স্টকহোম সিনড্রোমের কোনও বাস্তব উদাহরণ আছে কি? - ScienceBee প্রশ্নোত্তর

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রশ্নোত্তর দুনিয়ায় আপনাকে স্বাগতম! প্রশ্ন-উত্তর দিয়ে জিতে নিন পুরস্কার, বিস্তারিত এখানে দেখুন।

+22 টি ভোট
571 বার দেখা হয়েছে
"মনোবিজ্ঞান" বিভাগে করেছেন (105,570 পয়েন্ট)

2 উত্তর

+15 টি ভোট
করেছেন (15,170 পয়েন্ট)
নির্বাচিত করেছেন
 
সর্বোত্তম উত্তর
প্যাটি হার্স্ট ছিলো একজন কোটিপতি প্রকাশকের উত্তরাধিকারী। সে অপহৃত হয়েছিলো সিমবায়োনিজ লিবারেশন আর্মি (SLA) নামের একটা গ্রামীণ গেরিলা দল দ্বারা। কিন্তু ঘটনার দু’মাস পরেই তাকে দেখা যায় অপহরণকারীদের সাথেই স্বতস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করতে একটা ডাকাতিতে। এমনকি পুলিশের কাছে ধরা পড়ার পরও সে পারিবারিক পরিচয় গোপন করে এবং নিজেকে একটি মিথ্যা নামে (তানিয়া) পরিচয় দেয়। আদালতে এক পর্যায়ে যখন SLA এর প্রতি তার সহানুভূতির কথা সে প্রকাশ্যে জানায় তখন ৭ বছরের কারাদন্ডের আদেশও তাকে তার অবস্থান থেকে সরাতে পারেনি। পরবর্তীতে মানসিক অসুস্থতার কথা বলে এফ. লি বেইলি নামের একজন উকিল তার মুক্তির ব্যবস্থা করেন।
করেছেন (15,170 পয়েন্ট)
+1
২০০২ সালে মাত্র ১১ বছর বয়সে স্টন হর্ণব্যাক নামের আরেকজনকে অপহরণ করা হয়েছিল। দুই বছর পর অপহরণকারীর বাসা থেকে যখন তাকে উদ্ধার করা হয়, তখন দেখা যায় অনেক সুযোগ থাকা সত্ত্বেও সে পালানোর কোনো চেষ্টা করেনি। এমনকি তার কাছে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ পর্যন্ত ছিলো।
করেছেন (15,170 পয়েন্ট)
+1
আরেকজন অস্ট্রিয়ান মেয়ে নাতাশা ক্যাম্পুশ মাত্র দশ বছর বয়সে উলফগ্যাং প্রিকলোপিল এর দ্বারা অপহৃত হয়। প্রায় আট বছর পর সে যখন পালায়, তার অপহরণকারী মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যে রেলের সামনে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে। অন্যদিকে নাতাশা সে মৃত্যুতে শোকার্ত হয়ে ওঠে। পরবর্তীতে সে তার অপহরণকারী সম্পর্কে লিখেছেন-“আমি তার জন্য অনেক অনেক দুঃখ পাচ্ছি, সে খুব দুখী একটা মানুষ ছিলো।”
করেছেন (15,170 পয়েন্ট)
+1
১৯৩৩ সালেও এরকম আরেকটা ঘটনা নজর কাড়ে বিশ্বের। ২৫ বছর বয়সী মেরী ম্যাকইলোরী মে মাসের ২৭ তারিখ সন্ধ্যায় যখন তার বাবার বাসায় গোসল করছিলেন তখন হঠাৎ চারজন লোক দ্বারা অপহৃত হন। ওই চারজন লোকের মধ্যে ছিলেন দুই ভাই জর্জ এবং ওয়াল্টার ম্যাকজি। লোকগুলো তালা ভেঙে ঘরে ঢোকে এবং মেরীর জামা কাপড় পরা পর্যন্ত অপেক্ষা করে। এরপর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় শহর থেকে দূরের এক বাড়িতে এবং তাকে শিকল দিয়ে বন্দি করে রাখা হয়।