স্ট্রোক বা পক্ষাঘাত সাধারণত বয়স্ক ব্যক্তিদের রোগ। মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ কমে গিয়ে বা হঠাৎ রক্ত জমাট বেঁধে কোনো এলাকা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ার নাম হলো স্ট্রোক। ফলে শরীরের এক দিক বা কোনো অংশ অবশ হয়ে যেতে পারে, কথা জড়িয়ে যেতে পারে বা বন্ধ হয়ে যেতে পারে, খাবার গ্রহণে অসুবিধা হয়, প্রস্রাব ও মলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যেতে পারে। বয়স্ক ব্যক্তিদের একটি বিরাট অংশ এই স্ট্রোকের কারণে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে জীবনের শেষের দিকে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন।
কিন্তু অল্প বয়সী ব্যক্তিদেরও স্ট্রোক হয়। জার্নাল নিউরোলজি বলছে, স্ট্রোকের গড় বয়স গত কয়েক দশকে ৭১ বছর থেকে কমে ৬৯ বছরে যখন ঠেকেছে, তখন তরুণ-যুবাদের মধ্যে (২০ থেকে ৫৪ বছর) এই হার ১৩ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৯ শতাংশ হয়েছে। ৪৫ বছর বয়সের আগে যদি কারও স্ট্রোক হয়, তবে চিকিৎসকেরা তাকে বলেন যুবক বয়সীদের স্ট্রোক। বিশ্বে প্রতি এক লাখ স্ট্রোক-আক্রান্ত ব্যক্তির ১৫ শতাংশের বয়সই এই ৪৫-এর নিচে।
অল্প বয়স্ক ব্যক্তিদের স্ট্রোক হওয়ার কারণ, স্ট্রোকের ধরন ও চিকিৎসায়ও আছে কিছু ফারাক। যেমন:
* জীবনাচরণ পরিবর্তনের কারণে অল্প বয়সে, এমনকি কৈশোর-তারুণ্য থেকে স্থূলতা দেখা দেয়। ওবেসিটি বা স্থূলতা ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। কম বয়সে উচ্চ রক্তচাপ বর্তমানে এক বিরাট সমস্যা। আর অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ স্ট্রোকের অন্যতম প্রধান কারণ। রক্তে চর্বির আধিক্যও অল্প বয়সে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে
* অল্প বয়সে স্ট্রোকের ২৫ শতাংশের কারণ নানা ধরনের হৃদ্রোগ
* জন্মগত ত্রুটি বা রক্তচাপের জন্য মস্তিষ্কের রক্তনালি হঠাৎ ছিঁড়ে যাওয়ার ঘটনা অল্প বয়সেই বেশি ঘটে
* ধূমপান, স্ট্রেস বা মানসিক চাপ, মাইগ্রেন, গর্ভাবস্থা, জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি ইত্যাদি হলো অল্প বয়সে স্ট্রোকের অন্যান্য ঝুঁকি
* যাঁরা নেশাজাতীয় দ্রব্য ব্যবহার করেন, তাঁদেরও স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেক
কম বয়সেই সতর্ক হোন
স্ট্রোক প্রতিরোধে কম বয়স থেকেই সতর্কতা জরুরি। ওজন বেড়ে যাচ্ছে কি না খেয়াল করুন এবং ওজন কমাতে সচেষ্ট হোন। আজকাল অল্প বয়সেই রক্তচাপ ও রক্তে চর্বি বেড়ে যাচ্ছে, তাই নিয়মিত রক্তচাপ মাপুন, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন। রক্তে শর্করা ও চর্বি নিয়মিত পরীক্ষা করুন। তেল-চর্বিযুক্ত খাবার যথাসম্ভব কম খান এবং শাকসবজি, ফলমূল ও আঁশযুক্ত খাবার রাখুন দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায়। অ্যালকোহল, ধূমপান ও যেকোনো ধরনের নেশাদ্রব্য পরিহার করুন। ফিট থাকতে নিয়মিত ব্যায়াম করুন।
ডা. সুদীপ্ত কুমার মুখার্জ
জাতীয় নিউরোসায়েন্স ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল