হজমের সমস্যা যেমন ক্ষুধাহীনতা, পেটে গন্ডগোল, কোষ্ঠকাঠিন্য, পেটের ব্যাথা (পাকস্থলীর মধ্যের আবরনের প্রদাহ) এর জন্য মেথি ব্যবহার করা হয়। মেথি ডায়বেটিস, মাসিকের ব্যাথা, পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম, (এমন একটি অবস্থা যাতে মহিলাদের হরমোনের মাত্রাকে প্রভাবিত করে। এই রোগ হলে নারীর শরীরে বেশি পরিমান পুরুষ হরমোন তৈরি হয়। এ রোগের কারণে নারীদের মাসিক কম হয় এবং তাদের জন্য বাচ্চা জন্ম দেয়া কঠিন হয়ে পড়ে) বাত, থাইরয়েডের কার্যক্রম কম হওয়া এবং স্থূলতার জন্য ব্যবহার করা হয়। এটি হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য যেমন ধমনী শক্ত হয়ে যাওয়া (অ্যাথেরোসক্লেরোসিস), কোলেস্টেরল এবং ট্রিগ্লাইসেরাইডস জাতীয় কিছু চর্বিতে উঁচু রক্তের মাত্রার জন্য ব্যবহার করা হয়।
মেথি কিডনির অসুখ, ভিটামিন ঘাটতির অসুখ, বেরিবেরি, মুখের আলসার, ফোঁড়া, ব্রংকাইটিস, চামড়ার নিচে কোষের ক্ষত (সেলুলাইটিস), যক্ষা, দীর্ঘস্থায়ী কাশি, চুলহীনতা, ক্যান্সার, পারকিন্সন’স ডিজিজের জন্য ব্যবহার করা হয়।
পুরুষরা হার্নিয়া, বন্ধ্যাত্ব, শিশ্নের দন্ডায়মানহীনতা এবং অন্যান্য সমস্যার জন্য মেথি ব্যবহার করে। নারী ও পুরুষ উভয়েই যৌনতার জন্য মেথি ব্যবহার করে।
স্তন্যদানকারী মহিলারা দুধের প্রবাহ বাড়ানোর জন্য মেথি ব্যবহার করে থাকেন।
কখনো কখনো মেথি পুলটিস হিসেবে ব্যবহার করা হয়। মেথি কাপড়ে মুড়িয়ে, গরম করে ব্যাথা ও ফোলা যায়গায় লাগানো হয়, পেশির ব্যাথা, গোড়ালির ব্যাথা, ক্ষত, পায়ের আলসার এবং একজিমার জন্য ব্যবহার করা হয়।
মেথি মসলা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। মেথির নির্যাস সাবান ও প্রসাধন সামগ্রীতে ব্যবহার করা হয়।
মেথি কিভাবে কাজ করে?
