আপনি কি একজন এমবিভার্ট?
আমাদের মাঝে কেউ কেউ ইন্ট্রোভার্ট হয় আবার কেউ হয় এক্সট্রোভার্ট অর্থাৎ কেউ খুব মিশুক হয় কেউ আবার নিজের মত একা থাকে। কিন্তু এদের মাঝামাঝি আরেক ভাগ আছে যারা কখনো ইন্ট্রোভার্ট আবার কখনো এক্সট্রোভার্ট। যাদের বলা হয় এমবিভার্ট।
অর্থাৎ অন্যভাবে বলতে গেলে, ‘এমবিভার্ট এমন এক প্রকার মানুষদের সংজ্ঞায়িত করে, যারা একই সাথে একজন ইন্ট্রোভার্ট এবং এক্সট্রোভার্ট উভয়ের আচরণকে ধারণ করে থাকেন।’
জীবনে চলার পথে সবচেয়ে বেশি সমস্যা এমবিভার্টদের হয়। যারা এমবিভার্ট তারা মাঝে মাঝে খুব হৈ চৈ করতে ভালোবাসে আবার মাঝে মাঝেই একা থাকতে ভালোবাসে। এরা সহজে সবার সাথে মিশে যায় কিন্তু তবুও এদের অনেক ফ্রেন্ড থাকেনা আবার এরা একদম একাও থাকেনা।
গুটিকয়েক ফ্রেন্ড নিয়েই এরা থাকে। এদের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো শত কষ্ট হলেও এরা মুখ ফুটে বলবেনা কিছু আপনাকে। বরং সেই কষ্ট সহ্য করেই হাসিমুখে থাকবে। তাই এদের মন খারাপ হলেও সেটা মুখে না বলা পর্যন্ত আপনি সেটা ধরতে পারবেননা। ওদের একটা আলাদা জগৎ থাকে।
নিজেদের চারপাশে এরা একটা দেয়াল বানিয়ে নেয়। সে জগতে আপনি চাইলেই প্রবেশ করতে পারবেন না। বরং সেখানে প্রবেশ করার চাবি হচ্ছে আপনার ভালোবাসা আর ভরসা করার মতো ভালো ব্যবহার।
এমবিভার্টরা যাকে ভালোবাসে তাকে খুব মন দিয়ে ভালোবেসে ফেলে। আর তাই কষ্টটাও বেশি পায়। কিন্তু তবুও এরা আপনার খারাপ চাইবেনা কোনোদিন।এরা আপনার প্রতি ভরপুর অনুভুতি রেখেও আপনার থেকে নিদিষ্ট দূরত্ব চলবে আপনি চাইলেও সেটা বুঝাতে পারবেনা। এদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হয় কেউই এদের বুঝতে পারেনা।
কারণ যে মানুষটা ঠিক একটু আগেই অনেক খুশি ছিলো হঠাৎ করেই সে বদলে গিয়ে একা থাকতে চাইলে কেউই সেটা ভালোভাবে নিবেনা। তখন বেশিরভাগই তাদের ভুল বুঝে। কেউই বুঝেনা এখানে এদের কোনো হাত নাই। কেউ চাইলেও এদের এই পরিবর্তন হওয়া আটকাতে পারবেনা।
এমবিভার্টরা মাঝে মাঝে নিজেদের ভীষণ একা ভাবে। কারণ মন খুলে কথা বলার মতো কেউ হয়তো নেই। এদেরকে শামুক বলা যায়। কারণ এরা বাহিরের দিকে শামুকের মতো শক্ত খোলস পরে থাকে কিন্তু এদের ভিতরটাও শামুকের শরীরের মতো নরম। তাদের নিজেদের জগতে যদি আপনি একবার ঢুকে যেতে পারেন,তখন বুঝবেন সে আসলে আপনার চেনার চেয়েও কতটা অন্যরকম। তখন হয়তো আপনি তাকে আরও বেশি ভালোবেসে ফেলবেন।
কিন্তু প্রবেশ করার অধিকার পেয়েও আপনি যদি তার সেই ভরসা-বিশ্বাস একবার ভেঙে ফেলেন তখন তার সেই জগৎ টা ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। সে তখন ভীষণ একা হয়ে যায়।এমবিভার্টদের ঠকানো অনেক সহজ। কারণ হাজারবার ঠকলেও এরা আপনার নামে একটা অভিযোগও করবেনা। কিন্তু সেই ঠকে যায়।
