সর্বশক্তিমান প্যারাডক্স; স্রষ্টা কি এমন একটি পাথর তৈরি করতে পারবেন যা তিনি নিজেই তুলতে পারেন না?
স্রষ্টার গুণাবলির মধ্যে অন্যতম একটি হলো সর্বশক্তিমানতা। এই বিষয়টি নিয়ে আস্তিক-নাস্তিক উভয় পক্ষের মধ্যে ব্যাপক বিতর্ক রয়েছে। নাস্তিকরা ‘omnipotence paradox’ দিয়ে প্রমাণ করতে চাই যে স্রষ্টা সর্বশক্তিমান নয়। ‘omnipotence paradox’ হলো; স্রষ্টা কি এমন পাথর তৈরি করতে পারবে যা তিনি নিজেই উত্তোলন করতে সক্ষম নন? যদি তিনি পারেন তাহলে তিনি আর সর্বশক্তিমান থাকেনা। কারণ এমন একটি জিনিস থাকে যা তিনি তুলতে সক্ষম নয়। আবার যদি তিনি না পারেন তাহলেও তিনি সর্বশক্তিমান নয়। কারণ এমন একটি জিনিস থাকে যা তিনি করতে পারেন না। ‘omnipotence paradox’ এ উল্লিখিত ঘটনাটি স্রষ্টার সর্বশক্তিমানের সংজ্ঞার সাথে বৈপরীত্য তৈরি করে। এমন আরো অনেকগুলো প্যারাডক্স রয়েছে। যেমন, স্রষ্টা যেহেতু সব কিছু করতে পারে সেহেতু তিনি কি ‘মিথ্যা’ বলতে পারবে কিনা? তিনি কি তার মতো আরো একজন স্রষ্টা তৈরি করতে পারবে কি-না?
সংজ্ঞা অনুযায়ী স্রষ্টা হলো সর্বশক্তিমান। অর্থাৎ, তার চাইতে শক্তিমান আর কোন কিছু থাকা সম্ভব না। যেহেতু, স্রষ্টা সর্বশক্তিমান তাই তার চাইতে শক্তিশালী কোনো কিছুকে আমরা কল্পনা করতে পারি না। তার চাইতে শক্তিমান কোন কিছু থাকা সম্ভব না। নাস্তিকরা যখন এই প্যারাডক্স নিয়ে প্রশ্ন করে তখন তারা স্রষ্টাকে সর্বশক্তিমান ধরেই এই প্রশ্নটি করে। যেহেতু স্রষ্টার চাইতে শক্তিশালী আর কিছু থাকা সম্ভব না সেহেতু, তার চাইতে শক্তিশালী কোন জিনিস তৌরি হওয়াও সম্ভব না। তাই এ ধরনের প্যারাডক্স গুলো (স্রষ্টা এমন পাথর তৈরি করতে পারবে কি-না যেটা তিনি নিজেই তুলতে সক্ষম নয়, তিনি কি মিথ্যা বলতে পারবেন কি-না? তিনি কি তার মতো এমন আরো স্রষ্টা তৌরি করতে পারবে কি-না?) স্রষ্টার সর্বশক্তিমান গুণের সাথে বৈপরীত্য তৈরি করে। তাই আধিভৌতিকভাবে (metaphysically) এটা অসম্ভব যে স্রষ্টা তার চাইতে শক্তিমান কোন পাথর তৈরি করবেন, মিথ্যা কথা বলবেন বা তার মতোই আরেকজন স্রষ্টা তৈরি করবেন। সংজ্ঞা অনুযায়ী স্রষ্টা হচ্ছে অসৃষ্ট। এখন তিনি যদি কোন কিছু সৃষ্টি করেন তা তো আর স্রষ্টা হতে পারেনা, সৃষ্টি হয়ে যায়। তাই তিনি তার মতো স্রষ্টা তৈরি করতে পারবে কিনা এই প্রশ্নটিই একটি ভুল প্রশ্ন। এই প্রশ্নে প্রশ্নকারী পূর্ব থেকেই কোন প্রকার যুক্তি ছাড়াই অনুমান করে নিয়েছে যে, কোন কিছু সৃষ্টি হওয়ার পরেও তা অসৃষ্টি হতে পারে বা যেটা যৌক্তিকভাবে সম্ভব না সেটাও সম্ভব হতে পারে। এভাবে পূর্ব থেকে কোন কিছু অনুমান করে নেওয়া এক ধরনের ভ্রান্তি। যুক্তি বিদ্যার ভাষায় যাকে বলে লোডেড কোশ্চেন ফ্যালাসি (loaded question fallacy)। একইভাবে নাস্তিকরা পূর্ব থেকে অনুমান করে নেয় যে, সর্বশক্তিমানের চাইতে শক্তিমান কিছু থাকতে পারে বা যেটা যৌক্তিকভাবে অসম্ভব তা সম্ভব হতে পারে। তাই এই প্রশ্নটিও মূলত একটি ভ্রান্তি।
