চোখের জ্যোতি বাড়াতে কয়েকটি খাবারের গুরুত্ব রয়েছে। এর মধ্যে প্রথমেই ভিটামিন এ এর কথা চলে আসে। বেশ কয়েক বছর আগের এক জরিপে আমাদের দেশে ভিটামিন এর অভাবে শিশুদের অন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গে তথ্য মিলেছে। এর সংখ্যাও কম নয়, ৩০ হাজারের মতো। এতেই বোঝা যায়, অন্ধত্বের সঙ্গে ভিটামিন এর সম্পর্ক নিবিড়। আবার দীর্ঘদিন ক্র্যাশ ডায়েটের ফলেও দৃষ্টিশক্তির অবনতি হতে দেখা যায়। কারণ, ক্র্যাশ ডায়েট কোনো সুষম খাবারের নিশ্চয়তা দেয় না। ফলে পুষ্টির ঘাটতি প্রকট হয়।
অপুষ্টির জন্যও চোখের জ্যোতির সমস্যা হয়ে থাকে। শরীরের ক্ষুদ্রান্তে ভিটামিন এ শোষিত হয় চর্বির সঙ্গেই। দেখা যায় নারী অপেক্ষা পুরুষের অন্ত্রে ভিটামিন এ শোষিত হয় তাড়াতাড়ি। এদিকে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ভিটামিন ডি, ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস এবং জিঙ্কের সঙ্গে ভিটামিন এ যুক্ত খাবার খেলে বেশি কার্যকর হয়। তাহলে দেখা যাচ্ছে, পরোক্ষভাবে এসব খাবারই কমবেশি চোখের স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, চোখের যাবতীয় সমস্যা থেকে যুক্ত থাকার জন্য ভিটামিন এ প্রয়োজন। নবজাতকের যকৃতে এই ভিটামিন কতখানি সঞ্চিত থাকবে, তা নির্ভর করে মায়ের রক্তে কতটুকু ভিটামিন এ ছিল তার ওপর। ভিটামিন এ পাওয়া যাবে গাজর, ভুট্টা, আপেল, টমেটো, পাকা আম, পাকা পেঁপে, রাঙা আলু, মিষ্টিকুমড়া, ক্যাপসিকাম (লাল, হলুদ বা সবুজ), সবুজ শাকসবজি যেমন পালংশাক, শজনেপাতা, লেটুসপাতা, বাঁধাকপি ইত্যাদি থেকে।
প্রাণিজ উৎসের মধ্যে আছে মলা ও ঢেলা মাছ, কলিজা, মাখন, ডিম, ইলিশ, কড লিভার অয়েল প্রভৃতি। মলা মাছে প্রায় ২০০০ আইইউ ভিটামিন এ আছে, যা চোখের জ্যোতির জন্য উত্তম। ছোট শিশুদের ছোট মাছ পিষে চপের আকারে খাওয়ানো যেতে পারে। কিংবা অন্যান্য খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে তাদের দেওয়া যায়। ভিটামিন এ ক্যারোটিন হিসেবে পাওয়া যায়। পাকা আমে প্রায় ৬০ শতাংশ বিটা ক্যারোটিন থাকে, যা চোখের জ্যোতি বাড়াতে কার্যকর। গাঢ় সবুজ ও হলুদ রঙের সবজি রাতকানা রোগ থেকে রক্ষা করে। ছয়-সাত মাসের শিশুদের এ ধরনের সবজি সেদ্ধ করে চালুনি দিয়ে চেলে খাওয়ালে চোখের দৃষ্টি স্বচ্ছ থাকবে। চোখের সুস্থতার জন্য ভিটামিন এ কে রেটিনলও বলা হয়।
ভিটামিন ডি পাওয়া যাবে ঘি, মাখন, ডিমের কুসুম, সামুদ্রিক মাছ ও মাছের তেল থেকে। এ ছাড়া সূর্যের আলো থেকে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। এটা সর্বজনস্বীকৃত। প্রতিদিন ভিটামিন সিযুক্ত খাবার খেলে চোখের ছানি পড়া আটকানো যায়। খাবারে ভিটামিন এর অভাব হলে ভিটামিন সি দ্রুত ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। ভিটামিন সি পাওয়া যাবে সব রকম টক ফল, লেবু, আমলকী, সবুজ পাতাজাতীয় সবজি, টমেটো, পেয়ারা, স্ট্রবেরি, ক্যাপসিকাম, আলু, কাঁচা মরিচ, ফুলকপি ও বাঁধাকপি থেকে।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট চোখের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। ভিটামিন এ, সি, ই, সেলেনিয়াম ও বিটা ক্যারোটিন থেকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায়। অ্যামন্ড, আম ইত্যাদিতে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। অ্যামন্ড, আম, টমেটো, শসা, বাঁধাকপি ইত্যাদি থেকে পাওয়া যাবে ভিটামিন ই। সেলেনিয়াম আছে রসুন, কলিজা, পেঁয়াজ ও সবুজ শাকসবজিতে।
বিটা ক্যারোটিন পাওয়া যাবে মিষ্টিকুমড়া, গাজর, আনারস, পাকা আম, কাঁচা কাঁঠাল, শসা, মটরশুঁটি, ব্রকলি, মিষ্টি আলু ও পাসলেতে। চোখের জ্যোতির জন্য বিটা ক্যারোটিন খুবই প্রয়োজন।
অঙ্কুরিত ডাল ও ছোলায় ভিটামিন এ ও সি একসঙ্গে থাকে। চোখের জ্যোতি বাড়াতে ভিটামিন বি বা রাইবোপ্লাভিনের গুরুত্বও কম নয়। এটা পাওয়া যাবে দুধ, কলিজা, ইস্ট, পনির, ডিম ও মাছ থেকে। সুতরাং চোখের জ্যোতি বাড়াতে হলে চাই সবুজ শাক, হলুদ বিভিন্ন রঙের শাকসবজি, ফল ফুল, লৌহ ও আমিষযুক্ত খাবার।