মেরীর বাবা ধনী রাজনীতিবিদ হওয়ায় অপহরণকারীরা ৬০,০০০ হাজার ডলার মুক্তিপণ চায় এবং পরে ৩০,০০০ হাজার ডলারেই মেরীকে মুক্তি দেয়। পরবর্তীতে অপহরণকারীদের তিনজন ধরা পড়ে এবং আশ্চর্যের বিষয় এই যে, মেরী তখন অপহরণকারীদের পক্ষ নিয়ে বলে যে তারা বন্দিদশায় তার খুবই খেয়াল রাখতো। এমনকি তাদের মধ্যে একজন তাকে ফুলও দেয়। যখন বিচার শেষে তিনজনকে কঠোর শাস্তি দেয়া হয়, মেরী তখন অপরাধবোধে কুঁকড়িয়ে ওঠে। মেরী প্রকাশ্যে তাদের প্রতি সহানুভূতি জানাতে থাকে এবং আদালতকে অনুরোধ করে তাদের শাস্তি কমিয়ে দিতে। পুরো বিচার এবং কারাবাসের সময়টা মেরী ম্যাকজি ভাইদের পাশে থাকে, তাদের সাথে নিয়মিত দেখা করে, এমনকি তাদের জন্যে উপহার পর্যন্ত নিয়ে যেতো।বিশ্বকে অবাক করে দিয়ে তার জীবনের বাকি ঘটনাগুলো ঘটতে থাকে। জীবনের এই কঠিন অগ্নিপরীক্ষা মেরীকে মাল্টিপল নার্ভাস ব্রেকডাউনের দিকে নিয়ে যায়। ১৯৩৯ সালে বাবার মৃত্যুর পর তার মানসিক অবস্থা আরো ভঙ্গুর হয়ে ওঠে। ১৯৪০ সালের ২১শে জানুয়ারি মেরী আত্মহত্যার মাধ্যমে পৃথিবীকে বিদায় জানায়। আর যাবার আগে তার সুইসাইড নোটে লিখে যায়- “আমার চারজন অপহরণকারীই সম্ভবত পৃথিবীতে একমাত্র মানুষ যারা আমায় পুরোদস্তুর বোকা ভাবেনি।”
করেছেন (15,170 পয়েন্ট)
+1
2০০২ সালের ৫ জুন নিজের বাসার শোবার ঘর থেকে অপহৃত হয় মাত্র ১৪ বছর বয়সী এলিজাবেথ স্মার্ট। অপহরণকারী ব্রায়ান ডেভিড মিশেল এবং তার স্ত্রী এলিজাবেথকে বন্দী করে রাখে এবং মিশেল এলিজাবেথকে জোর করে বিয়ে করে ও ধর্ষণ করে। এরপর থেকে প্রায় নয় মাস পর্যন্ত তাকে গাছের সাথে বেঁধে নির্যাতন করা হতো। কোনো রকম অবাধ্যতা তার জন্যে ভয়ঙ্কর শাস্তি নিয়ে আসতো। ধীরে ধীরে এলিজাবেথ একজন আদর্শ বন্দীতে পরিণত হয়। অনেক সুযোগ থাকা সত্ত্বেও এলিজাবেথ পরবর্তী নয় বছরে পালানোর কোনো চেষ্টা করেনি। এমনকি একবার রাস্তায় এক পুলিশ অফিসারের সাথে কথা হলেও সে তার আসল পরিচয় দেয়নি। পরবর্তীতে তাকে অপহরণকারীদের থেকে সরিয়ে নিয়ে আসা সম্ভব হয় এবং ঘটনার সাত বছর পরে সে অপরাধীদের চিহ্নিত করতে রাজি হলে তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়।
করেছেন (15,170 পয়েন্ট)
+1
১৯৭৩ সালে যখন চারজনকে অপহরণ করা হয় সুইডেনের স্টকহোমে অবস্থিত একটি ব্যাংকে ডাকাতির ঘটনায়, তখন পর্যন্ত এর সাধারণ নাম ছিল “Capture bonding syndrome”। দিনটি ছিল ১৯৭৩ সালের ২৩শে অগাস্টের সকাল, স্টকহোমের ব্যাংকটিতে এমন নাটকীয়তার সূত্রপাত হলো যা সারা বিশ্বের খবরের কাগজের প্রথম পাতায় জায়গা করে নিলো এবং মনোবিজ্ঞানের জগতে স্টকহোম সিনড্রোম নামের এক নতুন বিষ্ময়ের জন্ম দিলো।