এমবিভার্টদের নিয়ে পৃথিবীর মানুষদের মাতামাতি শুরু মাত্র বিংশ শতাব্দীতে এসে। কিন্তু আপনি কি কখনো ভেবেছেন! আপনি নিজে একজন এমবিভার্ট কি না! বিষয়টি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের বিস্তর গবেষণা ইতিমধ্যে আমরা পেয়ে থাকি। একজন এমবিভার্ট ধর্মী মানুষ কি ধরনের আচরণ করতে পারে, কিংবা একজন এমবিভার্ট কিভাবে জীবন ধারণ করে এবং সেখানে বিশেষ কোনো দিক পরিলক্ষিত হয় কিনা এ সকল বিষয়ে মতামত দিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের নামীদামী গবেষকেরা।
এমবিভার্টদের আচরণ :
ডব্লিউএসজে এর অনুসন্ধানে বলা হয়েছে, ‘এমবিভার্ট ধর্মীয় মানুষেরা যখন ইন্ট্রোভার্টদের মত আচরণ করে (চুপচাপ একাকী) তখন তারা বিরক্ত হয়ে যায়, আবার যখন তারা এক্সট্রোভার্টদের মত আচরণ করে তখনও শেষে তারা বিরক্ত হয়ে যান। তাই এই আচরণের মানুষগুলো দুটো চরিত্রকেই ধারণ করে তৃতীয় আরেকটি চরিত্র প্রকাশ করে থাকে।’
ব্রিটিশ মনস্তাত্বিক 'ব্রায়ান লিটল' এমবিভার্টদের বিশেষায়িত করতে গিয়ে বলেন- এমবিভার্ট ধর্মী মানুষেরা তাদের জীবন চলার পথে নিজের ব্যক্তিগত বিষয়ে তুলনামূলক বেশি স্বাধীনতা ভোগ করতে চায়। একজন এমবিভার্ট কখনোই নিজের উপর অন্য কারো হস্তক্ষেপ মেনে নিতে চায় না।
অন্য অনেক মনস্তাত্বিক মনে করেন- এই ধরনের মানুষেরা একদিকে যেমন মনের দিক থেকে শক্ত হয়ে থাকেন অন্যদিকে যেকোনো কঠিন সময়ে ভেবে চিন্তে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
এমবিভার্টদের বৈশিষ্ট্য:
ইন্ট্রোভার্ট এবং এক্সট্রোভার্টদের ন্যায় এমবিভার্টদের ও বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন-
১. নতুন মানুষদের সঙ্গে সামাজিক সম্পর্কে জড়াতে অভ্যস্ত।
২. খুব সহজেই মানুষদের বিশ্বাস করে থাকেন তবে একই সঙ্গে বিশ্বাস ভঙ্গ হলে সেই পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য প্রকৃতিগত ভাবেই প্রস্তুত থাকে।
৩. প্রচুর পরিমাণে ভ্রমণ এবং বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে সময় কাটাতে পছন্দ করে
৪. আত্মীয় কিংবা প্রতিবেশী সবার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষায় অত্যন্ত পারদর্শী।
৫. সিদ্ধান্ত নিতে ভেবে চিন্তে আশপাশের অন্য সকলের কথা চিন্তা করে সিদ্ধান্ত এমনভাবে নেয় যেনো কেউই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
৬. কাজের ক্ষেত্রে একত্রে অনেক মানুষের সঙ্গে কিংবা একাকী নিজের কাজ নিজে করে ফলতে পারেন।
৭. একই সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের মানুষদের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে পারে।
৮. একজন এমবিভার্ট একজন দক্ষ সংগঠক।
এমন আরও কিছু বৈশিষ্ট্য নিয়ে মূলত একজন এমবিভার্ট বেঁচে থাকেন। এ সব বৈশিষ্ট্য নিয়েই একজন মানুষ এমবিভার্ট হয়ে থাকে। বলুন তো আপনি কোন প্রকৃতির মানুষ! ইন্ট্রোভার্ট, এক্সট্রোভার্ট, নাকি এমবিভার্ট?
|| Source :
https://www.aparajeobangla.com/seven-colours/news/17463 ||