কিছুদিন যাবত ইন্টারনেট দুনিয়ায় সিগমা রূলস বা সিগমা মেল নামক এক আশ্চর্য টপিক ছড়িয়ে পড়েছে। ফলস্বরূপ শুরু হয় অসংখ্য মিমসের পাশাপাশি নানা জল্পনা কল্পনার। কেউ আবার নিজের মতো করে সিগমা রূলস সাজাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। কিন্তু কী এই সিগমা মেল? এর উৎপত্তিই বা কোথায়?
অভ্যাস, আচরণ ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে মনোবিজ্ঞানীরা পুরুষদের কয়েকটি ভিন্ন দলে শ্রেণীবদ্ধ করেছেন। কিছুদিন আগে আলফা মেল এবং বিটা মেল নিয়ে বহুল আলোচনা হলেও এর পাশাপাশি মনোবিজ্ঞান শাখায় নতুন করে যুক্ত হয়েছে এই সিগমা মেল। অনেকের ধারণা সিগমা মেল আলফা মেলকে ছাড়িয়ে একদম শীর্ষে অবস্থান করে। কিন্তু আদতে তা নয়, সিগমা পুরুষ এবং আলফা পুরুষ উভয়কেই সমমর্যাদাপন্ন ভাবা হয়। তাই সঙ্গত কারণেই মনস্তাত্ত্বিকরা এদেরকে পূর্বের শ্রেণীক্রম থেকে বিচ্ছিন্ন রেখেছেন।
সিগমা পুরুষরা সাধারণত স্বাধীন, উচ্চ স্বনির্ভর, আত্মবিশ্বাসী ও সফলকামী হয়। যেখানে আলফা পুরুষের মধ্যে এক্সটোভার্ট বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়, সেখানে সিগমা-রা হয় সম্পূর্ণ ইন্ট্রোভার্ট। এরা সমাজের নিয়ম গণ্ডির পরোয়া না করে নিজ নিয়মে একাকী জীবন কাটাতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। এরূপ আচরণের জন্য অনেকে এদের নিঃসঙ্গ নেকড়ের সাথে তুলনা করে "Lone Wolf" নামক অ্যাখ্যা দিয়ে থাকে।
এখন সিগমা পুরুষদের কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য জেনে নেয়া যাক!
১. ইন্ট্রোভার্ট:
সিগমা পুরুষরা একাকী নিজ জগতে থাকতে ভালোবাসে। এজন্য তাদের লাজুক প্রকৃতির ভেবে বসবেন না, বরং অপ্রয়োজনীয় কাজে নিজের ক্যালরি আর সময় খোয়াতে চায় না। তবে সে জানে যে সম্পূর্ণ একাকী সে জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে না। এজন্য সে আশেপাশের মানুষের মূল্যও বোঝে। এ ধরণের আচরণ প্রদর্শনের ফলে কেউ কেউ এদের ‘ইন্ট্রোভার্টেড আলফা মেল‘ও বলে থাকেন।
২. নিজের সম্পর্কে সম্পূর্ণ জ্ঞানঃ
একজন সিগমা পুরুষকে সর্বাপেক্ষা ভালো জানে অন্য কেউ নয়, বইকি সে নিজেই। সে যথেষ্ট আত্মকেন্দ্রিক হওয়ায় নিজেকে সর্বোচ্চ সময় দেয়। ফলস্বরূপ একজন সিগমা মেল নিজের শক্তি আর দুর্বলতা এর ব্যাপারে ভালো জ্ঞান রাখে। পাশাপাশি নিজের দুর্বলতা গুলো কাটিয়ে উঠতে ব্যস্ত থাকে। এতে কাল পরিক্রমায় সে আরো আত্ম-উন্নয়ন সাধন করতে পারে।
৩. জনপ্রিয়তা:
একজন সিগমা পুরুষ আত্মপ্রচারে সময় ও শ্রম কোনোটিই দেয় না। তবুও তার অনন্য বৈশিষ্ট্য, বুদ্ধিমত্তা, স্বাধীন দৃষ্টিকোণের জন্য লোকমুখে সুপরিচিত থাকে। বিশেষ করে বিপরীত লিঙ্গের মানুষের মধ্যে তার তুমুল জনপ্রিয়তা পরিলক্ষিত হয়।
৪. ডিপ থিংকারঃ
সিগমা পুরুষরা জন্ম থেকেই অধিক বুদ্ধিমত্তার অধিকারী হয়। এজন্য তাদের পারিপার্শ্বিক বিষয়বস্তু বা ঘটনার বিশ্লেষণিক ক্ষমতাও বেশি থাকে। স্বভাবতই সে ডিপ থিংকিং এ মগ্ন থাকতে পছন্দ করে। তবে এই ডিপ থিংকিং অনেকসময় ওভার থিংকিং এর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
৫. মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতাঃ
ইন্ট্রোভার্ট প্রকৃতির হওয়া সত্বেও একজন সিগমা পুরুষ প্রয়োজনের তাগিদে নিজের স্বাচ্ছন্দ্যের পরিবেশ ছেড়ে এর বাইরেও নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে। এ কারণে দরকারের সময় সে লিডার কিংবা কর্মীর পাশাপাশি যেকোনো পদে যুক্ত হওয়ার ক্ষমতা রাখে। এজন্য তার দৃঢ় প্রত্যয় আর আত্মবিশ্বাসের পর্যাপ্ত অবদান আছে।
৬. অদম্য মনোভাব:
এ চরিত্রের ব্যক্তিরা কখনো বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হতে দ্বিধা করে না। এরা বিদ্রোহী, নিয়মের পরোয়া করে না। তাই সফলতা অর্জনের জন্য নিয়ম ভাঙতেও সদা প্রস্তুত। কিছুটা "রিস্ক হ্যায় তো ইশক হ্যায়" লাইনটার মতো।
৭. কখনো অনৈতিক:
নিয়ম ভাঙার কথাটা শুনে হয়তো অনেকের মনে সিগমা পুরুষ সম্পর্কে কালো দাগ পরে গেছে। তবে এটা সত্যি যে, সিগমা মেল-রা সমাজে নৈতিকতার শীর্ষে অবস্থান করছে না। সমাজের তথাকথিত নীতি-নৈতিকতা তাদের জন্য নয়, বরং এদের অবস্থান ধরা হয় নৈতিকতা ও অনৈতিকতার মাঝামাঝিতে। ফলশ্রুতিতে সিগমা পুরুষ বর্তমান যুব সমাজের আইডল হওয়ায় নৈতিক অবক্ষয় দেখা দিতে পারে।
এই তো গেল সিগমা মেলের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের খুটিনাটি। নেট দুনিয়ায় ব্যাপন জনপ্রিয় হলেও সিগমা মেলকে কিন্তু স্যুডোসায়েন্স বা ছদ্ম বিজ্ঞান হিসেবেই ধরা হয়। অর্থাৎ বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে এর কোনো ভিত্তি নেই।
ফলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেভাবে সিগমা রুলস কিংবা সিগমা মেল নিয়ে যত ভিডিও/ পোস্ট ছড়ায় তার সবগুলোই যে সাধারণ মানুষের সৃষ্টি তাতে কোন সন্দেহ নেই। সে যাই হোক এখন বলুন, আপনার সাথে কি সিগমা মেল-এর বৈশিষ্ট্য মেলে?
লেখকঃ Metheela Farzana Melody | Science Bee