হস্তমৈথুন বা মাস্টারবেশন কি? ব্যাপারটির সাথে আমরা সবাই কমবেশি পরিচিত। উঠতি বয়সের ছেলেদের মাঝে এর প্রবনতা বেশি দেখা গেলেও পুরুষদের মত নারীদের কিংবা মাহিলদের এমনকি কম বয়সী মেয়েদের মাঝেও হস্ত মৈথুন প্রবনতা থাকে।
হস্ত মৈথুন প্রসঙ্গে নানান রকমের কু-সংস্কার ও ভুল ধারণা রয়েছে। অনেকেই মনে করেন হস্তমৈথুন এর কোনো অপকারিতা বা ক্ষতি কিংবা কুফল নেই। আবার কেউ কেউ মনে করেন হস্ত মৈথুন এর উপকারিতা।
তবে মূল বিষয়টি হচ্ছে, হস্তমৈথুন তখনই স্বাস্থ্যের জন্য ভালো যখন তা করে হবে নিয়ন্ত্রিত মাত্রায়। তাহলে দৈনিক কতবার হস্তমৈথুন করা যেতে পারে? চিকিৎসা বিজ্ঞানে হস্ত মৈথুন করার নিয়ম বা হস্ত মৈথুন এর বিধান কি? এতে কি পুরুষত্ব নিয়ে বা স্ত্রীর সাথে যৌন জীবনে কোন সমস্যা হয়?
এছাড়াও সকলের একটি প্রশ্ন সব সময় অজানা থাকে। তা হলো হস্তমৈথন এর উপকারিতা কি এবং অপকারিতা কি? আজকে আমরা এসেছি সে প্রশ্নের সঠিক উত্তর নিয়ে। চলুন জেনে নেই হস্তমৈথন এর উপকারিতা কি এবং অপকারিতা সম্পর্কে:
উপকারিতাঃ
১৯৫০-এর দশকের এক গবেষণায় বলা যায়, মার্কিন নাগরিকদের মাঝে ৯২% পুরুষ ও ৬২% নারী তাঁদের জীবনকালে অন্তত একবার হস্তমৈথুন করেছেন।
২০০৭ সালে যুক্তরাজ্যের মানুষের মাঝে করার একটি জরিপেও কাছাকাছি ফলাফল পাওয়া যায়। জরিপে দেখা যায় ১৬ থেকে ৪৪ বছরের মধ্যে ৯৫% পুরুষ ও ৭১% নারী তাঁদের জীবনের যে-কোনো সময়ে অন্তত একবার হস্তমৈথুন করেছেন। সাক্ষাৎকারের চার সপ্তাহ আগে হস্তমৈথুন করেছেন এমন পুরুষের হার ৭১% ও নারী ৩৭%।
অপর দিকে ৫৩% পুরুষ ও ১৮% নারী জানিয়েছেন যে, তাঁরা এই সাক্ষাৎকারের ১ সপ্তাহ আগে হস্তমৈথুন করেছেন। ২০০৯ সালে নেদারল্যান্ডও অন্যান্য ইউরোপীয়দেশের সাথে যুক্তরাজ্যেও। হস্তমৈতুনকে বৈজ্ঞানিকভাবে একরকম স্বীকৃতিই দেয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অল্প ক্ষেত্রে ইহাশারিরিক বা মানসিক কোন ক্ষতিসাধন করে না। তবে মনে রাখতে হবে Excess is everything bad.
হস্তমৈতুন সাধারনত তাৎক্ষনিকভাবে উত্তেজনা প্রশমন করে। অনেক সময় নেগেটিভ কল্পনা বা অশ্লিল ছবি এবং ভিডিও দর্শনের ফলে যৌন উত্তজনা সৃষ্টি হয়। এধরনের উত্তেজনা সামাজিক অপরাধে উৎসাহিত করে। তাই পরিত্রানের উপায় হিসেবে তখনি হৈস্তমৈতুন করা যেতে পারে।
বিশেষভাবে স্বপ্নদোষ পুর্নাঙ্গ রুপ নেয়ার আগে যদি ঘুম ভেঙে যায় এবং উদ্ভট কল্পনার ফলে যদি অতিরিক্ত যৌন উত্তেজনা দেখা দেয় তবে তাৎক্ষনিক হস্তমৈতুন করাই শ্রেয়। নয়তো সাময়িক তলপেটে ব্যাথা সহ শারিরিক বা মানসিক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
অপকারিতাঃ
যার উপকারিতা থাকবে তার অপকারিতাও থাকবে। হস্তমৈতুনের ক্ষেত্রে উপকারিতার চাইতে অপকারিতাই বেশি।
প্রথমত এই কাজটি সব ধর্মেই নিষেধ করা হয়েছে। অপচয় করা প্রায় সব ধর্মেই নিষিদ্ধ। ইসলাম ধর্মে অপচয়কারিকে শয়তানের ভাই বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
বীর্য আল্লাহর একটি নিয়ামত, আর হস্তমৈতুনের মাধ্যমে এই নিয়ামতের অপচয়ই হয়ে থাকে। অতিরিক্ত হস্তমৈতুনের ফলে লিঙ্গ বা যোনীপথে ঘা এর সৃষ্টি হতে পারে, এমনকি রক্তক্ষরন ও হতে পারে।
বিশেষ করে মেয়েদের যোনীতে বিভিন্ন বস্তু প্রবেশের কারনে জীবানু সংক্রমন ঘটতে পারে। উভয়ের বেলায় প্রশ্রাবে জালাপোড়া সহ জীবানু সংক্রমনে সিফিলিস, গনোরিয়া ইত্যাদি রোগের সৃষ্টি হতে পারে।
নিয়মিত ও অতিরিক্ত হস্তমৈতুনে যৌনশক্তি কমে যাওয়া ও শারিরিক দুর্বলতা দেখা দিতে পারে। ইহা অভ্যাসে পরিনত হতে পারে এবং দীর্ঘদিন এই অভ্যাসের ফলে যৌন আকাঙ্খা কমে যেতে পারে।
তাছাড়া বিবাহিত জীবনে যৌন অনীহার সৃষ্টি হতে পারে যা দাম্পত্বেও প্রভাব ফেলবে।
করনীয়ঃ
যথা সম্ভব এই পদ্ধতিটি এড়িয়ে চলাই উত্তম। ধর্মীয় বিষয়গুলিতে মনযোগী হলে এই অভ্যাসটা সহজেই ত্যাগ করা যায়।
অশ্লিল কল্পনা ও অশ্লিল ছবি বা ভিডিও দেখা থেকে বিরত থাকতে হবে। পুরুষদের বেলায় কোন কারনবশত লিঙ্গ উথিত হলে হাত লাগানো থেকে বিরত থাকতে হবে।
লিঙ্গউথ্যান বেশিক্ষন স্থায়ী হলে লিঙ্গের আগায় আস্তে করে আঘাত করা যেতে পারে, যাতে হালকা ব্যথা অনুভূত হয়।
মেয়েরা শালীনতা বজায় ও বিপরীত লিঙ্গের সহিত রসালাপ ত্যাগ করতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। অবসর সময়ে ধর্মীয় বই পড়ার অভ্যাস করতে হবে।
সর্বোপরি নিজেকে আত্মনিয়ন্ত্রনে রাখতে পারলেই এই অভ্যাস ত্যাগ বা ইহা থেকে বিরত থাকা সম্ভব।