মেথি পাকস্থলীতে চিনির শোষণ ধীর করে আর ইনসুলিন উজ্জীবিত করে। এই দুটো কাজের মাধ্যমে মেথি ডায়বেটিসে ভোগা লোকদের শরীরে চিনির প্রভাব কমায়।
সম্ভাব্য যেসব রোগের জন্য কার্যকরী
ডায়বেটিস. কিছু গবেষণায় দেখা যায় খাবারের সময় মেথির বিঁচি খেলে খাওয়ার পরে টাইপ 2 ডায়বেটিসের রোগিদের চিনির পরিমান কমে। যাহোক, দিনে এক থেকে দুইবার ৫-৫০ গ্রাম মেথির বিঁচি খেলে তা ডায়বেটিসের জন্য কার্যকরী হয়, ২.৫ গ্রামের চেয়ে কম মাত্রায় গ্রহন করলে তা কাজ করে না। টাইপ 1 ডায়বেটিসের জন্য দৈনিক ৫০ গ্রাম মেথি দুই বার গ্রহন করলে তা প্রস্রাবে চিনির পরিমান কমায়।
মাসিকের ব্যাথা
মাসিকের প্রথম তিন দিন ১৮০০-২৭০০ মিলিগ্রাম মেথির গুড়া গ্রহন করে ও পরবর্তী দিনগুলোতে ৯০০ মিলিগ্রাম করে দিনে তিনবার মেথির গুড়া খেলে মহিলাদের মাসিকের ব্যাথা কমে। ব্যাথানাশক খাওয়ার প্রয়োজনও কমে যায়।
ওজন কমা
কিছু গবেষণায় দেখা যায় ৫০০ মিলিগ্রাম মেথি ৮ সপ্তাহ ধরে খাওয়ার পরে শরীরে চর্বির পরিমান কমে।
বুকে জ্বালা পোড়া
গবেষণায় দেখা গেছে খাবারের আগে একটি নির্দিষ্ট মেথি দিয়ে তৈরি দ্রব্য (ফেনুলিইফ, ফ্রুটারোম বেলজিয়াম) খেলে বুকের জ্বালা পোড়া কমে।
উঁচু মাত্রার কোলেস্টেরল
প্রাথমিক গবেষণায় দেখা গেছে মেথির বিঁচি সর্বমোট এবং কম-ঘনত্বের লিপোপ্রোটিন (এলডিএল বা “খারাপ”) কোলেস্টেরল কমায়। কিন্তু বেশি-ঘনত্বের লিপোপ্রোটিন (এইচডিএল বা “ভালো”) কোলেস্টেরল এবং ট্রিগ্লাইসেরাইডসের উপর মেথি বিঁচির প্রভাব একেক গবেষণায় একেক রকম দেখা যায়।
বুকের দুধ তৈরিতে
বাচ্চা জন্ম দেয়ার কিছু পরে মেথির ক্যাপসুল বা মেথির চা খেলে স্তনপান করানো নারীদের দুধের উৎপাদন বাড়ে। বাচ্চা জন্ম দেওয়ার এক বা দুই দিন পরে মেথি খেলে দুধের পরিমান বাড়ে। কিন্তু সব গবেষণায় এ রকমটা দেখা যায় না।
পুরুষের বন্ধ্যাত্ব
প্রাথমিক গবেষণায় দেখা গেছে মেথির তেল দৈনিক তিনবার করে ৪ মাস খেলে বীর্যের সংখ্যা বাড়ে। কিন্তু মেথির বিঁচির অন্য অংশ খেলে এমন ফলাফল পাওয়া যায় না।
ওজন কমা
প্রাথমিক গবেষণায় দেখা গেছে অতিরিক্ত ওজনের পুরুষরা যদি দৈনিক তিনবার ৩৯২ মিলিগ্রাম করে ২-৬ সপ্তাহ ধরে মেথির বিঁচির নির্যাস গ্রহন করে তাহলে তাদের চর্বি খাওয়ার মাত্রা কমে। কিন্তু এর চেয়ে কম মাত্রায় খেলে তা কাজ করে না। কিন্তু মেথি ওজন, খিদে পাওয়া, বা পেট ভরা অনুভবকে প্রভাবিত করে না। সকালের খাবারে ৪ বা ৮ গ্রাম মেথির আঁশ যোগ করলে পেট ভরা অনুভূত হয় এবং দুপুরের খিদে অনেক কমে যায়।
ডিম্বাশয়ের সিস্ট বা (পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম)
কিছু প্রাথমিক গবেষণায় দেখা যায় প্রতিদিন নির্দিষ্ট ধরনের মেথির বিঁচির নির্যাস ১০০০ মিলিগ্রাম করে গ্রহন করলে ডিম্বাশয়ের সিস্টের আকার কমতে পারে আর এর ফলে মাসিকের দিনগুলো নির্দিষ্ট থাকা ও মাসিক কত দিন পর পর হবে তা নিয়ন্ত্রিত হয়।
সূত্র: ওয়েবএমডি