অতিনবতারা (ইংরেজি: Supernova সুপারনোভা) হলো এক ধরনের নাক্ষত্রিক বিস্ফোরণ যার ফলশ্রুতিতে নক্ষত্র ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় এবং অবশেষরূপে থাকে নিউট্রন তারা কিংবা কৃষ্ণবৃবর।
সূর্যের চেয়ে ৮-১৫ গুণ বেশি ভরের নক্ষত্রসমূহের অভ্যন্তরে হাইড্রোজেনের সংযোজন বিক্রিয়ায় তৈরি হয় হিলিয়াম, হিলিয়ামের সংযোজনে তৈরি হয় কার্বন এবং সেই কার্বনের সংযোজনে তৈরি হয় লোহা। লোহা তৈরির মধ্য দিয়ে কেন্দ্রীণ বিক্রিয়াসমূহের পরম্পরার পরিসমাপ্তি ঘটে, কারণ এর পরের বিক্রিয়াটি তাপশোষী। এমনই এক সময়ে নক্ষত্রের অভ্যন্তরস্থ বহির্মুখী চাপ যথেষ্ট পরিমাণ কমে যাওয়ায় এটি আর মহাকর্ষীয় আকর্ষণ বলকে ঠেকিয়ে রাখতে পারে না, ফলে নক্ষত্রে ঘটে এক প্রচণ্ড অন্তস্ফোটন (Implosion)। নক্ষত্রটির বেশিরভাগ ভরই এর কেন্দ্রে সংকুচিত হয়ে পড়ে, আর গ্যাসীয় বাতাবরণটি ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে প্রবলবেগে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনাই অতিনবতারা বিস্ফোরণ হিসেবে পরিচিত। এই ধরনের বিস্ফোরণে বিপুল পরিমাণ শক্তি নির্গত হয় এবং সংশ্লিষ্ট নক্ষত্রটি সাময়িকভাবে পুরো ছায়াপথের চেয়েও বেশি উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।
অতিনবতারা বিস্ফোরণকে নিষ্ক্রান্ত গ্যাসীয় পদার্থসমূহে উপস্থিত হাইড্রোজেনের পরিমাণের ভিত্তিতে ২ ভাগে ভাগ করা হয় --- নির্গত পদার্থ হাইড্রোজেন-সমৃদ্ধ হলে ধরন-২ আর হাইড্রোজেনের পরিমাণ অল্প হলে ধরন-১। অনেক অনেক আগে থেকেই মানুষ অতিনবতারা সম্পর্কে জানত। ১০৫৪ খ্রীষ্টাব্দে চীনা জ্যোতির্বিদেরা একটি অতিনবতারা দেখেছিলেন বলে উল্লেখ পাওয়া যায়। সাম্প্রতিককালে বৃহৎ ম্যাজেলানীয় মেঘে (LMC) SN1987A নামের যে অতিনবতারাটির বিস্ফোরণ সংঘটিত হয়েছে, তা প্রায় খালি চোখেই দেখা গিয়েছিল। অতিনবতারার বিস্ফোরণে অনেক ভারী মৌলিক পদার্থ তৈরি হয়ে ছায়াপথে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
© উইকিপিডিয়া