যে সব খাবার দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে
১) সবুজ শাক-সবজি
বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই শাক-সবজি খেতে তেমন একটা পছন্দ করেন না। কিন্তু শাক না খেলে চোখের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটা সম্ভব নয় ।আর চোখে যদি আলো না থাকে, তাহলে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। অনেক সময় অন্ধত্বও দেখা দিতে পারে। এ সমস্যা সমাধানে অনেকেই প্রথমে চশমা ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু চশমা ব্যবহার করাটাই মূল সমাধান নয়।কেননা বয়স যত বাড়তে থাকবে চোখের দৃষ্টি শক্তি তত কমতে থাকবে। তাই তো প্রতিদিন নিয়ম করে সবুজ শাক সবজি খেতে পারেন। কারণ এই ধরনের শাকে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং জিয়াক্সেনথিন নামে বেশ কিছু উপকারি উপাদান থাকে। এ উপাদানগুলো ছানি ছাড়াও একাধিক চোখের রোগ থেকে আপনাকে মুক্তি দেবে।
ভিটামিন এ জাতীয় খাবার খেতে হবে বেশি করে যথা: মিষ্টি পেঁপে, কাঁঠাল, কুমড়া, কালো কচু শাক, হেলেঞ্চা শাক, পুঁই শাক, লাউ শাক, ধনিয়া পাতা, পাট শাক, গাজর, মিষ্টি আলু, ডিম, কলিজা, মলাঢেলা ছোট্ট মাছ।
এছাড়া ফ্লাক্স সিডস, ওয়ালনাটস, পেশতা ও বাঁধাকপিতে পাওয়া যায় এধরনের চর্বি। আর বিটা ক্যারোটিন পাওয়া যায় গাজর এবং সবুজ শাক-সবজি, ফলমূলে। লিউটিন পাওয়া যায় ডিমের সাদা অংশে। চোখের জ্যোতি বাড়াতে এই লিউটিন সহায়ক।
২) ডিম
ডিমের সাদা অংশ ছাড়াও সবুজ শাক-সবজিতেও থাকে প্রচুর লিউটিন।ডিমে থাকা উপকারী পদার্থ শরীরে লুউটিন, জিয়াক্সেনথিন এবং জিঙ্কের পরিমাণ বাড়াতে সহায়তা করে। এই উপাদানগুলি চোখের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে দারুন ভাবে সাহায্য করে থাকে।
৩) লেবু জাতীয় ফল
মৌসম্বি লেবু , কমলা লেবু এবং পাতি লেবু বেশি করে খাওয়া শুরু করুন। এই সব ফলে প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন সি রয়েছে। এই ভিটামিগুলো ছানি প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা রাখে। সেই সঙ্গে দৃষ্টিশক্তিরও উন্নতি ঘটায়।
৪) বাদাম
বদামে থাকা উপস্থিত ভিটামিন চোখের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । তাই যদি চশমা ব্যবহার করতে না চান, তাহলে আজ থেকেই রোজ ডায়েটে বাদামকে অন্তর্ভুক্ত করুন। দেখবেন উপকার পাবেন।
৫) মাছ
পুষ্টিবিদদের মতে চোখের জ্যোতি বা দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড, বিটা ক্যারোটিন ও লিউটিন দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে উপকারী। ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড প্রধানত আসে মাছ থেকে। ছোট মাছ তো বটেই সেই সঙ্গে সামদ্রিক মাছও খেতে হবে। আসলে সামুদ্রিক মাছে উপস্থিত ফ্যাটি অ্যাসিড দৃষ্টিশক্তির উন্নতিতে সাহায্য করে।
৬) ভূট্টা
ভূট্টাতে প্রচুর পরিমাণ লুটেইন এবং জিয়াক্সেনথিন রয়েছে। এই দুটি উপাদান শরীরের জন্য খুবই উপকারী । তাই ভুট্টা নিয়মিত খেলে চোখের উন্নতি ঘটবে।
ব্যায়াম, যা চোখের ক্লান্তি দূর করার পাশাপাশি দৃষ্টিশক্তির উন্নতিতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আসুন জেনে নেওয়া যাক কী সেই ব্যায়ামগুলি...
