একই সঙ্গে একাধিক সন্তান গর্ভধারণকে মাল্টিপল প্রেগন্যান্সি বলে। এটি স্বাভাবিক বা সুপরিচিত ঘটনা নয়। সাধারণত যমজ, ক্ষেত্রবিশেষে তিনটি (ট্রিপলেট), চারটি (কোয়াড্রুপলেট) কিংবা আরও বেশি সন্তান ধারণের ঘটনাও হতে পারে। পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি ২৫০ গর্ভধারণের মধ্যে ১টির যমজ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তবে ট্রিপলেট বা ৩টা হওয়ার হার প্রতি ১০ হাজার গর্ভধারণের ১টিতে, ৪ জন হওয়ার হার আরও কম, প্রতি ৭ লাখে ১ জনের। তবে বর্তমানে বন্ধ্যত্ব চিকিৎসার মাধ্যমে সন্তান নেওয়ার হার বেড়ে যাওয়ার কারণে এই সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এমনটা কেন হয়
স্বাভাবিকভাবে একটি শুক্রাণু ও একটি ডিম্বাণুর নিষেকের ফলে একটি ভ্রূণ তৈরি হয় এবং সেটিই জরায়ুতে প্রতিস্থাপিত হয়ে মানবসন্তান হিসেবে ভূমিষ্ঠ হয়। কখনো কখনো দুটি বা তিনটি ডিম্বাণু একই মাসিকচক্রের সময়ে নিষিক্ত হলে দু-তিনটি বাচ্চা একই সঙ্গে হতে পারে। বিশ্বে সর্বাধিক আটটি শিশু একই সঙ্গে ভূমিষ্ঠ হওয়ার রেকর্ড আছে। এই বহু সন্তান হতে পারে বহু ডিম্বাণু থেকে, আবার হতে পারে একটিই ভ্রূণ বিভক্ত হওয়ার মাধ্যমে। তবে বহু ডিম্বাণু থেকে হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
এই বহু ডিম্বাণু নিষিক্ত হওয়ার ঘটনা খুব বেশি নয়। তবে ইনফার্টিলিটি বা বন্ধ্যত্বের চিকিৎসার সময়ে ডিম্বাণু তৈরির জন্য ওষুধ প্রয়োগের ফলে বহু ডিম্বাণু তৈরি হয়ে থাকে এবং তাঁদেরই একাধিক সন্তান গর্ভধারণের ঝুঁকি বেশি। আবার টেস্টটিউব চিকিৎসার সময়ে যতগুলো ভ্রূণ প্রতিস্থাপনের জন্য দেওয়া হয়, ততগুলো সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
পরিবারে একাধিক সন্তান জন্ম দেওয়ার ইতিহাস থাকতে পারে, যেমন কেউ নিজে যদি একজন যমজ সন্তান হয়ে থাকেন বা মাতৃকুলে ফ্র্যাটারনাল টুইন জন্ম হওয়ার ইতিহাস আছে, তবে তাঁরও যমজ সন্তান জন্ম দেওয়ার সম্ভাবনা আছে।
একসঙ্গে বহু ডিম্বাণু থেকে যমজ শিশু জন্ম হলে তাকে ডাইজাইগোটিক যমজ বলে, অর্থাৎ তারা একসঙ্গে জন্ম নিলেও ভিন্ন ভিন্ন জাইগোট বা ভিন্ন ভিন্ন ভ্রূণ থেকে এসেছে। কিন্তু একটি ভ্রূণ বিভক্ত হয়ে যমজ হলে তাকে মনোজাইগোটিক যমজ বলে। একটি ভ্রূণই ভাগ হয়ে তাদের জন্ম হয়েছে বলে তাদের জিনগত গঠন অভিন্ন, তাই চেহারা থেকে শুরু করে তাদের স্বভাব-চরিত্র সবকিছু একই রকম হয়ে থাকে।
একাধিক সন্তান গর্ভধারণে মা ও গর্ভস্থ শিশুর বিভিন্ন রকম জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই এটিকে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভধারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
প্রাকৃতিকভাবে মাল্টিপল প্রেগন্যান্সি ঘটে থাকলে তা এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই বা প্রতিরোধব্যবস্থাও নেই। তবে বন্ধ্যত্ব চিকিৎসার কারণে সন্তান ধারণ হয়ে থাকলে, তার প্রতিরোধ করা যায়। সে ক্ষেত্রে কখনো অধিক ডিম্বাণু সুগঠিত হলে সেই মাসে গর্ভধারণ থেকে বিরত থাকা। টেস্টটিউবের বেলায় অনেক ভ্রূণের পরিবর্তে একটি ভ্রূণ প্রতিস্থাপন করা যেতে পারে।
তবে প্রাকৃতিকভাবেই হোক বা চিকিৎসার ফলেই হোক দুইয়ের অধিক হলে সেটার একটি চিকিৎসা আছে। অর্থাৎ তিনটি বা চারটি হলে গর্ভধারণের প্রথম দিকেই সেখান থেকে একটি বা দুটিকে জরায়ুর ভেতরেই নষ্ট করে দেওয়া হয়। মা ও সন্তানের মঙ্গলের জন্য এটি নৈতিকতার জায়গা থেকে তো বটেই, চিকিৎসাশাস্ত্রেও একটি গ্রহণযোগ্য চিকিৎসা হিসেবেও বিবেচিত