পুরুষ এবং নারীর মস্তিষ্কের পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। দেশের অধিকাংশ লোকই জানে নারীদের তুলনায় পুরুষের বুদ্ধি বেশি। কেননা পুরুষের মস্তিষ্কের আকার নারীদের থেকে ১০ শতাংশ বড়। তবে অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন, যেহেতু পুরুষের দৈহিক গঠন নারীদের তুলনায় বড় হয়, তাই মস্তিষ্কের গঠনও সেই অনুপাতে বড়।
গবেষণাধর্মী এমআরআই স্ক্যান করে দেখা গেছে, ব্রেনের কিছু কিছু অংশ লিঙ্গবিভেদে সাইজে বড় হয়ে থাকে। যেমন- মানবদেহের কানের ওপরে মস্তিষ্কের মধ্যে আখরোটের মতো একটি ছোট একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ আছে। একে বলে অ্যামিগডালা। মজার ব্যাপার হল, ছেলেদের এই অংশটি মেয়েদের চেয়ে অনেকটা বড়।
আমাদের মস্তিষ্কে দুই রকমের অংশ আছে- প্রথমটি স্নায়ুকোষ সমূহ (গ্রে ম্যাটার)। মস্তিষ্কের এই অংশ থেকে সমস্ত ধরনের কাজকর্মের পরিকল্পনা হয়। দ্বিতীয় অংশটি হল স্নায়ুজালিকা সমূহ (হোয়াইট ম্যাটার)। মস্তিষ্কের এই অংশের সাহায্যে দেহের অসংখ্য কোষ একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে। ব্রেনের এই অংশকে সুইচ এবং অসংখ্য তারের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। এছাড়া মস্তিষ্কের ডান এবং বাম- এই দুটি গোলার্ধ রয়েছে। এই দুই প্রান্তের মধ্যে সংযোগ রক্ষা করে চলেছে একটি চওড়া কেব্ল। একে বলে করপাস কালোসেম।
ভাষা শিক্ষা, গোনার ক্ষমতা, লেখাপড়া শেখার ক্ষেত্রে বাম গোলার্ধের বেশি ভূমিকা থাকে। অন্যদিকে চারুকলা, সঙ্গীত, কল্পনা প্রবণতা এইগুলি ডান গোলার্ধের কাজ। দেখা গিয়েছে পুরুষদের মস্তিষ্কে স্নায়ুকোষের সংখ্যা নারীদের চেয়ে সাতগুণ বেশি।
এইজন্য পুরুষরা যে কোন সিদ্ধান্ত দ্রুত নিতে পারেন। তবে নারীদের আবার স্নায়ুসংযোগকারী নার্ভ পুরুষদের তুলনায় দশ গুণ বেশি।
তাই তাদের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা এবং বাকশক্তি অনেক বেশি থাকে। এই জন্যে যুক্তি-তর্কে নারীদের হারানো শক্ত।
এছাড়া সিংগুলেট জাইরাস অংশ বড় হওয়ার কারণে নারীরা খুব দ্রুত এবং সঠিকভাবে স্মৃতি রোমন্থন করতে পারেন, যা সাধারণত পুরুষরা পারেন না।
তবে পুরুষদের মস্তিষ্ক অনেক কাজ মেয়েদের চেয়ে বেশি দক্ষ। উদাহরণ হিসেবে গাণিতিক সংখ্যাতত্ত্ব, স্থাপত্যবিদ্যা, ক্রীড়াবিদ্যা এবং মাপজোকের কাজের কথা বলা যায়।
তবে গবেষণায় জানা গেছে, পুরুষরা কাজকর্ম করার ক্ষেত্রে ডান অথবা বাম যে কোনও একটি মস্তিষ্কের উপরই নির্ভরশীল থাকেন। অন্যদিকে, নারীরা ব্রেনের দুটি অংশেরই সমানভাবে ব্যবহার করে। এই কারণে পুরুষদের তুলনায় মেয়েরা কাজকর্ম গুছিয়ে করতে পারেন।
তবে কিছু স্ত্রী হরমোন যেমন ইস্ট্রোজেনের প্রভাবে নারীরা অনেক বেশি আবেগপ্রবণ হন পুরুষদের তুলনায়। এই জন্যে নরীদের মধ্যে অবসাদে ভোগার প্রবণতা বেশি থাকে। অন্যদিকে পুরুষদের মধ্যে অটিজম, সিজোফ্রেনিয়ার মতো রোগ বেশি দেখা যায়। আবার ক্রনিক বা দীর্ঘদিনের ব্যথা যা অনেকটা মস্তিষ্কে উপর প্রভাব ফেলে যেটা মেয়েদের বেশি হয়।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে শারীরিকভাবে পুরুষ এবং মহিলাদের মস্তিষ্কের গঠন এবং কাজের কিছু পার্থক্য রয়েছে।
তথ্যসূত্র : বর্তমান।
কেএনইউ/ এআর