ঠান্ডা এবং জীবাণুর সংক্রমণের মাধ্যমে গলায় ব্যাথা অনুভব হতে পারে। ঠান্ডার কারণে গলা ব্যাথা হয়, এর পাশাপাশি কাশি, জ্বর, সর্দি, হাঁচি এবং শরীরেও ব্যাথা হয়। গলা ব্যথা একটু মারাত্মক আকার ধারণ করলে, টনসিল ফুলে গিয়ে খাবার গিলতে বা ঢোঁক গিলতে অসুবিধা হয়। বিভিন্ন কারণে গলায় ব্যথা হতে পারে। এই সকল কারণ একটি হতে অন্যটি ভিন্ন। তবে জেনে নিন গলার বিভিন্ন রোগ সম্পর্কে-
* সর্দি কাশি থেকে গলা ব্যথা হতে পারে।
* টনসিলের সমস্যা হতে পারে।
* রিউম্যাটিক ফিভার, ডিফথেরিয়াকিডনীর সমস্যা, ক্যানসার প্রভৃতি রোগের প্রাথমিক লক্ষন হল গলা ব্যাথা।
গলার রোগের লক্ষন সমূহ-
১. মুখ গহ্বরে ব্যথা, ফ্যারিংসে প্রদাহ।
২. গলায় ব্যাথা ও ঢোঁক গিলতে কষ্ট হয়।
৩. হালকা জ্বর থাকতে পারে আবার নাও পারে।
৪. তালুতে ব্যথা ও অনেক সময় তালু ফুলে যায়।
৫. গলার নিকট কফ জমে থাকে কিন্তু বের হয় না।
৬. শুকনো কাঁশি থাকতে পারে।
৭. গলার স্বর বসে যায়।
প্রাথমিক খাবার ও চিকিৎসা-
১. ঠাণ্ডা লাগানো যাবে না, গলায় গরম কাপড় ব্যবহার করতে হবে।
২. জোরে কথা বা বেশী কথা বলা যাবে না।
৩. জ্বর থাকলে তরল ও লঘু খাবার খেতে হবে। আর না থাকলে পুষ্টিকর ও ওষুধ খেতে হবে।
৪. ধূমপান বর্জন করতে হবে।
টনসিল বা টনসিলাইটিস-
গলার ভিতরে দুই পাশে দুইটা মাংস পিণ্ড আছে তাদেরকে টনসিল বলে। মাঝে মাঝে তা সুপারির ন্যায় বড় হয় ও ব্যথা করে যা আমরা টনসিল হওয়া বা টনসিলাইটিস বলে থাকি। সাধারণত শিশুদের এটি বেশি হয় তবে যে কোনো বয়সীদের এই রোগ হতে পারে।
রোগের কারণ-
* এটি ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ। ট্রেপটোকক্কাস হেমোলাইটিকাস নামক জীবাণু দ্বারা এই রোগের সংক্রামণ ঘটে।
* মাত্রাতিরিক্ত পরিশ্রম।
* অতিরিক্ত ঠাণ্ডার মধ্যে রাত জাগলে বা গলায় ঠাণ্ডা লাগা।
* পুষ্টির অভাব
রোগের লক্ষণ সমূহ-
১. গলায় ব্যথা ও ঢোক গিলতে কষ্ট হয়।
২. হালকা জ্বর বা ১০৩/১০৪ ডিগ্রি জর থাকতে পারে।
৩. টনসিল লাল বর্ণের হয় এবং ফুলে উঠে।
৪. টর্চ লাইট দিয়ে দেখলে গলার ভিতর টনসিল দেখা যায়।
৫. মাথা ধরা, শ্বাসকষ্ট,গিলতে কষ্ট , স্বরভঙ্গ ইত্যাদি লক্ষন দেখা যেতে পারে।
খাবার ও চিকিৎসা-
১. ঠাণ্ডা লাগানো যাবে না, গলায় গরম কাপড় ব্যবহার করতে হবে।
২. জোরে কথা বা বেশী কথা বলা যাবে না।
৩. জ্বর থাকলে তরল ও লঘু খাবার খেতে হবে।
৫. গলায় গরম সেঁক উপকারি।
মাম্পস-
মানুষের দুই কানের লতির নিচে প্যারোটিড গ্র্যান্ড নামে দুই পাশে দুটি স্যালভারী গ্র্যান্ড থাকে। এই রোগে প্যারোটিড গ্ল্যান্ড আক্রান্ত হয়। ৫/৬ বছরের উপরের ছেলে মেয়েদের এই রোগ বেশী হয়।