ব্যাংকে ঢুকে অপরাধীরা তাদের বন্দুক চালিয়ে ঘোষণা করলো যে “The party has just begun”। দুজন ডাকাত তখন পরবর্তী প্রায় ১৩১ ঘন্টার জন্যে চারজনকে জিম্মি করলো, যার মধ্যে তিনজন ছিলো মহিলা এবং একজন পুরুষ। স্টকহোম সিনড্রোম নামটা তখন থেকেই চালু হয় যখন এই চারজন অপহৃত ব্যক্তি মুক্তি পাবার পর অদ্ভুত ব্যবহার করা শুরু করে। মুক্তি পাবার পর গণমাধ্যমে দেওয়া তাদের সাক্ষাৎকারে বিষয়টি আস্তে আস্তে পরিষ্কার হয়ে ওঠে যে, তারা মানসিকভাবে তাদের অপহরণকারীদের সমর্থন করা শুরু করেছে এবং মনে করছে আইনরক্ষাকারী বাহিনী তাদের আঘাত দেওয়ার চেষ্টা করছে। তারা মনে করতে থাকলো যে, অপরাধীরাই তাদের বাঁচানোর চেষ্টা করছে। তারা শুধু অপরাধীদের কোর্টে দোষী হিসেবে চিহ্নিত করতে অস্বীকারই করেনি, বরং তাদের মুক্তির জন্য অর্থ সংগ্রহ করা শুরু করে। এমনকি তাদের মধ্যে একজন মহিলা অপহরণকারীদের একজনের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে যান। স্পষ্টভাবে এই ঘটনাটিতে অপরাধীদের সাথে অপরাধের শিকার ব্যক্তিরা মানসিকভাবে আবদ্ধ হয়ে যায়।
+6 টি ভোট
করেছেন (17,750 পয়েন্ট)
সম্পাদিত করেছেন
স্টকহোম সিনড্রোম হলো এক ধরণের বিশেষ মানসিক পরিস্থিতি যখন কোনো ভুক্তভোগী ব্যক্তি অপরাধীর প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করতে শুরু করে। এই পরিস্থিতিতে ওই ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তির মধ্যে এমন সব মানসিক উপসর্গ লক্ষ্য করা যায় যেটা খুবই বিরল- যেমন ব্যক্তিটি অপরাধীর প্রতি দুর্বল এবং আবেগতাড়িত হয়ে যায়। এসময় সে আর ওই অপরাধীকে একজন অপরাধী হিসেবে মানতে চায় না।

এই অদ্ভুত আচরণ ধরা পরে সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে একটি ব্যাংক ডাকাতিকে কেন্দ্র করে। সিনড্রোমটি বিস্তারিত বুঝতে হলে প্রথমে ঘটনার পেছনের পটভূমিটা ভালো করে জানতে হবে।

মূল ঘটনাঃ
প্রায় ৪৬ বছর আগে, ১৯৭৩ সালের ২৩ অগাস্ট স্টকহোমের একটি ব্যস্ততম ব্যাংক যেটি বর্তমানে নরডিয়া ব্যাংক নামে পরিচিত- সেখানে একজন অস্ত্রধারী দুর্বৃত্ত হামলা করে। ব্যাংকটির অবস্থান স্টকহোমের কেন্দ্রে নামক একটি চত্বরে। এজন্য সিন্ড্রোমটি প্রথমে নামে পরিচিত ছিল, পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হওয়ায় Stockholm syndrome নামে পরিচিত হয়।