১. হাতের তালু আর চোখ
খুব ব্যস্ত নাকি কম্পিউটারে। তাহলে বন্ধু একটু সময় বের করে কয়েক মিনিট হাতের তালুটা চোখের উপর রাখুন দেখি! তবে চোখের উপর চাপ দেবেন না যেন! এমনটা কয়েক মিনিট করে রাখলেই দেখবেন মন এবং চোখের স্ট্রেস কমতে থাকবে। সেই সঙ্গে চোখের ক্লান্তিও দূর হবে। আর চাখের ক্লান্তি দূর হলে চোখের কোনও ধরনের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা যেমন কমবে, তেমনি দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়ার আশঙ্কাও আর থাকবে না।
২. কথায় কথায় চোখ পিটপিট করতে ভুলবেন না যেন!
বেশ কিছু স্টাডিতে দেখা গেছে কম্পিউটার, মোবাইল বা যে কোনও ডিজিটাল স্ক্রিনে কাজ করার সময় আমাদের চোখের পাতা একেবারেই পড়তে চায় না। ফলে চোখের উপর চাপ বাড়তে শুরু করে। সে কারণেই যারা দিনের বেশিরভাগ সময় কম্পিউটারে কাজে করেন, তাদের কিছু সময় পরপর চোখ পিট পিট করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। এমনটা করলে চোখের ক্লান্তি দূর তো হয়ই। সেই সঙ্গে চুলকানি এবং ড্রাই আইয়ের মতো সমস্যাও দূর হয়। এখন প্রশ্ন হল কতবার চোখ পিট পিট করতে হবে? চিকিৎসকেরা বলে থাকেন কম করে ৫ সেকেন্ড যদি এমনটা করা যায় তাহলে চোখের উপকার পাওয়া যাবে।
৩. বলের মতো ঘোরাতে থাকুন চোখের মণি
আপনি কি চান বয়স বাড়লেও চোখ তরতাজা থাকুক? তাহলে বন্ধু দিনের মধ্যে কম করে ২ মিনিট খরচ তো করতেই হবে! আর এই দু মিনিটে করবেন কী? তেমন কিছু না! প্রথমে ঘড়ির কাঁটার দিকে এবং তারপর ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে চোখের মণিকে ঘোরাতে হবে। তবে পুরো ব্যায়ামটা খুব ধীরে ধীরে করবেন। এমনটা প্রতিদিন ২-৩ মিনিট করলেই দেখবেন দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটতে শুরু করেছে। সেই সঙ্গে মনযোগও বৃদ্ধি পাবে।
৪. ঠান্ডা-গরম পানিতে সেক দিতে ভুলবেন না
একটা বাটিতে গরম পানি আর আরেকটা বাটিতে ঠাণ্ডা পানি নিয়ে নিন। তারপর একটা তোয়ালে গরম পানিতে ডুবিয়ে কিছু সময় চোখের ওপর রাখুন। তারপর পানি দিয়ে একই ভাবে চোখে সেক দিন। এমনটা কয়েক মিনিট করলে সারা দিন ধরে কাজ করতে করতে চোখের যে ক্ষতি হয়েছে, তা ঠিক হতে শুরু করবে। সেই সঙ্গে কান্তি দূর হবে এবং দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটবে।
৫. ফোকাস শিফটিং এক্সারসাইজ
চোখের পেশির ক্ষমতা বাড়াতে এই ব্যায়ামটি দারুন কাজে আসে। এক্ষেত্রে চোখের একেবারে সামনে যে বস্তুটি আছে তার দিকে তাকান। ৫ সেকেন্ড তাকিয়ে থাকার পর তার থেকে একটু দূরে রয়েছে এমন কিছুর দিকে এক দৃষ্টিতে পুনরায় ৫ সেকেন্ড তাকিয়ে থাকুন। এমনটা করতে থাকলে চোখের পেশির কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। আর এমনটা হলে স্বাভাবিকভাবেই দৃষ্টিশক্তিও বাড়তে শুরু করে।
চোখে সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তার এর পরামর্শ নিন।চোখের অসুখ থাকলে তো সময় অনুযায়ী চিকিৎসকের কাছে যেতেই হবে। অসুখ না থাকলেও বছরে দু’বার চক্ষুবিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়া খুবই প্রয়োজন। এই কাজে অবহেলা করবেন না।
পুনরায় আগের মত দৃষ্টিশক্তি ফেরত না পেলেও কিছু ব্যায়াম ও খাদ্যভ্যাস পরিবর্তন করে দৃষ্টি শক্তি কিছুটা বৃদ্ধ ও ভাল রাখা সম্ভব