একটা বড় পাথরকে ঠেলে পাহাড়ে ওঠানো যদি ‘কাজ (Work)’ হয়, তবে সেই পাথরটাকে কতো কম সময়ে পাহাড়ে উঠানো সম্ভব হচ্ছে, সেটা হচ্ছে ‘ক্ষমতা (Power)’। এই ক্ষমতা মাপারই একটা একক হচ্ছে ‘হর্সপাওয়ার’। সাধারণের মাঝে বেশ প্রচলিত একটা ধারণা হচ্ছে, এক হর্সপাওয়ার মানে একটা ঘোড়া সর্বোচ্চ যে পরিমাণ কাজ করার ক্ষমতা প্রদর্শন করতে পারে, সেটা। কিন্তু ব্যাপারটা ভুল।
ক্ষমতার পরিমাপক হিসেবে এই হর্সপাওয়ার এককটার প্রতিষ্ঠার জন্যে দায়ী স্কটিশ প্রকৌশলি ‘জেমস ওয়াট’। কিন্তু তিনিও আসলে এই ধারণাটা পেয়েছিলেন আরেক ইংলিশ প্রকৌশলি ‘টমাস সেইভারি’-র নিকট হতে। তো খুব সরল ভাষায় জেমস ওয়াটের মতে, একটা ঘোড়াকে সহজে ক্লান্ত না হতে দিয়ে বেশ লম্বা সময় ধরে কাজ করাতে গেলে সর্বোচ্চ যে কাজ করার ক্ষমতাটা পাওয়া যাবে, সেটাই এক হর্সপাওয়ার। কিন্তু ঘোড়া কতো দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়লো, সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে তাকে খাটিয়ে গেলে দেখা যাবে সেই ঘোড়াটাই আবার সর্বোচ্চ ১৪.৯ হর্সপাওয়ার ক্ষমতা প্রদর্শন করতে সক্ষম! সাইন্স বী
একই সূত্রে মানুষকে ফেললে, মানুষের কাজ করার ক্ষমতা আসে ০.১ হর্সপাওয়ার, যদি সহজে ক্লান্ত না হতে চায়। আর ক্লান্তির ব্যাপারে মাথা না ঘামালে সুস্থ মানুষের পক্ষে সর্বোচ্চ ১.২ হর্সপাওয়ার ক্ষমতা প্রদর্শন সম্ভব। প্রশিক্ষিত অ্যাথলেটরা ২.৫ হর্সপাওয়ার পর্যন্ত যেতে পারেন। স্প্রিন্টার উসাইন বোল্টের এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ হর্সপাওয়ার ৩.৫। শুধু তাই নয়! আমরা জানি, সাধারণত ১ হর্সপাওয়ার = ৭৪৫.৭ ওয়াট (জেমস ওয়াটের নামানুসারে)। কিন্তু সত্যি কথা হচ্ছে, অঞ্চলভেদে এবং কী ধরণের যন্ত্রের ক্ষমতা মাপা হচ্ছে, এসবের উপরে নির্ভর করে এই হিসেবটাও বেমালুম পালটে যেতে পারে। সাইন্স বী
ইম্পেরিয়াল হিসেবে, ১ হর্সপাওয়ার = ৭৪৫.৭ ওয়াট
মেট্রিক হিসেবে, ১ হর্সপাওয়ার = ৭৩৫.৫ ওয়াট
১ ইলেক্ট্রিকাল হর্সপাওয়ার = ৭৪৬ ওয়াট
১ বয়লার হর্সপাওয়ার = ৯৮১২.৫ ওয়াট
উল্লেখ্য, উপরের মেট্রিক হর্সপাওয়ারের উদ্ভব জার্মানিতে। ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে এটাকে বাদ দিয়ে কিলোওয়াটকে গ্রহণ করা হয় একক হিসেবে। বর্তমানে টেকনিক্যাল কাজে এটার উপযোগিতা নেই। কিন্তু অনেক টিভি বিজ্ঞাপনে এবং কাস্টমারকে যন্ত্রের ক্ষমতা সম্পর্কে ধারণা দিতে এখনো এটা ব্যবহার করা হয়, কারণ অনেক কাস্টমারই এখনো কিলোওয়াটের হিসেবটা ঠিক বুঝেন না, যতোটা ভালো বুঝেন এই মেট্রিক হর্সপাওয়ারের হিসেবটা। মাঝে মাঝে মেজাজ বিলা করে পোস্টের ছবির মতো ব্রেন্ডন ফ্রেজার স্টাইলে বন্দুক লোড শুরু না করে কাস্টমারের জ্ঞানের লেভেলে কথা বলতে পারলে কাজ আদায় অনেক সহজ হয়ে যায়!
তথ্যসূত্র : বিজ্ঞানযাত্রা। আরও বিস্তারিত জানতে : https://en.wikipedia.org/wiki/Horsepower
সংগ্রহে - আয়েশা আক্তার