যাই হোক, ওই আক্রমণকারী ডাকাত ছিল জাতীয়ভাবে পরিচিত একজন অপরাধী, যিনি পূর্বেও অনেকবার কারাগারে ছিলেন। ব্যাংকে মুখোশ পরিহিত অবস্থায় সাথে একটি সাব-মেশিনগান নিয়ে ঢুকে তিনি প্রথমেই চারজন ব্যাংক কর্মকর্তাকে জিম্মি করে নেন, এদের মধ্যে তিনজন নারী এবং একজন পুরুষ। অস্ত্রটি তিনি জ্যাকেট-এর নিচে লুকিয়ে ব্যাংকে প্রবেশ করেন। এরপর সেখানে এক ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় এবং চারদিক থেকে পুলিশ নিয়োজিত হয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে চেষ্টা করে। কিন্তু আমরা সবাই ডাকাতের হাতে জিম্মি হওয়ার ঘটনা জানি (যেমন ঢাকার হোলি-আর্টিজানে একটি), এটি একটি সংকটময় সময় এবং জিম্মিকারীদের নিবৃত্ত করা অতটা সহজ কাজ নয়। বিপদ যেটি হতে পারে সেটি হলো বন্দিকারীদের দাবি মানতে না পারলে তারা যে কোনো সময়ই ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিপদের মুখে ঠেলে দিতে পারে। ডাকাতটি প্রথমে ব্যাংকে ঢুকেই কক্ষের ছাদে এলোপাথাড়ি গুলি ছুড়ে এবং ইংরেজিতে এই গানের লাইন বলে চিৎকার দিতে থাকে- “The party has just begun”। এরপর মাঝে মাঝে চেয়ার এ বসে মাতালের সুরে গান গাইতে থাকে, অর্থাৎ আক্রমণের শুরুর দিকে ডাকাত বেশ ভৌতিক আচরণ করতে থাকে। ব্যাংকের বাইরে থেকে পুলিশের কার্যক্রম এবং সার্বক্ষণিক ঘটনার আপডেট তখন একটি সুইডিশ টিভি লাইভ সম্প্রচার করে।

ব্যাংক কর্মকর্তাদের মুক্তি দেয়ার জন্য জিম্মিকারী পুলিশকে নিম্নোক্ত শর্তগুলো দেয়-

১) ডাকাতের বন্ধু কে তার কাছে এনে দিতে হবে (ওই বন্ধুও আরেক ডাকাত)। এবং সাথে এগুলোও আনতে হবে -
২) ৩ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনার
৩) বুলেট-প্রুফ ভেস্ট
৪) দুইটি অস্ত্র
৫) হেলমেট
৬) একটি গাড়ি

পরিস্থিতির এক পর্যায়ে ওই ডাকাত সুইডেনের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এর সাথে ফোনে কথা বলার সুযোগ পায় এবং প্রধানমন্ত্রীকে তিনি তার শর্ত পূরণ না করলে ব্যাংকারদের মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এভাবে টানা ছয়দিন বিভিন্ন নাটকীয় ঘটনা ঘটে এবং জিম্মিকারীরা ২৮ অগাস্ট পর্যন্ত সবাইকে জিম্মি করে রাখে। এর মধ্যে একজন নারী ব্যাংকারের সাথেও প্রধানমন্ত্রীর কথা হয় এবং তিনি প্রধামন্ত্রীর কাছে তাদের উদ্ধারের জন্য ব্যবস্থা নিতে বলেন। এসময় ওই নারী প্রধামন্ত্রীকে এটিও বলেন যে ডাকাতের আচরণে তিনি অনেক ভীত।

