লেখা : শুভাশিস চিরকল্যাণ পাত্র
চান্দ্রজোয়ার সৌরজোয়ারের দ্বিগুণ হয়। এ নিয়ে অনেকের মধ্যে একটা ভুল ধারণা আছে। কেউ কেউ মনে করেন যে চাঁদ কাছে আছে বলে পৃথিবীর উপর চাঁদের আকর্ষণ সূর্যের আকর্ষণের দ্বিগুণ, তাই চান্দ্রজোয়ারের তীব্রতা সৌরজোয়ারের দ্বিগুণ হয়। আসলে কিন্তু তা নয়। পৃথিবীর উপর চাঁদের আকর্ষণ সূর্যের আকর্ষণের চেয়ে অনেক কম, তবুও চান্দ্রজোয়ার সৌরজোয়ারের চেয়ে বেশী হয়। এর কারণটা আমি অন্যত্র বিশদে বলেছি। এখানে সংক্ষেপে বলতে গেলে নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র অনুসারে পৃথিবীর উপর সূর্য ও চাঁদের আকর্ষণ তাদের ভরের সমানুপাতিক এবং দূরত্বের বর্গের ব্যস্তানুপাতিক, কিন্তু ওদের জোয়ারভাঁটা সৃষ্টিকারী বলটা (tidal force) উভয়ের ভরের সমানুপাতিক ও দূরত্বের ঘনের ব্যস্তানুপাতিক (বর্গের নয়)। এর কারণ হল জোয়ারের মান চাঁদের (বা সূর্যের) মোট আকর্ষণের উপর নির্ভর করে না, তা নির্ভর করে পৃথিবীর বিভিন্ন বিন্দুতে চাঁদের (বা সূর্যের) আকর্ষণ বলের তারতম্যের উপর। যারা কলনবিদ্যা জানেন তাদের জন্য বলতে পারি যে, চান্দ্রজোয়ার ও সৌরজোয়ারের অনুপাত পৃথিবীর উপর ওদের আকর্ষণ বলের (F) সমানুপাতিক নয়, বরং দূরত্বের (r) সাপেক্ষে আকর্ষণ বলের অবকল সহগের (dF/dr, differential coefficient) সমানুপাতিক। F যদি r-এর ব্যস্তানুপাতিক হয় তবে গাণিতিক নিয়মে দেখানো যায় যে, dF/dr অবকল সহগটি r-এর ঘনের ব্যস্তানুপাতিক হবে। সূর্য চাঁদের চেয়ে প্রায় ৩৯০ গুণ দূরে আছে এবং তার ভর চাঁদের প্রায় ২কোটি ৬৭ লক্ষ গুণ। এর থেকে হিসাব করলে পাবেন পৃথিবীর উপর সূর্যের আকর্ষণ চাঁদের চেয়ে ১৭৬ গুণ বেশী, কিন্তু চাঁদের জোয়ারসৃষ্টিকারী বল সূর্যের জোয়ারসৃষ্টিকারী বলের প্রায় ২ গুণ। এইসব অনুপাতের গাণিতিক হিসাবগুলি কিছু শক্ত নয়।