নয়। আসল ব্যাপার হলো চারপাশের পরিবেশ। পরিবেশ যে ধারণা একটি শিশুকে ছোটবেলা থেকে দিয়ে আসবে, সে সেটাই তো করবে। ইচ্ছা করে গোলাপি রঙয়ের পোশাক পরে কোনো ছেলেশিশু নিশ্চয়ই নিজেকে মেয়েলী বলে প্রমাণ করতে চাইবে না। সেই সাথে, কোনো মেয়ে নিশ্চয়ই চারপাশের সবার চাইতে আলাদা হয়ে উঠতে চাইবে না। গোলাপীতে তাকে মানায়, সুন্দর দেখায়, গোলাপিই তার পছন্দনীয় রং সেটা ভাবতে অনেকটাই বাধ্য সে।
সুতরাং এই গোলাপি রঙ মেয়েদের পছন্দের কারণ মানেই হচ্ছে আমাদের মনতাত্তিক সমাজ সেই সাথে কিছুটা বাণিজ্যিক এবং কিছু কালার ব্লাইন্ড না হওয়ার সুফল।