সে সময়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা এতটা উন্নত ছিল না, তাই দ্রুত ব্যবস্থা নেয়াও অনেকটা কষ্টকর ছিল। তাছাড়া ওই ব্যাংকারদের জীবিত রাখাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ ছিল, তাই কোনোভাবেই যাতে তাদের ক্ষতি না হয় সেজন্য ডাকাতের সাথে বিভিন্ন শর্ত আদানপ্রদান করে পুরো ছয়দিন ব্যাস্ত রাখা হয়েছিল। ডাকাতকে আপাতত শান্ত রাখতে শর্তানুযায়ী তার বন্ধুকে তার কাছে এনে দেয়া হয়েছিল।

আর ডাকাতের সবগুলো শর্ত যদি পূরণ করা হয় তাহলে ঘটনা অন্যদিকে মোড় নিতো, কারণ ওই ডাকাত তার বন্ধুর সাথে মিলে বাইরে এসে এলোপাথাড়ি গুলি চালাতো (যেহেতু তাদের নিজেদের বুলেট-প্রুফ ভেস্ট থাকবে)। এক পর্যায়ে একটি অদ্ভুত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়- কোনোভাবে মৌমাছির ঝাঁক পাঠিয়ে ভিতরে জিম্মিকারীকে দুর্বল করে দেয়া যেতে পারে। কিন্তু তাতেও সমাধান নয় না, কারণ এতে ব্যাংকারদেরও ক্ষতি হতে পারে। এক পর্যায়ে পুলিশ ছাদের উপর থেকে ড্রিল মেশিন দিয়ে ছিদ্র করে কোনোভাবে লুকিয়ে ডাকাত দুইজনকে আত্মসমর্পনে বাধ্য করতে গেলেও তারা ছিদ্র দিয়ে পুলিশের উদ্দেশ্যে পাল্টা গুলি ছুড়ে।

এভাবে কোনো উপায় না দেখে টানা ছয়দিন পর পুলিশ এক বিশেষ কায়দায় ডাকাতদের একটু দূরে সরিয়ে সেখানে গ্যাস ছুড়ে তাদের কোনোভাবে দুর্বল করা হয় এবং এই নাটকের অবসান ঘটে।

এ ঘটনাটি তখন সারা বিশ্বের সংবাদ মাধ্যমে হৈচৈ ফেলে দেয় এবং সুইডেনের জন্য এটি ছিল একটি কালো অধ্যায়, কারণ এ ধরণের জাতীয় দুর্যোগ এখানে খুবই অপ্রত্যাশিত।

পরবর্তীতে এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হয় এবং একজন ডাকাত তার অর্ধেক জীবনই কারাগারে কাটিয়ে দেন। দুজন ডাকাতই এখন পর্যন্ত জীবিত এবং তারা অপরাধ ছেড়ে স্বাভাবিক জীবন-যাপন করছে।

সিনড্রোমের উৎপত্তিঃ

উপরোক্ত ঘটনাটি আমাদের কাছে পিলে চমকে যাওয়ার মতো একটি ঘটনা। কিন্তু জুলুম এবং হিংস্রতার পাশাপাশি একজন মানুষের মধ্যে মানবিক উপলব্ধিও থাকে। এ ধরণের জিম্মি পরিস্থিতিতেও এসব মানবিক দয়া এবং অনুভূতির উদয় হওয়াও স্বাভাবিক। যেহেতু দীর্ঘ সময় ধরে ব্যাংকের কর্মকর্তা এবং ডাকাত খুব কাছাকাছি অবস্থান করেছে এবং দুই পক্ষই দুইটি ভিন্ন মানসিক সংকটের মুখোমুখি হতে হয়েছে তাই তাদের মধ্যে বন্ধন তৈরী হওয়ায় অস্বাভাবিক কিছু নয়। জিম্মি অবস্থায় একজন নারী কর্মকর্তা (Kristin Enmark) রাতে যখন শীতে কাঁপছিলেন ডাকাত (Jan-Erik) ওই নারীর গায়ে নিজের উল জ্যাকেট জড়িয়ে দেয়, যখন ওই নারী রাতে দুঃস্বপ্ন দেখে তখন তাকে সান্ত্বনা এবং অভয় দেয়। এমনকি তার অস্ত্র থেকে একটি গুলি (উপহার হিসেবে) বের করে ওই নারীকে দেয় এবং স্মারকচিহ্ন হিসেবে রেখে দিতে বলে।

