হাতের বা পায়ের আংগুল ফুটানো যাকে অন্যভাবে বললে Knuckle cracking বলা হয় এটি অনেকের কাছে একটি সাধারন আনন্দের কিংবা স্বস্তির বিষয়। অনেকে মনে করেন এটি আমাদের স্নায়ুবিক শক্তি মোকাবেলার একটি উপায় হয়ে উঠতে পারে। বা সহজ ভাবে বললে টেনশন মুক্ত করার উপায়। শুধু এখানেই সীমাবদ্ধ নয়। অনেকের কাছে এটি স্রেফ বিরক্তিকর একটি কাজ যা অন্যরা করে থাকে। আসুন জেনে নেই অতি সাধারন মুচরে আওয়াজ টা কোথেকে আসে এবং এর কোনো ক্ষতির দিক থাকতে পারে কিনা। হাতের এই আংগুল ফুটানো নিয়ে আমরা যা জানি তার কিছু অংশ নিচে উল্লেখ করা হলো ।
আমরা সকলের জানি আমাদের আংগুল গুলো অনেক ছট ছোট অস্থির জয়েন্টের এক সমষ্ঠি। এজন্য আমরা যখন আংগুল ফুটাই তখন মনে হয় যেন এই জয়েন্ট বা জোড়াগুলোর মধ্যে স্থান প্রসারনের ফলে শব্দের সৃষ্টী হয়। আমাদের এই ছোট ছোট অস্থিগুলোর মাঝে কিছু তরল অংশ আছে। সাথে রয়েছে কিছু বায়বীয় অংশের স্থান। ( এগুলো সম্পর্কে পরবর্তীতে বলবো) । বায়বীয় অংশটুকুতে কিছু বায়ু বুদ বুদ আকারে থাকে। আমরা যখন মোচড় দেই তখন এই বুদ বুদ গুলোই ফেটে যায় এবং আওয়াজের সৃষ্টি করে। এটা অনেকটা বেলুন উড়িয়ে দেওয়ার মতো। একই আংগুল বা জয়েন্ট দুবার ফাটতে না পারার কারণ হল যে জয়েন্টে আবার গ্যাসের বুদবুদ জমতে কিছু সময় লাগে।
আংগুল ফুটানো সম্ভবত নিরীহ. যদিও অত্যধিক জোরালো হাঁটু ফাটা থেকে মাঝে মাঝে স্থানচ্যুতি বা টেন্ডনে আঘাতের খবর পাওয়া গেছে, তবে এই ধরনের সমস্যাগুলি খুব ব্যতিক্রম বলে মনে হয়।
এবার আসি আংগুল ফুটানো আসলেই ক্ষতিকর?
এ বিষয়ে সব চেয়ে বিশ্বাস যোগ্য প্রমান গুলোর একটি হলো এটি ক্ষতিকর নয়। কিভাবে? সুত্র কি? সুত্রটি আসলে ক্যালিফোর্নিয়ার একজন চিকিত্সকের কাছ থেকে এসেছে যিনি নিজের উপর পরিচালিত একটি পরীক্ষায় রিপোর্ট করেছেন। তার জীবদ্দশায়, তিনি নিয়মিত শুধুমাত্র একটি হাতের নাকল ফাটাতেন। এই আচরণের কয়েক দশক পরে তিনি নিজের উপর এক্স-রে পরীক্ষা করেন এবং তার হাতের মধ্যে আর্থ্রাইটিসের কোনও পার্থক্য খুঁজে পাননি।
কিন্তু এতে করে যে কিছু মানুষের হাড়ের সমস্যা সৃষ্টি হয় ওটা? তার উত্তর হচ্ছে এই আচরণের সাথে সম্পর্কিত সমস্যার বিরল মেডিকেল রিপোর্ট রয়েছে যা কতটা বল প্রয়োগ করা হয় এবং একজনের নির্দিষ্ট কৌশলের সাথে সম্পর্কিত হতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ, জয়েন্ট ডিসলোকেশন এবং টেন্ডন ইনজুরি বর্ণনা করা হয়েছে আংগুল ফাটানোর চেষ্টার পরে। 1990 সালে প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে 74 জন লোকের মধ্যে যারা নিয়মিত তাদের আংগুল ফাটান , তাদের গড় ধরার শক্তি কম ছিল এবং 226 জনের তুলনায় হাত ফুলে যাওয়ার ঘটনা বেশি ছিল যারা তাদের আংগুল ফাটান নি ফাটেনি। যাইহোক, আর্থ্রাইটিসের ঘটনা উভয় গ্রুপে একই ছিল।এবং আরেকটি গবেষণায় একটি গাণিতিক মডেল তৈরি করা হয়েছে যা নিশ্চিত করতে সাহায্য করেছে যে শব্দটি গ্যাসের বুদবুদ ভেঙে যাওয়া থেকে আসে। জন্য বলা যায় এটি কোনো সমস্যা না। কিন্তু কিছু বিরল ঘটনাও রয়েছে অতিরিক্ত বলে চাপ দিলে হাড়ের অংশ নিজের যায়গা থেকে সড়েও যেতে পারে। তাই এটা খেয়াল রাখতে হবে। আপনি নিজের মানসিক শান্তির জন্য আংগুল ফুটাচ্ছেন ফুতান। কিন্তু সব দিক বিবেচনা রেখে যেন এক মাত্রায়ই আপনার উপর চাপ পরে। ্পোস্টের শুরুতে এই ফুটানো কারিদের ছড়াও আরেকজনের কথা বলেছিলাম যে অনেকের কাছে এটি স্রেফ বিরক্তিকর। তো অনেকে এটিকে করতে না করে। তো শেষ বেলা একটা কথাই থাকবে "আপনি যদি চান যে অন্য কেউ তাদের আংগুল ফাটা বন্ধ করুক, তবে তাদের বলার চেয়ে আপনার আরও ভাল কারণ দরকার যে তারা তাদের জয়েন্টগুলি নষ্ট করছে।"
লিখাটি পাব্লিশ করেছেন হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল থেকে
Robert H. Shmerling MD, Senior Faculty Editor, Harvard Health Publishing
ক্রেডিটঃ Harvard Health Publishing
সংগ্রহেঃ মাহফুজুর রহমান রিদোয়ান