অরোরা বা মেরুজ্যোতি হলো একটি প্রাকৃতিক ঘটনা যা রাতে এবং শুধুমাত্র মেরু অঞ্চলে দেখা যায়। নীল, লাল, হলুদ, সবুজ এবং কমলা আলো এমনভাবে স্থানান্তরিত হয় যেন নরমভাবে ফুঁ দেওয়া পর্দার মতো আকৃতি পরিবর্তন করে। অরোরা প্রায় প্রতি রাতে আর্কটিক এবং অ্যান্টার্কটিক সার্কেলের কাছে দৃশ্যমান হয়। যা নিরক্ষরেখার প্রায় ৬৬.৫ ডিগ্রি উত্তর এবং দক্ষিণে অবস্থিত।উত্তরের মেরুজ্যোতিকে "অরোরা বোরিয়ালিস " বা উত্তরের আলো এবং দক্ষিণের মেরুজ্যোতিকে " অরোরা অস্ট্রালিস" বা দক্ষিণী আলো বলে।
অরোরা বা মেরুজ্যোতি কিভাবে সৃষ্টি হয়?
মেরুজ্যোতি সৃষ্টি হওয়া সূর্যের ওপর নির্ভরশীল। সূর্য হলো সুপারহট গ্যাসের নক্ষত্র যাতে বৈদ্যুতিক চার্জযুক্ত কণা রয়েছে। সূর্যের পৃষ্ঠ থেকে ক্রমাগত চার্জ যুক্ত কণা হিসেবে প্রবাহিত আয়ন গুলোকে সৌর বায়ু বলে। এ সৌর বায়ু পৃথিবীর কাছে আসার সাথে সাথে পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রের সাথে মিলিত হয়। পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র না থাকলে সৌর বায়ু পৃথিবীর ভঙুর বায়ুমন্ডলকে উড়িয়ে দিত ফলে জীবজগৎ সৃষ্টি হতো না। সৌর বায়ুর অধিকাংশই পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র দিয়ে অবরুদ্ধ হয় এবং চার্জ যুক্ত আয়ন গুলো গ্রহের চারপাশে জোর করে ডুকতে থাকে। যদিও বেশিরভাগ সৌর বায়ু পৃথিবীর চুম্বক ক্ষেত্রে আটকা পড়ে কিন্তু কিছু আয়ন গ্রহের চারপাশে রিং আকৃতির নির্দিষ্ট অঞ্চলে সংক্ষিপ্ত এলাকায় আটকা পড়ে। এই অঞ্চলটি মূলত বায়ুমন্ডলের একটি অঞ্চল যাকে আয়নোস্ফিয়ার বলে।
আয়নোস্ফিয়ারে এসে সৌর বায়ুর আয়ন গুলো পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের অক্সিজেন এবং নাইট্রোজেনের পরমাণুর সাথে সংঘর্ষ করে। এই সংঘর্ষের সময় নির্গত শক্তি পৃথিবীর মেরুর চারপাশে একটি রঙিন আলোকিত হ্যালো সৃষ্টি করে একেই মেরুজ্যোতি বা অরোরা বলে।
বেশিরভাগ অরোরা পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৯৭-১০০০ কিলোমিটার উপরে ঘটে। সবচেয়ে সক্রিয় অরোরা তখন ঘটে যখন সৌর বায়ু সবচেয়ে শক্তিশালী হয়। সৌর বায়ু মোটামুটি স্থির থাকে কিন্তু সৌর আবহাওয়া সূর্যের বিভিন্ন অংশের উত্তাপ এবং শীতলতা প্রতিদিন পরিবর্তন হয়।চৌম্বকীয় ঝড় এবং সক্রিয় মেরুজ্যোতি আয়ন গুলো কখনও কখনও যোগাযোগ ব্যবস্থাকে ব্যাহত করতে পারে।রেডিও এবং রাডার সংকেতকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। সৌর বায়ুর আয়ন গুলো যদি বায়ুমন্ডলের অক্সিজেন পরমাণুগুলোকে আঘাত করে তবে লাল আভা তৈরি হয়।যখন নিম্ন উচ্চতায় আয়নগুলো অক্সিজেন পরমাণুকে আঘাত করে তখন সবুজ-হলুদ আভা সৃষ্টি হয়। লালচে এবং নীলাভ আলো যা প্রায়ই অরোরার নিচের প্রান্তে দেখা যায় তা মূলত আয়ন গুলোর নাইট্রোজেন পরমাণুকে আঘাত করার ফলে উৎপন্ন হয়। হাইড্রোজেন এবং হিলিয়াম পরমাণুতে আঘাতকারী আয়ন গুলো নীল এবং বেগুনি অরোরা তৈরি করতে পারে।
মেরুজ্যোতি সবসময়ই রাতের আকশের জন্য একটি সুন্দরতম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।
Source: National Geographic
© Mariam Akter Shahana
Team Science Bee