প্রথমেই মনে রাখতে হবে আমাদের ওজন প্রধানত খাদ্যের পরিমাণের উপর নির্ভর করলেও আরো হাজার রকম বিষয় এর উপর তা নির্ভর করে। উদাহরণ :
#Genetics : অনেকের family তে সবাই মোটা।সেক্ষেত্রে ওই ব্যক্তির মোটা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আবার যার family তে বেশির ভাগ রোগা, তার রোগা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এই জেনেটিক বিষয় টি আমাদের হাতের বাইরে, অথচ এটি সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হরমোন এবং উৎসেচক সবার দেহে হরমোনের পরিমাণ সমান নয়। ব্যক্তি ও বয়স বিশেষে এর হেরফের ঘটে। Thyroid এর হরমোন, এন্ড্রোজেন, ইস্ট্রোজেন, প্রোজেস্টেরন , growth hormone, insulin ইত্যাদি হরমোনের তফাতের কারণে রোগা বা মোটা হওয়া অনেক সময় নির্ভর করে। Thyroid নির্গত হরমোনের পরিমাণ বাড়লে আমাদের ওজন কমেতে পারে, এর উল্টোটা ও হয়। গুরুত্বপূর্ণ হরমোন হলো লেপ্টিন। এটি কারোর কারোর দেহে বেশি তৈরি হয় সে বেশি খাওয়াদাওয়া করতে পারে না, অল্পেই সন্তুষ্ট হয়ে যায়। তাছাড়া দেহের চর্বি থেকে শক্তি তৈরি করে এবং চর্বি ঝরিয়ে ফেলে।
আমরা যে খাবার খাই তা হজম করার জন্য দরকার উৎসেচক, এই উৎসেচক তৈরি ব্যাহত হলে বা বেরোনোর পথে বাধা থাকলে খাবার হজম ও হবে কম। সেক্ষেত্রে ওজন কমে যাবে। আপনি যথাসাধ্য খাওয়ার পরেও যদি লিভার ঠিকমতো কাজ না করে তখন ওজন কমবে।
#ব্যায়াম : ব্যায়াম করে অনেকে ওজন কমিয়ে ফেলতে পারে। আবার ব্যায়াম করে ওজন বাড়ানো ও সম্ভব। এটি নির্ভর করে ব্যায়াম এর আগে , পরে কি খাওয়া হচ্ছে, কোন সময়ে ব্যায়াম করা হচ্ছে , কোন ধরনের ব্যায়াম করা হচ্ছে তার উপর। যারা মোটা , তারা সকালে , বিকেলে দৌড়াদৌড়ি করলে রোগা হবে। আবার যারা রোগা তারা weight lifting ইত্যাদি করে , এবং তারপর প্রোটিন জাতীয় খাবার বেশি করে খেয়ে ওজন বাড়াতে পারে। ব্যায়াম ছাড়াও আমরা নিজেদের অজান্তেই বিভিন্ন কাজ করে থাকি যেমন আঙ্গুল নাড়ানো, পা নাড়ানো, মুখের অঙ্গভঙ্গি করা, চুলকানো, মাথা দোলানো ইত্যাদি। গবেষণায় দেখা গেছে এইসব কাজকর্ম দেহের প্রচুর শক্তি নষ্ট করে। এগুলি কে বলে Non Exercise Activity Thermogenesis; কিছু মানুষের এই গুলির প্রবণতা বেশি, তারা অনেক খাওয়াদাওয়া করলেও ওজন বাড়ে না
#ঘুম : যারা রাতে ঠিক মত ঘুমায় না , তাদের ওজন কমে যাওয়া স্বাভাবিক। ঘুমের সাথে আমাদের হরমোন ( বিশেষ করে growth hormone এবং ইনসুলিন ) এর সরাসরি সম্বন্ধ আছে। ঘুমের সাথে দুশ্চিন্তা, অবসাদের সম্বন্ধ আছে। আপনি প্রচুর খাওয়া দাওয়া করে, ব্যায়াম করেও কোনো ফল পাবেন না যদি না ঘুম ঠিকঠাক হয়।
#দুশ্চিন্তা : যারা বেশি দুশ্চিন্তা করে , তাদের ওজন বাড়ার সম্ভাবনা থাকে। দুশ্চিন্তা হলে আমাদের adrenal gland থেকে Cortisol hormone বের হয়। এর প্রভাবে পেটে ফ্যাট জমা হতে থাকে।
★★★আরও অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে আছে আমরা কোনো ওষুধ খাচ্ছি কিনা, দেহে অনেক দিন ধরে কোনো ইনফেকশন আছে কিনা ( যেটা আমরা বাইরে থেকে বুঝতে পারছি না) আমরা কতক্ষন পরপর খাচ্ছি, কতটা জল পান করি ইত্যাদি। এখানে একটি দরকারি কথা বলে রাখা দরকার। যারা খাবার খুব বেশি চিবিয়ে খায়, তারা মোটা হয় না সহজে। এর কারণ: চিবিয়ে চিবিয়ে ধীরে ধীরে খেলে আমাদের পরিপাক নালী থেকে cholecystokinin, peptide Y, glucagon like peptide ইত্যাদি বের হয় যা আমাদের মস্তিষ্কে জানান দেয় যে যথেষ্ট খাওয়া হয়েছে। অন্যদিকে গিলে গিলে তাড়াহুড়ো করে খেয়ে নিলে এই হরমোন গুলো যেমন বের হয় কম, তেমন মস্তিষ্ক ওই কম সময়ে সন্তুষ্ট হয় না। ফলে অনেক টা খাবার খেতে হয়, যেটা মোটা হওয়ার জন্য দায়ী।