প্যারিডোলিয়া (Pareidolia) সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই। - ScienceBee প্রশ্নোত্তর

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রশ্নোত্তর দুনিয়ায় আপনাকে স্বাগতম! প্রশ্ন-উত্তর দিয়ে জিতে নিন পুরস্কার, বিস্তারিত এখানে দেখুন।

0 টি ভোট
1,460 বার দেখা হয়েছে
"মনোবিজ্ঞান" বিভাগে করেছেন (9,280 পয়েন্ট)

1 উত্তর

0 টি ভোট
করেছেন (9,280 পয়েন্ট)


রাস্তা দিয়ে হাঁটছেন, হঠাৎ মেঘের দিকে তাকিয়ে যেন অবিকল একটি হাতির শুঁড় দেখতে পেলেন! বাজার থেকে সবজি কিনে এনেছেন, হঠাৎ তার মধ্যে কোনোটিতে চোখে পড়লো মানুষের শরীরের আকৃতি!! এমনকি কড়াইতে ডিম ভাজতে গিয়ে দেখলেন, সেখানে যেন মানুষের মুখের একটি অবয়ব ফুটে উঠেছে!!!

দৈনন্দিনে জীবনে অহরহই এসব অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হই আমরা। বেশিরভাগই এসব ঘটনাকে ‘কাকতালীয়’ বলে উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন, কেউ কেউ ভাবতে বসেন এর ব্যাখ্যা নিয়ে।
মনোবিজ্ঞানের ভাষায় কিন্তু এর একটি গালভরা নাম আছে, যা হয়তো অনেকেই জানেন না। আশপাশের পরিবেশে কোনো বস্তু, ব্যক্তি, জীবজন্তু বা পরিবেশেরই কোনো অংশের অবিকল অবয়ব খুঁজে পাওয়ার এ ঘটনাকে বলা হয় প্যারিডোলিয়া (Pareidolia)।

এর সহজতম উদাহরণ পাওয়ার জন্য একটি বৃত্ত আঁকুন। তার ভেতর দু’টি ছোট বিন্দু আঁকুন ও নিচে আড়াআড়িভাবে  একটি দাগ দিন।

ব্যস, হয়ে গেল ‘মানুষের মুখ’! কোনো ছোট শিশুকেও যদি মানুষের মুখ আঁকতে বলা হয় সেও সম্ভবত এভাবেই আগে আঁকবে। অথচ সত্যিকার অর্থে এই বৃত্তের সঙ্গে মানুষের চেহারার তেমন কোনো মিল নেই।

তারপরও এমন আকৃতি দেখলে মানুষের মুখ ছাড়া কোনো কিছুই মাথায় আসবে না।

প্যারিডোলিয়া নিয়ে এযাবৎকালে বৃহত্তম গবেষণা চালাচ্ছে জার্মানির গবেষণা প্রতিষ্ঠান অনফর্ম্যাটিভ। টেক জায়ান্ট গুগলের সহায়তায় ‘গুগল ফেইসেস’ নামে এ গবেষণায় ব্যবহার করা হচ্ছে গুগল ম্যাপস। পৃথিবীজুড়ে বিভিন্ন স্থান খুঁজে যাবতীয় প্রাকৃতিক প্যারিডোলিয়া একত্রিত করা হচ্ছে এর আওতায়। এছাড়াও প্রতিদিন বিশ্বের আনাচে-কানাচে আবিষ্কৃত অদ্ভুত সব প্যারিডোলিয়া সংগ্রহে রাখা হচ্ছে।

যেমন- গত বছর একটি চিকেন নাগেটে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটনের মুখাবয়ব ফুটে উঠেছিল, যা পাঁচ হাজার পাউন্ডেরও বেশি দামে নিলামে বিক্রি হয়। বছর দশেক আগে ভারতের ব্যাঙ্গালোরে একটি রুটিতে যিশুর চেহারা দেখা গিয়েছিল, যা দেখতে ওই বছর ব্যাঙ্গালোরে হাজির হয়েছিলেন ২০ হাজারেরও বেশি ধর্মপ্রাণ খ্রিস্টান। পিঠার মধ্যে দেখা গেছে মাদার তেরেসার মুখ। এমনকি কিছুদিন আগে ব্রিটেনের সোয়ানসির একটি সাধারণ বাড়ি সামাজিক মিডিয়ায় আলোড়ন তুলেছিল, যার জানালা-দরজা-ছাদের গঠন দেখে অ্যাডলফ হিটলারের কথাই মনে পড়ে। এছাড়া মাত্র গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে একটি কেতলিতেও হিটলারের অবয়ব দেখা গিয়েছিল! ১৯৯৪ সালে তো যুক্তরাষ্ট্রের এক নারী টোস্টে কামড় দিয়ে শিল্পী ম্যাডোনার অবয়ব দেখতে পেয়েছিলেন, যা তিনি সংরক্ষণ করে রাখেন আরও দশ বছর।