অন্য একজন নারী (Birgitta Lundblad) যখন তার পরিবারের কাছে কথা বলার জন্য ফোনে চেষ্টা করে পাচ্ছিলো না তখন ডাকাত তাকে বার বার চেষ্টা করে পরিবারের সাথে যোগাযোগ করতে উৎসাহ দেয়। একসময় ওই বন্দিদের শারীরিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার জন্য ভেতরে একজন পুলিশ অফিসার সাময়িকের জন্য ঢুকার সুযোগ পায়। তখন তিনি বন্দুকধারীদের সাথে ওই কর্মকর্তাদের সম্পর্ক দেখে অবাক হয়ে যান! তিনি বাইরে এসে সাংবাদিকদের বলেন, "আমার মনে হয় না বন্দুকধারীরা তাদের কোনো ক্ষতি করবে !"

এ ঘটনার অবসান হওয়ার পর এটা বোঝা গিয়েছিলো যে ওই ডাকাতরা কখনোই বন্দিদের ক্ষতি করতো না, বরং ভয় দেখিয়ে দাবি পূরণ করা ছিল ডাকাতদের মূল উদ্দেশ্য। ডাকাতরা বন্দিদের কোনো বিন্দু প্রকার হেনস্থা করে নি। যখন পুলিশ ডাকাতদের ধরে নিয়ে আসছিলো তখন তারা সবার সাথে করমর্দন এবং আলিঙ্গন করে বিদায় নেয়।

পরবর্তীতে ব্যাংকের ওই কর্মকর্তাদের সাইকোলজিস্ট এর পরামর্শে দীর্ঘদিন চলতে হয়েছিল এবং একজন কর্মকর্তা (Birgitta) সাইকোলোজিস্টকে প্রশ্ন করেন- "আমার কোথাও কি কোনো ভুল হচ্ছে, অথবা এটা কি আমার সমস্যা- আমার ডাকাতদের প্রতি কোনো ঘৃণা জন্ম হয় নি কেন?"

ঘটনা পরবর্তী আলোচনা এবং সিনড্রোম কেন্দ্রিক আগ্রহঃ

১৯৭৪ সালে Stockholm Syndrome পরিভাষাটি অভিধানে যুক্ত হয় এবং গবেষকদের নজরে আসে। এই পরিভাষাটি প্রথম ব্যবহার (নামকরণ ) করেন নামের একজন সুইডিশ মনস্তত্ত্ববিদ । বর্তমানে এটি নিয়ে মনোবিজ্ঞান গবেষণা হচ্ছে এবং চিকিৎসকরা এটিকে বলে আখ্যা দেয় । Contested illness বলতে বিতর্কিত রোগ বোঝানো হয়, অর্থাৎ এটি কি একটি পরিপূর্ণ মানুষিক রোগ কিনা সেটি পরিষ্কার নয়। অনেক মনোবিজ্ঞানীদের মতে এটিকে (PTSD) বলা যেতে পারে, কিন্তু সেটিও পুরোপুরি নিশ্চিত নয়। স্টকহোম সিনড্রোমের যে বিশেষ বৈশিষ্ট পাওয়া গিয়েছে সেগুলো হলো-

১) ব্যাংক কর্মকর্তাদের সাথে জিম্মিকারীর কোনো পূর্ব সম্পর্ক না থাকা সত্ত্বেও তারা পরস্পরের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পরে, যেটাকে বলা যায় Irrational relationship ।