রোগের কারণ-
* প্রধানত ভাইরাস দ্বারা এই রোগের সৃষ্টি হয়।
* প্যারোটিড গ্ল্যান্ডে কোন ভাবে তরল পানীয় ঢুকলে তা ভাইরাস দ্বারা আক্রন্ত হয়ে এ রোগের সৃষ্টি হয়ে থাকে
রোগের লক্ষণ সমূহ-
১. প্যারোটিড গ্র্যান্ড ফুলে যায়। প্রথমে এক পাশে এবং ২/৩ দিন পর অন্য পাশে কিংবা একই সঙ্গে গ্র্যান্ড ফুলে যায়।
২. জ্বর হতে পারে।
৩. জ্বরের মাত্রা ১০২ থেকে ১০৮ ডিগ্রি পর্যন্ত হতে পারে।
ঘাড়ের মাংসপেশিতে ব্যথা বা ঘাড়ে ব্যাথা-
হঠাৎ ঘাড়ের মাংসপেশির সংকোচনকে টরটিকলিজ বলে। মাংসপেশির সংকোচনের সময় ব্যথা হয়।
রোগের কারণ-
১. বাত রোগ থাকলে।
২. ঘাড়ের হাড় বা লিম্প গ্র্যান্ডের অসুখ থাকলে।
৩. হিস্টিরিয়া রোগ থাকলে।
৪. মুখের মাংসপেশির সংকোচন হলে।
৫. মানসিক ডিপ্রেসন হলেও এই রোগ হতে পারে।
রোগের লক্ষন সমূহ-
১. হঠাৎ করে তীব্র ব্যথা হয়, ঘাড় নাড়ানো যায় না।
২. ঘাড় নাড়ালে মাংসপেশি সজোরে সঙ্কুচিত হয়।
৩. রোগী অস্বস্থি ও কষ্ট অনুভব করে।
৪. ঘাড়ের মাংসপেশি শক্ত হয়ে যায়।
খাবার ও চিকিৎসা-
১. কোনো নাক, কান ও গলা বিশেশজ্ঞ বা নিউরোলজিস্ট বা হাড় বিশেশজ্ঞ থাকলে তার কাছে দেখাতে হবে।
২. সার্ভিকাল ক্বলার ছাড়া হাঁটা যাবে না।
৩. স্বাভাবিক খাবার খেতে হবে।
গলার স্বর কমা বা গলা ভাঙ্গা-
বহুবিধ রোগে রোগীর গলার স্বর বসে যেতে দেখা যায়। শ্বাস নালীর দুই পাশে দুটি ভোকাল কৰ্ড আছে। তাদের সংকোচন বা সম্প্রসারণে গলার স্বর ভেঙ্গে যায়।
রোগের কারণ-
১. রোগজীবাণু দ্বারা স্বরযন্ত্র, ফেরিংস, ট্রেকিয়া ব্রংকাস প্রভৃতির প্রদাহ হলে।
২. সর্দি-কাশি, কাশি ও ঠাণ্ডা লাগা।
৩. দুর্বলতা, রক্তশূন্যতা, অধিক রক্তপাত।
৪. হিষ্টিরিয়া রোগ থাকলে ।
৫. চিৎকার করে কাঁদলে বা গান গাইলে বা প্রচারণার কাজ করলে।
রোগের লক্ষণসমূহ-
১. কথা বের হয় না।
২. অস্পষ্ট ও বিকৃত স্বর।
৩. গলা শুকনো থাকে।
৪. শ্বাসকষ্ট হয়।
৫. গলা ব্যথা ও গলা জ্বালা করে।
৬. দুৰ্গন্ধময় শ্লেষ্মা।
৭. ভোরে বা সন্ধ্যায় রোগ বৃদ্ধি পায়।
রোগের চিকিৎসা সমূহ-
১. চিৎকার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
২. ঠান্ডা লেগে যদি গলা বসে যায়, তবে কথা বলা বন্ধ করতে হবে বা কমিয়ে দিতে হবে। এমনকি ফিসফিস করেও কথা বলবেন না তখন।
৩. ধূমপান গলার যেকোনো সমস্যাকে আরো বাড়িয়ে দেয় বা জটিল করে তোলে। তাই ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে।
ডেইলি বাংলাদেশ