এর বাইরেও গাছপালা, পাথর, পাহাড়, মাটিতে প্যারিডোলিয়ার প্রচুর নিদর্শন ছড়িয়ে আছে। পেরুর মার্কাওয়াসিতে মানুষসহ নানা জীবজন্তু আকৃতির পাথরের অভাব নেই। ফ্রান্সের এবিহেন্স পর্বতমালায়ও মানুষের মুখের আকারের পাহাড় চূড়া দেখা যায়। স্যাটেলাইট থেকে তোলা সাগর-মহাসাগরের অনেক ছবিতে মানুষ, পশুপাখির ছবি দেখা যায়।

এছাড়া ১৯৭৬ সালে ভাইকিং ওয়ান মহাকাশযান মঙ্গলগ্রহের পৃষ্ঠের ছবি তুললে তাতে অবিকল মানুষের মুখাবয়ব দেখা যায়, যা বিজ্ঞানীদের হতভম্ব করে দেয়। মূলত সে সময় থেকেই তারা জরুরিভাবে প্যারিডোলিয়া নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। পরবর্তীতে পৃথিবীতেও একইভাবে প্যারিডোলিয়ার বিভিন্ন নমুনা খুঁজে পেয়ে তারা সিদ্ধান্ত নেন, ব্যাপারগুলো নিছক কাকতালীয় নয়।

গুগল ফেইসেসের প্রধান সেড্রিক কাইফারের মতে, “প্যারিডোলিয়া এতই আসল যে একে কাকতালীয় পর্যায়ে ফেলার কোনো যুক্তি নেই। এর আরও গূঢ় ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যাখ্যা রয়েছে। ”

কিন্তু কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ? কেনই বা মস্তিষ্ক তুচ্ছ সব জিনিসকে রীতিমতো জ্যান্ত করে চোখের সামনে উপস্থিত করে?

হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. নুচিন হাজিখানির মতে, এটি বিবর্তনের ফল। জন্ম থেকেই মানুষ এরকম বিশেষ কিছু প্যাটার্ন শনাক্ত করতে বিশেষভাবে অভ্যস্ত। এসব ক্ষেত্রে নিজের বিশ্লেষণী ক্ষমতাও তেমন কাজে লাগায় না মস্তিষ্ক, অত্যন্ত দ্রুত সিদ্ধান্তে পৌঁছে যায়। হোক তা ঠিক বা ভুল।
ব্রিটিশ সাইকোলজিক্যাল সোসাইটির ক্রিস্টোফার ফ্রেঞ্চ জানান, প্যারিডোলিয়ার রহস্য লুকিয়ে আছে লাখ লাখ বছর আগের প্রাচীন মানুষদের মধ্যে। তাদের বেঁচে থাকার জন্যেই এটি প্রয়োজনীয় ছিল। প্রতিকূল পরিবেশে থাকার কারণে বিভিন্ন চিহ্ন দেখে তাদের হিংস্র প্রাণী থেকে সতর্ক থাকতে হতো। মাটির কোনো দাগকে বাঘের পায়ের ছাপ মনে হলে দ্রুত ওই স্থান ত্যাগ করতে হতো। কিংবা কোনো ঝোপঝাড় দেখে হঠাৎ হিংস্র পশু বলে মনে হতো। প্রাচীন মানুষের বুদ্ধিমত্তা তখনও পরিণত না হওয়ায় এসবকেই তারা বিপদের লক্ষ্মণ বলে ধরে নিতো, যার ফলে প্রতি মুহূর্তে আরও সতর্ক থাকতে পারতো।

