অশান্তি লাগা, কাজে অনীহা, বুক ধড়ফড় করা, মাথাব্যথা করা, বুকে চাপবোধ করা, হঠাৎ খিঁচুনি, কিছু মনে করতে না পার, অল্পতেই বিরক্ত হওয়া, ঘুম না হওয়া, খাদ্যে অরুচি, অতিরিক্ত কথা বলা, বিড়বিড় করা, ছটফট করা, ইত্যাদি উপসর্গ মানসিক রোগের লক্ষণ।
এসব উপসর্গ মোটামুটি সারা পৃথিবীতেই এক। আবার গায়েবি আওয়াজ শোনা, মনে মনে কথা বলা, যৌনইচ্ছা কমে যাওয়া, অতিরিক্ত যৌনইচ্ছা ইত্যাদি উপসর্গও বিভিন্নি মানসিক রোগে লক্ষ্য করা যায়।
উপসর্গ অনুযায়ী মানসিক রোগ দু প্রকার হতে পারে। একটি মৃদু মানসিক রোগ ও অপরটি জটিল মানসিক রোগ।
অ্যাংজাইটি নিউরোসিস: দুশ্চিন্তাবোধ, হাত-পা কাঁপা, মুখ ও গলা শুকিয়ে যাওয়া, বুকে চাপ লাগা, ঘন ঘন প্রসাব হওয়া, মাথাব্যথা হওয়া, হাত-পা কামড়ানো, ঘুম না হওয়া, ছটফট করা। ইত্যাদি উপসর্গের মাধ্যমে এই রোগের প্রকাশ পেতে পারে।
অহেতুক ভয় বা ফোবিয়া: অঝথা কোন বিষয়ে ভয়, মৃত্যু ভয়, পোকামাকড়ের ভায়, লোকসমাজে আসার ভয়, বক্তৃতা দিতে ভয় পাওয়া ইত্যাদি উপসর্গের মাধ্যমে এই রোগ প্রকাশ পায়।
অবসেশন: একই কাজ বারবার করা, একই চিন্তা বারবার করা, অনবরত হাত-পা ধোয়া, অতিরিক্ত পরিশকার-পরিচ্ছন্নতা থাকা, সন্দেহবাতিকতা এবং মনের বিরুদ্ধে কথা বলা এই রোগের উপসর্গ।
হিস্টিরিয়া বা মূর্ছারোগ: অর্গানিক কোন সমস্যা ছাড়াই হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, খিঁচুনি, দাঁতে দাঁত লাগা, এলোমেলো কথা বলা, হঠাৎ চোখে না দেখা, হাত-আপ অবশ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি উপসর্গের মাধ্যমে এই রোগ প্রকাশ পায়।
সিজোফ্রেনিয়া: কানে গায়েবি আওয়াজ শোনা, একা একা কথা বলা, মনের কথা বাইরে প্রকাশ হয়ে যাওয়া, ঘরকুনো হয়ে থাকা, কাজ না করে অগোছালো থাকা, এলোমেলো ঘুরে বেড়ানো ইত্যাদি উপসর্গ সিজোফ্রেনিয়া রোগে প্রকাশ পেতে পারে।
ম্যানিয়া
ঘন ঘন কথা বলা, অতিরিক্ত কথা বলা, অহেতুক আশ্বাস ও অহেতুক পরামর্শ দেয়া, একসাথে অনেক কাজ হাতে নেয়া, এসব ম্যানিয়া রোগের উপসর্গ।
ডিপ্রেশন
অশান্তি লাগা, কোন কাজে মন না বসা, অহেতুক কান্নাকাটি করা, আত্মহত্যা করার প্রবণতা কিংবা আত্মহত্যা করা, কোন কারণ ছাড়াই শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথা অনুভব করা। ঘুম না হওয়া, আত্মবিশ্বাস কমে যাওয়া, ইত্যাদি উপসর্গের মাধ্যমে এই রোগ প্রকাশ পেতে পারে।
এসব উপসর্গের বাইরেও আমাদের অর্থসামাজিক শিক্ষাব্যবস্থায় কিছু কিছু নতুন উপসর্গ উদ্ভব হতে পারে। সাম্প্রতিক এক সমীক্ষা অনুযায়ী, শতকরা একভাগ অর্থাৎ বাংলাদেশের প্রায় ১২ লাখ মানুষ সিজোফ্রেনিয়াতে আক্রান্ত। তিন থেকে চারভাগ মানুষ ডিপ্রেশনে আক্রান্ত। এছাড়া শতকরা ৩০ ভাগ লোক কোন না কোনভাবে বিভিন্নি নিউরোটিক ডিসঅর্ডারে ভুগছে। তবে এই রোগ যেহেতু বাস্তবতার সাথে ভারসাম্যহীনতা ও শরীরের কিছু হরমোন ও নিউরিটিক পরিবর্তনের ফলে হয়ে থাকে সেহেতু সঠিক সময়ে অত্যাধুনিক চিকিৎসায় এ রোগ পুরোপুরি ভাল হয়।
তথ্যঃ মনোজগত পত্রিকা