কোন মানুষ কি একইসাথে বিবাহিত আবার অবিবাহিত হতে পারে? অবশ্যই পারে না। আবার আমরা কি চাইলে এমন কোন বৃত্ত তৈরি করতে পারবো যার কোণ হবে চারটি? এটাও পারবো না। কারণ, এগুলো যুক্তিবিদ্যার মৌলিক নিয়মের সাথে সাংঘর্ষিক। যুক্তিবিদ্যার মৌলিক নিয়মের সাথে সাংঘর্ষিক কোন কিছুর অস্তিত্ব সম্ভব নয়। এখন কেউ যদি প্রশ্ন করে, কোন মানুষ কি বিবাহিত হয় আবার অবিবাহিত হতে পারবে? বা কেউ কি এমন কোন বৃত্ত বানাতে পারবো যার চারটি কোণ থাকবে? এই ধরনের প্রশ্নগুলো আসলে প্রশ্ন নয়। বাক্যের শেষে কেবল প্রশ্নবোধক চিহ্ন জুড়ে দিলেই প্রশ্ন করা হয়ে যায় না।
যেহেতু, স্রষ্টার চাইতে শক্তিমান আর কোন-কিছু থাকা সম্ভব না সেহেতু এমন কোন কিছুর অস্তিত্ব থাকাও সম্ভব নয়। তাই যেটা ঘটাই সম্ভব না তা স্রষ্টার উপর আরোপ করা যাবেনা। শাইখ আল-ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) বলেছেন; আহলে সুন্নাহর দৃষ্টিতে, আল্লাহ তায়ালা সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান এবং যা কিছু সম্ভব তার অন্তর্ভুক্ত। যেটি সহজাতভাবে অসম্ভব, যেমন একটি জিনিস বিদ্যমান এবং অস্তিত্বহীন, এর মধ্যে কোন বাস্তবতা নেই এবং এর অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না, তাই জ্ঞানীদের ঐকমত্য অনুসারে এটিকে ‘বস্তু’ বলা যায় না। এর মধ্যে নিজের মতো অন্যকে তৈরি করার ধারণা এবং আরও অনেক কিছু অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।[1]
স্রষ্টা সর্বশক্তিমান, তিনি যা ইচ্ছে তাই করতে পারেন এর মানে যা কিছু ঘটা সম্ভব, যা কিছু যৌক্তিকভাবে সম্ভব তার সব কিছু তিনি করতে পারেন। এখন কেউ প্রশ্ন তুলতে পারে তাহলে কি স্রষ্টা যৌক্তিক নিয়মে আবদ্ধ নয়? স্রষ্টা মোটেও যৌক্তিক নিয়মের অধীনে নয়। যুক্তি স্রষ্টার ঊর্ধ্বে কিছু নয়। বরং, স্রষ্টা হলেন সর্বোচ্চ যৌক্তিক সত্তা এবং যুক্তি হচ্ছে তার প্রতিফলনের মতো। তাই স্রষ্টা যৌক্তিক নিয়মের উপর নির্ভরশীল নয়। তিনি সমস্ত যুক্তির ভিত্তি। যুক্তি তার থেকেই আসে, তিনি যুক্তির নিয়মে আবদ্ধ নয়।
রেফারেন্সঃ
[1] An atheist saying “Can Allah create a god like Himself?” – Islam Question & Answer (islamqa.info)