আবার অনেক গবেষক বলেন, মানুষের মস্তিষ্কের তথ্য আদান-প্রদান প্রক্রিয়ার সঙ্গে প্যারিডোলিয়া জড়িত। মস্তিষ্ক অনবরত বিভিন্ন বিচ্ছিন্ন আকার, আকৃতি, রঙ, প্যাটার্ন তৈরি করতে থাকে, যার সঙ্গে হঠাৎ আশপাশের পরিবেশের কোনো প্যাটার্ন মিলে গেলে প্যারিডোলিয়া তৈরি হয়।

ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের নিউরোসায়েন্টিস্ট সোফি স্কটের মতে, প্যারিডোলিয়ায় মানুষের আশা-আকাঙ্খারই প্রতিফলন ঘটে।

তিনি জানান, যে ব্যক্তি যে ধরনের চিন্তা বেশি করে, সে সেই ধরনের প্যারিডোলিয়া বেশি দেখে। যে পশুপাখি ভালোবাসে, সে মেঘের মধ্যে হাতি দেখে। যে ধার্মিক, সে টোস্টে যিশুর ছবি দেখে। তিনি মনে করেন, এখানে প্রকৃতির কৃতিত্ব যতটা, তার চেয়ে বেশি কৃতিত্ব মানুষের স্বভাব-চরিত্রের।

এছাড়া প্যারিডোলিয়ার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এটি একবার মনে গেঁথে গেলে তা কোনোভাবেই অস্বীকার করা সম্ভব নয়। যেমন- যে ফলের মধ্যে একবার মানুষের অবয়ব চোখে পড়েছে, প্রতিবার সেই ফলের দিকে তাকালেই সবার আগে মানুষের অবয়বটি চোখে পড়বে। অর্থাৎ মস্তিষ্ক সেই ভ্রমকেও সত্যি হিসেবে ধরে পাকাপাকিভাবে মস্তিষ্কে বসিয়ে নেয়, যে কারণে চাইলেই কোনো বিশেষ প্যারিডোলিয়া থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়। এর ফলেই প্যারেডোলিয়ার সঙ্গে ধর্ম ও অতিপ্রাকৃতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। অসংখ্য প্যরেডোলিয়াকে তাই ধর্মীয় নিদর্শন বা অতিপ্রাকৃত ঘটনার ইঙ্গিত বলে মেনে নিচ্ছেন মানুষজন।

সবশেষে, সাধারণ প্যারিডোলিয়ার সঙ্গে আধুনিককালে নতুন একটি প্যারিডোলিয়া তৈরি করেছে ইলেকট্রনিক ভয়েস প্রোজেকশন (ইভিপি) নামে একধরনের যন্ত্র। ভূতে যারা বিশ্বাস করেন, তাদের জন্য আদর্শ যন্ত্র এই ইভিপি। এটি অত্যন্ত সূক্ষ্ম মাত্রার শব্দ ধারণ করতে সক্ষম। অনেকের মতে, মৃতেরা প্রতিনিয়ত জীবিত মানুষদের সঙ্গে তাদের ভাষায় কথা বলার চেষ্টা করে, যা জীবিত মানুষরা বুঝতে পারে না। মৃতদের সেই অতিপ্রাকৃত ভাষাই রেকর্ড করতে সক্ষম ইভিপি।

ইভিপি’র রেকর্ডে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের শব্দ ও আওয়াজ শোনা যায় ঠিকই, কিন্তু তাই বলে একে ‘মৃতের ভাষা’ মনে করার কোনো কারণ নেই। বেশিরভাগই একে বিচ্ছিন্ন রেডিও সিগন্যাল বলে উড়িয়ে দেন। আবার অনেক সময় এমন সব অদ্ভুত, কিন্তু বাস্তব শব্দ এতে ধরা পড়ে, যা রেডিও সিগন্যালও নয়, আমাদের প্রচলিত জগতের শব্দের মতোও নয়। তাই এদের শব্দগত প্যারিডোলিয়া বলা হয়।

এছাড়া অতি সাম্প্রতিক এক গবেষণা থেকে এর উৎকৃষ্ট প্রমাণ বেরিয়ে এসেছে। এটি সরাসরি প্যারিডোলিয়া না হলেও এক্ষেত্রে মস্তিষ্ক ঠিক প্যারিডোলিয়ার মতোই কাজ করে। নিচের কথাটি পড়ুন-

“Welocmee to balneganws. Hvae you notcied taht thugoh all the wrods are wnrog hree, you can raed it rghit?”