২) ডাকাতদের বিচার সম্পন্ন করতে আদালত এবং পুলিশকে কোনোভাবে তারা সাহায্য করতে রাজি হয় নি ।

অপরাধীদের সাথে Irrational relationship-এর এ ধরণের আরো নমুনা আছে, যেমন- ১৯৩৩ সালে আমেরিকায় নামের মেয়েকে এক ব্যাক্তি কিডন্যাপ করে এবং দেয়ালের সাথে শিকল দিয়ে বেঁধে নির্যাতনও করে । কিন্তু পরবর্তীতে ওই নারী এটা অস্বীকার করে এবং কিডন্যাপারকে জেল থেকে ছাড়িয়ে আনতে সহায়তা করে ।

স্টকহোমের ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে অতি সম্প্রতি “Stockholm” নামে একটি ইংরেজি মুভিও বানানো হয় ।

©জাবির আল ফাতাহ

সম্পর্কিত প্রশ্নগুচ্ছ

+1 টি ভোট
2 টি উত্তর 724 বার দেখা হয়েছে
+20 টি ভোট
2 টি উত্তর 351 বার দেখা হয়েছে

10,775 টি প্রশ্ন

18,459 টি উত্তর

4,742 টি মন্তব্য

266,274 জন সদস্য

106 জন অনলাইনে রয়েছে
1 জন সদস্য এবং 105 জন গেস্ট অনলাইনে
  1. Nafis Hasan

    220 পয়েন্ট

  2. Farhan Anjum

    140 পয়েন্ট

  3. sobujalam

    110 পয়েন্ট

  4. Saif Sakib

    110 পয়েন্ট

  5. Tasfima Jannat

    110 পয়েন্ট

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত বিজ্ঞান প্রশ্নোত্তর সাইট সায়েন্স বী QnA তে আপনাকে স্বাগতম। এখানে যে কেউ প্রশ্ন, উত্তর দিতে পারে। উত্তর গ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্যই একাধিক সোর্স যাচাই করে নিবেন। অনেকগুলো, প্রায় ২০০+ এর উপর অনুত্তরিত প্রশ্ন থাকায় নতুন প্রশ্ন না করার এবং অনুত্তরিত প্রশ্ন গুলোর উত্তর দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রতিটি উত্তরের জন্য ৪০ পয়েন্ট, যে সবচেয়ে বেশি উত্তর দিবে সে ২০০ পয়েন্ট বোনাস পাবে।


Science-bee-qna

সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ট্যাগসমূহ

মানুষ পানি ঘুম পদার্থ - জীববিজ্ঞান চোখ এইচএসসি-উদ্ভিদবিজ্ঞান এইচএসসি-প্রাণীবিজ্ঞান পৃথিবী রোগ রাসায়নিক শরীর #ask রক্ত আলো মোবাইল ক্ষতি চুল কী #science চিকিৎসা পদার্থবিজ্ঞান সূর্য প্রযুক্তি স্বাস্থ্য মাথা প্রাণী গণিত বৈজ্ঞানিক মহাকাশ পার্থক্য #biology এইচএসসি-আইসিটি বিজ্ঞান খাওয়া গরম শীতকাল #জানতে কেন ডিম চাঁদ বৃষ্টি কারণ কাজ বিদ্যুৎ রাত রং উপকারিতা শক্তি লাল আগুন সাপ মনোবিজ্ঞান গাছ খাবার সাদা আবিষ্কার দুধ উপায় হাত মশা শব্দ মাছ ঠাণ্ডা মস্তিষ্ক ব্যাথা ভয় বাতাস স্বপ্ন তাপমাত্রা গ্রহ রসায়ন উদ্ভিদ কালো পা কি বিস্তারিত রঙ মন পাখি গ্যাস সমস্যা মেয়ে বৈশিষ্ট্য হলুদ বাচ্চা সময় ব্যথা মৃত্যু চার্জ অক্সিজেন ভাইরাস আকাশ গতি দাঁত কান্না আম হরমোন বাংলাদেশ
...