অণুবীক্ষণ যন্ত্র হলো অণুজীব বিজ্ঞান পরীক্ষাগারের এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্র। এই যন্ত্রের সাহায্যে যে সকল বস্তু খালি চোখে দেখা যায় না তাদের দেখা যায়। এর সাহায্যে কোনো বস্তুকে প্রায় ১০০ থেকে ৪০ লক্ষ গুণ বড় করে দেখা যায়। যে বিষয়ে অণুবীক্ষণযন্ত্রের গঠন ও কার্যপ্রণালি আলোচনা করা হয় তাকে মাইক্রোস্কোপি বলে।
আবিষ্কারক
ব্যবহৃত রশ্মির উপর ভিত্তি করে অণুবীক্ষণযন্ত্রকে দুইভাগে ভাগ করা যায়।
- আলোক অণুবীক্ষণ যন্ত্র: আলোক অণুবীক্ষণযন্ত্রে যেভাবে লেন্স গুলো আলোকরশ্মি ব্যবহার করে বস্তুকে বড়দেখায় তার উপর ভিত্তি করে এই অণুবীক্ষণ যন্ত্র গুলোকে চার ভাগে ভাগ করা যায়ঃ
আলোক অণুবীক্ষণ যন্ত্রে দেখা ব্যাক্টেরিয়ার ছবি
-
- ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্র: এ ক্ষেত্রে আলোক রশ্মির পরিবর্তে ইলেকট্রন বিম ব্যবহার করা হয়। এই পদ্ধতি দুই প্রকার:
(ক) যান্ত্রিক অংশ
পাদদেশ (Base)– যে চেপ্টা অংশের উপর অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সমস্ত দেহটি বসানো থাকে তাকে পাদদেশ বলে।
বাহু (Arm)- পিলারের উপর হেলান স্ক্রু দ্বারা আটকানো উপরের বক্র অংশকে হাতল বা আর্ম বলে। যন্ত্রটিকে স্থানান্তরের সময় আমরা সাধারণত এ অংশটি ধরে থাকি। হাতলের মাথা এবং দেহ নলের মাঝখানে দুটি স্ক্রু আছে। একটিকে বলা হয় ‘স্থুল সন্নিবেশক স্ক্রু’ এবং অন্যটিকে বলা হয় ‘স্থুল সন্নিবেশক স্ক্রু’।
দৈহিক নল (Body tube)– এটি একটি লম্বা নল। হাতলের শেষ অংশে এটি আটকানো থাকে। সন্নিবেশকদ্বয়ের সাহায্যে ঘুরিয়ে দেহ নলকে উপরে নিচে উঠানামা করা হয়।
টানানল (Draw tube)– টানানলটি দেহ নলে বসানো থাকে। প্রয়োজনে উপরে টানা সম্ভব হয়।
নাসিকা ( Nose Piece)– এটি গোলাকার এবং দেহ নলের নিম্নাংশে আটকান থাকে। এতে তিনটি প্যাচকাটা ছিদ্র থাকে যাতে বিভিন্ন বিবর্ধন ক্ষমতাসম্পন্ন অভিলক্ষ (Objective) লাগান হয়।
মঞ্চ ( (Stage)- এটি আয়তাকার এবং গোড়ার দিকে হাতলের সাথে আটকান থাকে। মঞ্চের মাঝখানে একটি ছিদ্র থাকে যার মধ্য দিয়ে আলো এসে পড়ে। মঞ্চের গোড়ার দু’দিকে ক্লিপ থাকে। মঞ্চে স্লাইড রেখে ক্লিপ দিয়ে আটকিয়ে দেয়া হয়। ডায়াফ্রাম ( Diaphragm)- এটি মঞ্চের নিচে অবিস্থত। একে ইচ্ছা মতো সংকুচিত এবং প্রসারিত করে আলোক নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
স্থুল ও সূক্ষ সন্নিবেশক স্ক্রু (Coarse and fine adjustment screws) – হাতলের মাথায় দু’পার্শে¦ যে দুটি বড় স্ক্রু থাকে একে ‘স্থূল সন্নিবেশক স্ক্রু’ বলে। এর সাহায্যে টানা নলকে অতি সহজে উঠানামা করা যায়। স্থূল সন্নিবেশকের ঠিক নিচে একজোড়া স্ক্রু থাকে যার সাহায্যে টানানলকে অতি সূ²ভাবে উঠানামা করানো যায়। তাই একে ‘ সূক্ষ সন্নিবেশক স্ক্রু’ বলে।
(খ) আলোক সম্বন্ধীয় অংশ
অভিনেত্র ( Eye-Piece)- এটি একটি ছোট নল যা বিশেষ টানানলের অভ্যন্তরে ঢুকানো থাকে। এর উপরে ও নিচে একটি করে লেন্স থাকে। এতে চক্ষু রেখে স্লাইডের বস্তু দেখতে হয়।
অভিলক্ষ ( Objectives)– এটিও ছোট নল বিশেষ এবং লেন্স লাগানো থাকে। সাধারণত বিভিন্ন বিবর্ধন ক্ষমতাসম্পন্ন তিনটি অভিলক্ষ নাসিকার তিনটি প্যাচের মধ্যে লাগানো থাকে।
কনডেনসার : এটি দুটি লেন্সের সমষ্টি মাত্র। এটি মঞ্চের ছিদ্রের নিচে আটকান থাকে। দর্পনকে ইচ্ছামাফিক এদিক সেদিক ঘুরিয়ে ডায়াফ্রাম ও কনডেনসারের মধ্য দিয়ে লক্ষ্য বস্তুতে আলো ফেলা হয়।
দর্পণ ( Mirror) : এটি একটি প্লেনো কনকেভ (ঈড়হপধাব) দর্পন। এটি স্তম্ভের গোড়ায় আটকান থাকে। দর্পনকে ইচ্ছা মতো ঘুরিয়ে ডায়াফ্রাম ও কনডেনসারের মধ্য দিয়ে লক্ষ্য বস্তুতে আলো ফেলা হয়।
অণুবীক্ষণ যন্ত্রের অভিলক্ষ এবং অভিনেত্রের গায়ে লিখিত বিবর্ধন ক্ষমতা গুণ করে বস্তুটি আকারে কতগুণ বর্ধিত হলো তা নির্ণয় করা যায়।যেমন- অভিনেত্রের বিবর্ধন ক্ষমতা (Magnification power) 10x এবং অভিলক্ষের বিবর্ধন ক্ষমতা 20x। তা হলে দর্শনীয় বস্তু 20x10 = 200 গুণ বর্ধিত হবে।