খেয়াল করেছেন কি, উপরের বাক্যের প্রতিটি শব্দের অক্ষরগুলো এলোমেলো থাকতেও পড়তে কোনো অসুবিধা হয়নি? কারণ প্রতিটি শব্দেরই প্রথম ও শেষ অক্ষর ঠিক রয়েছে। অর্থাৎ, কোনো শব্দ পড়ার জন্য মস্তিষ্ক কখনও প্রতিটি অক্ষরের দিকে তাকায় না, তাকায় কেবল প্রথম ও শেষ অক্ষরের দিকে। এ পদ্ধতিকে বলা হয় টাইপোগ্লাইসেমিয়া।

এভাবে একটি আস্ত বই পড়ে ফেলতেও কোনো অসুবিধা হবে না। যেমন অসুবিধা হয় না একটি বৃত্ত, দু’টি বিন্দু ও একটি দাগকে মানুষের মুখ ভাবতে।

©️banglanews24.com

রেফারেন্সঃ
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Pareidolia

সম্পর্কিত প্রশ্নগুচ্ছ

0 টি ভোট
1 উত্তর 199 বার দেখা হয়েছে
+7 টি ভোট
1 উত্তর 919 বার দেখা হয়েছে
0 টি ভোট
1 উত্তর 171 বার দেখা হয়েছে
02 জানুয়ারি "স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Noor (1,100 পয়েন্ট)
0 টি ভোট
1 উত্তর 1,025 বার দেখা হয়েছে
+1 টি ভোট
1 উত্তর 333 বার দেখা হয়েছে

10,775 টি প্রশ্ন

18,456 টি উত্তর

4,742 টি মন্তব্য

265,655 জন সদস্য

164 জন অনলাইনে রয়েছে
0 জন সদস্য এবং 164 জন গেস্ট অনলাইনে
  1. Farhan Anjum

    140 পয়েন্ট

  2. Saif Sakib

    110 পয়েন্ট

  3. Tasfima Jannat

    110 পয়েন্ট

  4. hubetplus

    100 পয়েন্ট

  5. SusanPerrier

    100 পয়েন্ট

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত বিজ্ঞান প্রশ্নোত্তর সাইট সায়েন্স বী QnA তে আপনাকে স্বাগতম। এখানে যে কেউ প্রশ্ন, উত্তর দিতে পারে। উত্তর গ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্যই একাধিক সোর্স যাচাই করে নিবেন। অনেকগুলো, প্রায় ২০০+ এর উপর অনুত্তরিত প্রশ্ন থাকায় নতুন প্রশ্ন না করার এবং অনুত্তরিত প্রশ্ন গুলোর উত্তর দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রতিটি উত্তরের জন্য ৪০ পয়েন্ট, যে সবচেয়ে বেশি উত্তর দিবে সে ২০০ পয়েন্ট বোনাস পাবে।


Science-bee-qna

সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ট্যাগসমূহ

মানুষ পানি ঘুম পদার্থ - জীববিজ্ঞান চোখ এইচএসসি-উদ্ভিদবিজ্ঞান এইচএসসি-প্রাণীবিজ্ঞান পৃথিবী রোগ রাসায়নিক শরীর #ask রক্ত আলো মোবাইল ক্ষতি চুল কী #science চিকিৎসা পদার্থবিজ্ঞান সূর্য প্রযুক্তি স্বাস্থ্য মাথা প্রাণী গণিত বৈজ্ঞানিক মহাকাশ পার্থক্য #biology এইচএসসি-আইসিটি বিজ্ঞান খাওয়া গরম শীতকাল #জানতে কেন ডিম চাঁদ বৃষ্টি কারণ কাজ বিদ্যুৎ রাত রং উপকারিতা শক্তি লাল আগুন সাপ মনোবিজ্ঞান গাছ খাবার সাদা আবিষ্কার দুধ উপায় হাত মশা শব্দ মাছ ঠাণ্ডা মস্তিষ্ক ব্যাথা ভয় বাতাস স্বপ্ন তাপমাত্রা গ্রহ রসায়ন উদ্ভিদ কালো পা কি বিস্তারিত রঙ মন পাখি গ্যাস সমস্যা মেয়ে বৈশিষ্ট্য হলুদ বাচ্চা সময় ব্যথা মৃত্যু চার্জ অক্সিজেন ভাইরাস আকাশ গতি দাঁত কান্না আম হরমোন বাংলাদেশ
...